অধ্যায় ৩
A: ভূমি, বনভূমি, খনিজ সম্পদ, নদ–নদী।
B: শারীরিক যোগ্যতা, প্রতিভা, উদ্যোগ, দক্ষতা, সাংগঠনিক ক্ষমতা।
প্রশ্ন
ক. বিনিয়োগ কী?
খ. মূলধনি দ্রব্য বলতে কী বোঝায়?
গ. ‘B’ তালিকার বিষয়গুলো অর্থনীতিতে কোন ধরনের সম্পদ? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি কি ‘A’ ও ‘B’ সম্পদগুলোর ওপর নির্ভরশীল? আলোচনা করো।
উত্তর
ক. সঞ্চিত অর্থ যখন উৎপাদন বাড়ানোর কাজে ব্যবহৃত হয়, তখন তাকে বিনিয়োগ বলে।
খ. যেসব উৎপাদিত দ্রব্য উৎপাদনে সাহায্য করে তাকে মূলধনি দ্রব্য বলে। যেমন যন্ত্রপাতি, কারখানা, গুদামঘর ইত্যাদি।
মূলধনি দ্রব্য বারবার উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত হয়। যেমন: মাছ ধরার ট্রলার উৎপাদন কাজে শুধু একবার ব্যবহৃত না হয়ে বারবার ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ উৎপাদিত দ্রব্য নতুন দ্রব্য উৎপাদনে সাহায্য করে। এ জন্যই একে মূলধনি দ্রব্য বলা হয়।
গ. উদ্দীপকের ‘B’ তালিকার বিষয়গুলো অর্থনীতিতে মানবিক সম্পদকে নির্দেশ করে।
মানুষের বিভিন্ন প্রকার যোগ্যতা ও দক্ষতাকে মানবিক সম্পদ বলে। যেমন: প্রতিভা, উদ্যোগ, দক্ষতা ইত্যাদি মানবিক সম্পদ। তবে অর্থনীতির দৃষ্টিকোণ থেকে এগুলোকে সম্পদ বলা যায় না। কারণ, এ গুণগুলোতে সম্পদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হস্তান্তরযোগ্য ও বাহ্যিকতা নেই।
উদ্দীপকের ‘B’ তালিকার বিষয়গুলো হলো শারীরিক যোগ্যতা, প্রতিভা, উদ্যোগ, দক্ষতা ও সাংগঠনিক ক্ষমতা। অর্থনীতিতে কোনো দ্রব্য বা সেবাকে সম্পদ হতে হলে সেগুলোর চারটি বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে। এগুলো হচ্ছে: উপযোগ, অপ্রাচুর্যতা, হস্তান্তরযোগ্যতা ও বাহ্যিকতা। সম্পদের বৈশিষ্ট্যের দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায়, মানবিক সম্পদ অর্থনীতিতে সম্পদ নয়, কারণ এর হস্তান্তরযোগ্যতা ও বাহ্যিকতা নেই। হস্তান্তরযোগ্যতা বলতে দ্রব্য বা সেবার মালিকানা বদলের যোগ্যতাকে বোঝায়। আর বাহ্যিকতা হচ্ছে দ্রব্য বা সেবার বাহ্যিক অস্তিত্ব উপলব্ধি করার গুণ। যেমন কোনো ব্যক্তি গান গাইতে পারে, এটি তার প্রতিভা। আবার কেউ যন্ত্রপাতি মেরামত করতে পারে, যা তার বিশেষ দক্ষতা। কিন্তু গান গাওয়ার গুণ বা যন্ত্র মেরামতের দক্ষতার মতো বিষয়গুলো হস্তান্তর করা যায় না। এগুলোর বাহ্যিক অস্তিত্বও নেই। তাই উদ্দীপকের ‘B’ তালিকার বিষয়গুলো মানবিক সম্পদের অন্তর্ভুক্ত হলেও অর্থনৈতিক দৃষ্টিতে এগুলোকে সম্পদ বলা যাবে না।
ঘ. হ্যাঁ, দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি ‘A’ ও ‘B’ তালিকার সম্পদগুলোর ওপর নির্ভরশীল।
উদ্দীপকের ‘A’–তে ভূমি, বনভূমি, খনিজ সম্পদ, নদ–নদী ইত্যাদি প্রাকৃতিক সম্পদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এগুলোর ভূমিকা অপরিসীম।
ভূমি উৎপাদনের আদি ও মৌলিক উপাদান। ভূমি ব্যবহার করে ধান, গম, পাট, চা ইত্যাদি ফসল উৎপাদনের পাশাপাশি শিল্প স্থাপন করা যায়। বনভূমি থেকে আসবাব ও জ্বালানির জন্য বিভিন্নমানের কাঠ পাওয়া যায়। এ ছাড়া তেল, গ্যাস, কয়লা, লোহা ইত্যাদি খনিজ সম্পদ দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সাধারণত যে দেশে যত বেশি খনিজ সম্পদ থাকে, সে দেশ অর্থনৈতিকভাবে তত উন্নত হয়। দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি প্রাকৃতিক সম্পদ হচ্ছে নদ–নদী। পরিবহন ও মৎস্য সম্পদের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে নদী। এ ছাড়া খরস্রোতা নদীর স্রোত কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যেতে পারে। এসব কার্যক্রম দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখে।
মুহাম্মদ শামীম, শিক্ষক, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ, ঢাকা