ফিচারস্‌ অব ডিভাইজর (পর্ব ৪) | গণিত ইশকুল

বছরজুড়ে গণিত অলিম্পিয়াডের প্রস্তুতি

আজকে আমরা 7 দিয়ে বিভাজ্যতা আলোচনা করবো।

আমি যতদূর জানি, 7 এর বিভাজ্যতা হিসাব করার তিনটা নিয়ম গণিতে প্রচলিত আছে, সবগুলোই বলবো এই পর্বে।

7 দিয়ে বিভাজ্যতার এই নিয়মগুলো হলো একেকটা প্যাটার্ন। আর এই তিনরকম নিয়মেই সংখ্যার অঙ্কগুলো নিয়ে একটা কারসাজি করে বের করা হয় আদৌ 7 দিয়ে বিভাজ্য কিনা!

(ক)

যেকোনো সংখ্যা ‘abcdef’ অবশ্যই 7 দিয়ে বিভাজ্য হবে, যদি ও কেবল যদি x=def-abc হলে, এই সংখ্যাটি 7 এর গুণিতক হয়।
তবে এই নিয়মটি শান্তিতে ব্যবহার করতে পারবা যদি তোমার সংখ্যায় অঙ্ক বা ডিজিটের পরিমাণ 3 এর গুণিতক হয়।

কিন্তু যদি abcd কিংবা abcde থাকে? তাহলে তুমি সংখ্যার সামনে প্রয়োজনমতো শূন্য নিতে পারো। অর্থাৎ ‘abcd’ কে লিখতে পারো ‘00abcd’; তবে আবার বেশি বুদ্ধি করে ‘abcd00’ দিও না যেন, তাহলে বিপদ হতে পারে! (কেমন বিপদ আর কেনই বা বিপদ হবে সেটা ভেবে দেখো নিজেই।)

যেমন: ‘396355764’ সংখ্যাটি কি 7 দিয়ে বিভাজ্য? তো প্রথমে 3টা করে অঙ্ক নিয়ে গ্রুপে ভাগ করি। অবশ্যই ক্রম অনুসরণ করে মানে ডান থেকে বাম দিকে গ্রুপে ভাগ করবে। সংখ্যাটি থেকে বলা যায়, 396 | 355 | 764;

অর্থাৎ abcdefghi হলে তিনটা ভাগ হবে ghi, def, abc; সর্বডানের ত্রয়ী ghi কে ধনাত্মক ধরে বাকি ত্রয়ীগুলোকে ক্রমানুসারে একবার বিয়োগ, একবার যোগ করতে হবে।
অর্থাৎ ghi-def+abc এ সাংখ্যিক মান বসালে আসবে 764-355+396=805, যাকে 7 দিয়ে ভাগ করলে ভাগফল আসে 115 এবং ভাগশেষ 0। যেহেতু নতুন পাওয়া সংখ্যাটি 7 দিয়ে নিঃশেষে বিভাজ্য, তাই মূল সংখ্যাটিও 7 দিয়ে নিঃশেষে বিভাজ্য হবে।

(খ)

বিভাজ্যতার দ্বিতীয় নিয়ম হলো সব থেকে সহজ আর ছোট্ট! কোনো সংখ্যা ‘abcd’ তখনই 7 দিয়ে বিভাজ্য হবে, যদি (abc-2d) সংখ্যাটি 7 দিয়ে বিভাজ্য হয়। অর্থাৎ মূল সংখ্যাটি 2 ভাগে ভাগ করো। প্রথম ভাগে থাকবে মূল সংখ্যার শুধু একক স্থানীয় অঙ্কটা, আর দ্বিতীয় অংশে থাকবে শেষ অঙ্ক বাদ দেওয়ার পরে পাওয়া নতুন সংখ্যাটা।

এবার দ্বিতীয় অংশ থেকে প্রথম অংশের সংখ্যাটির দ্বিগুণ বিয়োগ করো। নতুন পাওয়া সংখ্যাটি 7 দিয়ে নিঃশেষে বিভাজ্য হলে মূল সংখ্যাটাও অবশ্যই বিভাজ্য! সহজ না? এবার যদি (abc-2d) সংখ্যাটাও বিশাল বড় হয়? বারবার এই কাজ করতে থাকতে হবে।

উদাহরণ: 23482 সংখ্যাটি কি 7 দিয়ে নিঃশেষে বিভাজ্য?

