বাংলা ১ম পত্রে ‘পরিমিত ও সুনির্দিষ্ট উত্তর’ লিখলেই বেশি নম্বর: এইচএসসি পরীক্ষা ২০২৪

এইচএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি: বাংলা ১ম পত্র (পর্ব ১)

প্রিয় পরীক্ষার্থী, ২০২৪ সালের পুনর্বিন্যস্ত সংক্ষিপ্ত সিলেবাসেই এ বছরের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

বাংলা ১ম পত্রে নির্ধারিত ৭টি গদ্য (অপরিচিতা, বিলাসী, আমার পথ, মানব-কল্যাণ, মাসি-পিসি, বায়ান্নর দিনগুলো, রেইনকোট), ৭টি কবিতা (সোনার তরী, বিদ্রোহী, প্রতিদান, তাহারেই পড়ে মনে, আঠারো বছর বয়স, ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯, আমি কিংবদন্তির কথা বলছি), ১টি উপন্যাস (লালসালু) এবং ১টি নাটক (সিরাজউদ্দৌলা) থেকে ৭০ নম্বরের সৃজনশীল এবং ৩০ নম্বরের বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তর করতে হবে।

বাস্তবতা হলো, একটি প্রশ্নের উত্তর লেখার জন্য তুমি আসলে কোনোভাবেই ১৭-১৮ মিনিটের বেশি সময় পাবে না।

বহুনির্বাচনি অংশ

বহুনির্বাচনি অংশে নির্ধারিত ৭টি গদ্য (অপরিচিতা, বিলাসী, আমার পথ, মানব-কল্যাণ, মাসি-পিসি, বায়ান্নর দিনগুলো, রেইনকোট) থেকে চার দক্ষতার (জ্ঞানমূলক, অনুধাবনমূলক, প্রয়োগমূলক ও উচ্চতর দক্ষতামূলক) ১২টি বহুনির্বাচনি প্রশ্ন, নির্ধারিত ৭টি কবিতা (সোনার তরী, বিদ্রোহী, প্রতিদান, তাহারেই পড়ে মনে, আঠারো বছর বয়স, ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯, আমি কিংবদন্তির কথা বলছি) থেকে চার দক্ষতার ১২টি বহুনির্বাচনি প্রশ্ন, উপন্যাস (লালসালু) থেকে ৩টি এবং নাটক (সিরাজউদ্দৌলা) থেকে ৩টি করে মোট ৩০টি বহুনির্বাচনি প্রশ্ন থাকবে।

∎ জরুরি তথ্য

পরীক্ষার শুরুতেই ৩০ মিনিটে ৩০টি বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তর OMR শিটে বৃত্ত ভরাট করে দিতে হবে। OMR শিটে প্রশ্নের সেট কোড লিখতে কোনোভাবেই ভুল করা যাবে না।

সৃজনশীল প্রশ্ন

∎ কোথা থেকে কয়টি প্রশ্নের উত্তর করতে হবে

‘ক’ বিভাগে (গদ্য) ৪টি সৃজনশীল প্রশ্ন থেকে কমপক্ষে ২টি, ‘খ’ বিভাগ (কবিতা) ৩টি থেকে কমপক্ষে ২টি, ‘গ’ বিভাগ (সহপাঠ) উপন্যাস ২টি থেকে কমপক্ষে ১টি এবং নাটক ২টি থেকে কমপক্ষে ১টি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অবশ্যই করতে হবে। এ ছাড়া অন্য আরেকটি প্রশ্নের উত্তর তোমার ইচ্ছে মতো যেকোনো বিভাগ থেকে করতে পারবে।

∎ সময় বণ্টন দেখে নাও

১১টি সৃজনশীল প্রশ্ন থেকে মোট ৭টি প্রশ্নের উত্তর করতে হবে । তার জন্য সময় পাবে ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট। অর্থাৎ প্রতিটি প্রশ্নের জন্য বরাদ্দ ২১.৪২ মিনিট। এর মধ্যে ১১টি উদ্দীপক পড়তে হবে, ভাবতে হবে, কল্পনা করতে হবে, পাঠ্যবইয়ের সঙ্গে মেলাতে হবে। তারপর তুমি উত্তর লেখা শুরু করতে পারবে ।

