মোড়ল গণিত সাহেব

বছরজুড়ে গণিত অলিম্পিয়াডের প্রস্তুতি

তোমরা সবাই আশা করি মোড়ল কি, তা বোঝো। না বুঝলেও সমস্যা নেই। মোড়ল মানে হলো, গ্রামের প্রধান, যার কথায় সবাই ওঠেবসে। আচ্ছা, এটা না হয় বোঝা গেল, কিন্তু গণিত আবার কবে থেকে মোড়ল হলো। আসলে আমরা না চাইলেও গণিত আমাদের হরহামেশা ব্যবহার করতেই হয়, অর্থাৎ গণিতের মোড়লগিরি বিদ্যমান। এ ছাড়া আমরা বুঝি না, কিন্তু আমাদের জীবনের অনেক ঘটনাই আমরা গণিতের সাহায্যে করে থাকি। সাহায্য না নিয়ে থাকলেই বরং সেখানে ক্ষতি হয়! কি, বোঝা যাচ্ছে না কি নিয়ে বলছি? আচ্ছা, তাহলে খোলাসা করেই ফেলা যাক।

একটা উদাহরণ দিই। ধরো, একটা গ্রামে ইটের রাস্তা করা হয়েছে। এতে গ্রামবাসীর অনেক উপকার হয়েছে। কিন্তু এক লোক সেখান থেকে দুটি ইট সরিয়ে নিল। সে ভাবল, ‘মাত্র দুইটা ইটই তো নিলাম। এতে আর এমন কী হবে!’ কিন্তু তার দেখাদেখি ধীরে ধীরে প্রায় সব গ্রামবাসী ভাবল, ‘ও দুইটা ইট নিল। এতে তো আসলেই তেমন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। আমরা তাহলে কেন বসে থাকব, আমরাও এক–দুইটা ইট নেব।’ যেমন ভাবা তেমন কাজ। কিন্তু ওই দিকে ইট নিতে নিতে পুরো রাস্তাই নাই হয়ে গেছে। ফলে গ্রামবাসীকে আবার খারাপ রাস্তা দিয়ে যেতে হলো। আর এক–দুইটা ইট দিয়ে কেউই তেমন উপকার পেল না।

এখন যদি বলি, এ ঘটনা ঘটার আগে সব গ্রামবাসী গণিতের একটা বিশেষ শাখা সম্পর্কে অবগত থাকত, তাহলে তাদের এই দিন দেখতে হতো না। আসলেই তা–ই! গেম থিওরি নামের গণিতের এ শাখা মানবজীবনের প্রায় সব ঘটনার ওপরই মোড়লগিরি করতে পারে, অর্থাৎ হিসাব করে বের করা যায়, কী করলে বেশি লাভ হবে। আর এ উদাহরণে ওই তত্ত্বের ন্যাশ ভারসাম্য (Nash Equilibrium) ব্যবহৃত হয়েছে, যা বলে কোনো ঘটনার এমন একটা পদ্ধতি আছে, যেভাবে করলে নিজের সর্বোচ্চ লাভ না হলেও সম্মিলিতভাবে সর্বোচ্চ লাভ হবে। অনেকটা নিজের স্বার্থ সরিয়ে বৃহৎ স্বার্থের জন্য ভাবা। এ যেন একেবারে বর্তমান সময়ের উপযুক্ত তত্ত্ব!

আরও পড়ুন

আচ্ছা  অনেক তো হলো কথাবার্তা, এখন একটু অঙ্কের মধ্যে আসি। আমরা এবার একটা ঘটনা গাণিতিকভাবে ন্যাশ ভারসাম্য দিয়ে বিশ্লেষণ করব। এই নীতির প্রধান কথা হলো, কোনো ঘটনার এমন একটা ফল পাওয়া সম্ভব, যেখানে একজন এককভাবে নিজের অবস্থান পরিবর্তন করে লাভবান হতে পারবে না; বরং তখন অপরজন নিজের লাভের জন্য অবস্থান পরিবর্তন করবে, যার ফলে সেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে কেউই নিজের অবস্থার পরিবর্তন করতে পারবে না। অনেকটা সাম্যাবস্থায় থাকার মতো। 

আরও পড়ুন

ধরি, এক পুলিশ দুজন চোরকে ধরেছে। তারা দুটি ভিন্ন জায়গায় চুরি করেছে। এখন এ জন্য তাদের উভয়েরই ২ বছর করে জেল হবে। কিন্তু হঠাৎ পুলিশ খেয়াল করল, এ দুজন কয়েক মাস আগেই একটা বড়সড় ডাকাতির সঙ্গে যুক্ত ছিল, যদিও তারা অস্বীকার করল। তা পুলিশ খুব ভেবেচিন্তে উভয়কে একটা প্রস্তাব দিল (তাদের পরস্পরের মধ্যে যোগাযোগের কোনো পদ্ধতি নেই)। তা হলো, উভয় যদি অপরাধ স্বীকার করে, তাহলে তাদের ৫ বছর করে জেল হবে। কিন্তু যদি একজন স্বীকার করল আর অপরজন করল না, তাহলে তার ১ বছর এবং অপরজনের ৮ বছর জেল হবে। তাহলে, উভয়ের কী করা উচিত? মনে হতে পারে, তাদের কেউই স্বীকার করল না আর ২ বছর করে জেল হলো, এটাই সেরা সমাধান।

কিন্তু…এটা স্থিতিশীল নয়; কারণ, এতে অপর পক্ষ অবস্থান পরিবর্তন করে অধিক লাভজনক হতে পারে। কারণ, তখন অপর পক্ষ স্বীকারোক্তি দিয়ে নিজের সাজা ১ বছর কমিয়ে ফেলতে পারে। তবে তখন যার ৮ বছর হবে, সেও নিশ্চয় বসে থাকবে না। সে-ও তখন স্বীকারোক্তি দিয়ে নিজের সাজার মেয়াদ কমাতে চাইবে। তাদের মধ্যে যোগাযোগ না হওয়ায় কেউ বুঝতে পারবে না, কেউ ধোঁকা দেবে নাকি। এ জন্য উভয়ের সেরা সমাধান হবে স্বীকারোক্তি দেওয়া!

আগেই বলেছিলাম, এটি খুব মানবতাবাদী অঙ্কের পদ্ধতি। এসব অঙ্ক প্রধানত পেঅফ ম্যাট্রিক্স (Payoff Matrix) নামের এক বিশেষ ম্যাটিক্স দিয়ে সহজে করা যায়, কিন্তু এই ছোট জায়গায় এবার তা ধরানো গেল না। পরেরবার নিশ্চয় ওইটা দিয়ে আরও জটিল অঙ্ক করা হবে।

আরও পড়ুন