সমাধান:

∎ 23482 থেকে, 2348-(2×2)=2348-4=2344

∎ 2344 থেকে, 234-(2×4)=234-8=226

∎ 226 থেকে, 22-(2×6)=22-12=10

তিনবার প্রক্রিয়াটি চালানোর পরে আমাদের ফলাফল এল 10, যেটা 7 দিয়ে বিভাজ্য না, তাহলে বলা যায় মূল সংখ্যাটি অর্থাৎ 23482 সংখ্যাটিও 7 দিয়ে নিঃশেষে বিভাজ্য হবে না।

(গ)

যেমনটা বলেছিলাম, তৃতীয় নিয়মটাও সংখ্যার অঙ্কগুলো নিয়েই প্রতিষ্ঠিত।

আমরা জানি, ‘যেকোনো সংখ্যার শেষে 0 থাকলে, সেই 0 বাদ দিয়ে পাওয়া নতুন সংখ্যাটি n দিয়ে বিভাজ্য হলে মূল সংখ্যাটিও n দিয়ে বিভাজ্য!’ এখন সেটা ব্যবহার করে এবার আর a, b, c, d দিয়ে নয়, সরাসরি কোনো একটা সংখ্যা নিয়ে কাজ করব।

তাহলে এবার এই নিয়ম অনুসারে 38248 সংখ্যাটা 7 দিয়ে বিভাজ্য কিনা সেটা কীভাবে বের করতে হয় জেনে নিই।

∎ 38248 এর শেষ অঙ্ককে 0 করার জন্য এর থেকে 7 এর আরেকটা গুণিতক 28 বিয়োগ করি। (কিন্তু 28-ই কেন?) যদি 38248 সংখ্যাটি 7 এর কোনো গুণিতক হয়, তাহলে অবশ্যই 38248-28=38220 সংখ্যাটিও বিভাজ্য হবে।

∎ প্রাপ্ত সংখ্যা 38220 এর শেষে 0 আছে। এবার কাজ হবে 0 বাদে সংখ্যাটি অর্থাৎ 3822 নিয়ে। কারণ, 38220=10×3822=2×5×3822; এখানে 5 কিংবা 2 কোনোটাই 7 এর গুণিতক অথবা 7 দ্বারা বিভাজ্য নয় তাই 3822 যদি বিভাজ্য না হয়, 38220 সংখ্যাটিও হবে না। একইভাবে (3822+28)=3850 করে নাও। কারণ একই।

আগেরবারে 28 বিয়োগ করলাম বলে এবার 28 যোগ করছি, এমন না কিন্তু, শেষের অঙ্কটা 0 করার জন্য তুমি 7 এর যেকোনো গুণিতক যোগ বা বিয়োগ দুইরকম কাজই করতে পারো।

∎ তৃতীয় ধাপে আছে 3850 সংখ্যাটি। এটার শেষের 0 বাদ দিয়ে আমরা কাজ করব 385 নিয়ে। তো, আগের দুইবারের মতো এবারও (385-35)=350 করো। এবার কিন্তু 35 বিয়োগ করেছি। এবার পেলাম 350। এই সংখ্যাটির শেষের 0 বাদ দিয়ে প্রাপ্ত সংখ্যাটি নিয়ে হিসাব করো। এখন 35 সংখ্যাটি 7 দিয়ে বিভাজ্য। তাহলে 350 ও 7 দিয়ে বিভাজ্য হবে; একইভাবে আমরা পাই,

(350+35)=385; (385×10)=3850; (3850-28)=3822; (3822×10)=38220; (38220+28)=38248।
তাহলে, বুঝতেই পারছো 38248 সংখ্যাটিও 7 দিয়ে বিভাজ্য হবে!

আজকে এইটুকুই। তবে কেন এই তিনটা নিয়ম কাজ করে সেটার প্রমাণ কিন্তু এখনো অজানা তোমাদের কাছে। আমি বলব না বরং তোমরা নিজেরাই খুঁজে বের করো কেন এর উত্তর।

এমনকি এই তিনটার বাইরে আরও কোনো উপায়ও হয়তো তোমরা চিন্তা করলে বের করতে পারবে। আর সেটাই আসল মজা।

আরও পড়ুন