∎ আসল বাস্তবতাটি জেনে নাও

বাস্তবতা হলো, একটি প্রশ্নের উত্তর লেখার জন্য তুমি আসলে কোনোভাবেই ১৭-১৮ মিনিটের বেশি সময় পাবে না।

কাজেই সুনির্দিষ্ট ও পরিমিত উত্তর লেখা ছাড়া কোনোভাবেই অতিরিক্ত কিছু লেখা সম্ভব নয়।

এত কম সময়ের মধ্যে কীভাবে ৭টি প্রশ্নের উত্তর লিখবে? এটাই কিন্তু তোমাদের সবার জিজ্ঞাসা?

এখন আমরা এর সমাধান একটি সৃজনশীল প্রশ্ন ও তার নমুনা উত্তরের মাধ্যমে দেব

মনে করো, ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতা থেকে একটি প্রশ্নের উদ্দীপক—

১। মাগফার আহমেদ চৌধুরী আজাদ; করাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর পাস করা স্বাধীনচেতা, দুরন্ত, টগবগে এক তরুণ। ১৯৭১ সালে পুরো দেশ উত্তাল। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গ্রামগঞ্জ, শহর-বন্দর, হাটবাজার জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দিচ্ছে। নৃশংসভাবে হত্যা করছে নিরস্ত্র-নিরপরাধ মানুষকে। এমন সময় আজাদ যোগ দিলেন ক্রাক প্লাটুনে। সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন উড়িয়ে দেওয়াসহ বেশ কিছু অভিযানে সফল হলেন। কিন্তু ৩০ আগস্ট ধরা পড়লেন পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে। সহযোদ্ধাদের তথ্য নেওয়ার জন্য তাঁর ওপর চালানো হলো অমানবিক অত্যাচার-নির্যাতন; কিন্তু মুখ খুললেন না আজাদ, সবকিছু সহ্য করলেন দাঁতে দাঁত কামড়ে। তাঁর মা সাফিয়া বেগম রমনা থানায় তার সঙ্গে দেখা করতে এলে ভাত খেতে চেয়েছিলেন আজাদ। কিন্তু পরের দিন সাফিয়া খাতুন ভাত নিয়ে গেলে ছেলেকে আর খুঁজে পাননি। ছেলেকে ভাত খাওয়াতে না পারার কষ্টে আজাদের মা সারা জীবন আর ভাত খাননি।

∎ প্রশ্ন যেমন হয়

ক. ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতাটি কোন ছন্দে রচিত? ১

খ. ‘তাজা তাজা প্রাণে অসহ্য যন্ত্রণা’- বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন? ২

গ. উদ্দীপকের আজাদের মধ্যে ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার তারুণ্যের যে বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে তা ব্যাখ্যা করো। ৩

ঘ. উক্ত বৈশিষ্ট্যই ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার একমাত্র দিক নয়—মন্তব্যটির সত্যতা যাচাই করো। ৪

বিশেষ পদ্ধতি ও লেখার কৌশল

প্রিয় পরীক্ষার্থী, তোমরা মনে রেখো সৃজনশীল প্রশ্ন যেহেতু একটি বিশেষ ধরনের পরীক্ষাপদ্ধতি, তাই এর উত্তর লেখার কৌশলও বিশেষ ধরনের হতে হবে। যেখানে অপ্রাসঙ্গিক তথ্য বা অপ্রাসঙ্গিক কিছু লিখে বাহুল্য দোষ ঘটানোর কোনো সুযোগ নেই। বরং প্রশ্নের উত্তর হবে সুনির্দিষ্ট, পরিমিত ও প্রাসঙ্গিক। যেমন আলোচ্য উদ্দীপকের আলোকে প্রশ্নের ‘ক’, ‘খ’, ‘গ’, ‘ঘ’ এই চারটি অংশের সঠিক উত্তর কীভাবে লিখবে তা নিচের আলোচনা থেকে দেখে নাও।

ক. জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ছিল—

‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতাটি কোন ছন্দে রচিত?

তার উত্তরে তোমরা হয়তো লিখবে—‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতাটি মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত। কিন্তু এ উত্তর আমরা ‘মাত্রাবৃত্ত’ এই একটিমাত্র শব্দেও দিতে পারি। একটি পূর্ণ বাক্য লেখার দরকার নেই। তাহলে এই প্রশ্নের উত্তরে আমরা প্রায় ৫টি শব্দ লেখার সময় বাঁচাতে পারি। এভাবে ৭টি সৃজনশীলের জ্ঞানমূলক প্রশ্নের উত্তরে অনেকগুলো শব্দ লেখার সময় বাঁচানো যায়। পূর্ণ বাক্য না লিখলেও তুমি এখানে পূর্ণ ১ নম্বরই পাবে। তবে এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, জ্ঞানমূলক প্রশ্নে যে তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে, সেটার বানান ভুল করলে উত্তর কাটা যাবে এবং ‘শূন্য’ পাবে।

∎ খ. অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ছিল—

‘তাজা তাজা প্রাণে অসহ্য যন্ত্রণা’—বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন? এর মধ্যে ১ টি নম্বর জ্ঞানের জন্য আরেকটি নম্বর অনুধাবনের জন্য। তাই আমরা জ্ঞান অংশের জন্য লিখতে পারি—‘তাজা তাজা প্রাণে অসহ্য যন্ত্রণা’ বলতে চারপাশের নানা অন্যায়-অত্যাচার, শোষণ-বঞ্চনা, উত্পীড়ন-নিপীড়ন, সামাজিক অনাচার-বৈষম্য ইত্যাদি দেখে সংবেদনশীল তাজা প্রাণে অসহ্য যন্ত্রণা অনুভূত হওয়াকে বোঝানো হয়েছে।

এরপর অনুধাবন অংশে ব্যাখ্যা করব যে সুযোগ্য নেতৃত্বের অভাব, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ইত্যাদি কারণে কোনো দেশে দুঃশাসন চলতে থাকলে ক্রমেই সেখানে অন্যায়, অত্যাচার, শোষণ, বঞ্চনা ও বৈষম্য দেখা দেয়। ফলে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। আর এই অভিঘাত এসে লাগে তরুণের তাজা প্রাণে। যেহেতু আঠারো বছর বয়সে তরুণ-তরুণীরা অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও সংবেদনশীল হয়ে থাকেন, তাই মানুষে মানুষে ভেদাভেদ, বৈষম্য, শোষণ ও বঞ্চনা তরুণদের মর্মাহত করে। তাঁরা কোনোভাবেই সেসব নেতিবাচকতা মানতে পারেন না। তাই এর প্রতিবাদে তাঁদের তাজা প্রাণে যন্ত্রণা অনুভূত হয়।

# তুমি ইচ্ছে করলে জ্ঞানমূলক অংশের উত্তর আগে অনুধাবনমূলক উত্তর পরে অথবা অনুধাবনমূলকের উত্তর আগে জ্ঞানমূলকের উত্তর পরে লিখতে পার।

∎ উত্তরে ধারাবাহিকতা রাখা ভালো

# জ্ঞানমূলকের উত্তর আগে লিখে অনুধাবনের উত্তর পরে লেখাই সবচেয়ে ভালো। অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তর এক প্যারাতে লেখা যায়, আবার দুই প্যারাতেও লেখা যায়। তবে দুই প্যারাতে লেখার চেষ্টা করবে। আর অনুধাবনমূলক প্রশ্নের শুরুতে অযথা কবি/সাহিত্যিককে নানা বিশেষণে বিশেষায়িত করার দরকার নেই।

# মনে রাখতে হবে, সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর হবে ‘জিরো ফ্যাট’, অর্থাৎ চর্বিশূন্য। শুধু অনুধাবনে নয়, কোনোক্রমে কোনো প্রশ্নের উত্তরে অপ্রাসঙ্গিক কথা, অপ্রয়োজনীয় তথ্য বা বাহুল্য দোষ করা যাবে না। এ জন্য ‘খ’ অংশ, অর্থাৎ অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে বোর্ড বলছে—সর্বোচ্চ ৫ টি বাক্যে উত্তর লেখা যেতে পারে।

মোহাম্মদ হুমায়ূন কবীর, প্রভাষক, মাস্টার ট্রেইনার, সেন্ট যোসেফ উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়, ঢাকা