প্রতিটি সৃজনশীল উত্তর লেখার সময় পাবে ২১ মিনিট

এসএসসি পরীক্ষা ২০২৩ - বিশেষ পরামর্শ

বিষয়: বাংলা ১ম পত্র

প্রিয় পরীক্ষার্থী, তোমাদের এসএসসি পরীক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে। নতুন করে বাংলা প্রথম পত্রের সৃজনশীল পদ্ধতি সম্বন্ধে একটু বলতে চাই।

বাংলা প্রথম পত্রের প্রশ্নপত্র চারটি বিভাগে বিভক্ত থাকবে। ‘ক’ বিভাগে (গদ্য) ৪টি সৃজনশীল প্রশ্ন থাকবে, ‘খ’ বিভাগে (কবিতা) ৩টি সৃজনশীল প্রশ্ন থাকবে, ‘গ’ বিভাগে (সহপাঠ-উপন্যাস) ২টি সৃজনশীল প্রশ্ন থাকবে এবং ‘ঘ’ বিভাগে (সহপাঠ-নাটক) ২টি সৃজনশীল প্রশ্ন থাকবে। তোমাদের ‘ক’ বিভাগ থেকে কমপক্ষে ২টি, ‘খ’ বিভাগ থেকে কমপক্ষে ২টি, ‘গ’ বিভাগ থেকে কমপক্ষে ১টি এবং ‘ঘ’ বিভাগ থেকে কমপক্ষে ১টিসহ মোট ৭টি প্রশ্নের উত্তর লিখতে হবে। মান ৭০। সময় ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট। বহুনির্বাচনিতে ৩০ নম্বর।

∎ সৃজনশীল পদ্ধতিতে যেহেতু ৪টি অংশ (জ্ঞান, অনুধাবন, প্রয়োগ ও উচ্চতর দক্ষতা) মিলে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রশ্ন, তাই প্রত্যেক অংশের উত্তর লেখার সময় প্রতিবার নম্বরটা এভাবে লিখবে। যেমন : তুমি ৩ নম্বর প্রশ্নটা উত্তর করবে। সে ক্ষেত্রে ৩ নং প্রশ্নের উত্তর (ক), ৩ নং প্রশ্নের উত্তর (খ), ৩ নং প্রশ্নের উত্তর (গ), ৩ নং প্রশ্নের উত্তর (ঘ) এভাবে লিখলে ভালো। আর এ লেখাগুলো ভিন্ন রঙের (সবুজ/নীল/মেরুন/বাদামি ইত্যাদি) কালি দিয়ে লিখলে দেখতে অনেক সুন্দর লাগবে

যেকোনো একটি প্রশ্নের উত্তর লেখা শুরু করলে তার ৪টি অংশের উত্তরই ধারাবাহিকভাবে শেষ করতে হবে। একটি প্রশ্নের জ্ঞানের উত্তর আরেক প্রশ্নের প্রয়োগের উত্তর এভাবে করা যাবে না। কোনো উত্তর যদি কেউ না পারে সে ক্ষেত্রে সেটা বাদ দিয়ে তার পরের অংশের উত্তর করতে হবে। 

একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো—কোনোক্রমেই একটি প্রশ্নের পূর্ণাঙ্গ উত্তরে ২১ মিনিটের বেশি সময় নেওয়া যাবে না। এর চেয়ে বেশি সময় দিলে তুমি বাকি প্রশ্নের উত্তর শেষ করতে পারবে না। 

জ্ঞানমূলক প্রশ্নের নম্বর ১। এর উত্তর একটি শব্দে, একাধিক বা একটি বাক্যেও দেওয়া যাবে। তবে এ স্তরের উত্তর একটি পূর্ণাঙ্গ বাক্যে দিলে ভালো। আর এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে জ্ঞানমূলক প্রশ্নে যে তথ্যটি জানতে চাওয়া হয়েছে, সেটির বানান ভুল করলে উত্তর কাটা যাবে এবং শূন্য পাবে। যেমন ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার রচয়িতা কে? এখানে ‘মাইকেল মধুসূদন দত্ত’-এর নামের বানানটি ভুল করলে উত্তর কাটা যাবে। 

অনুধাবনমূলক প্রশ্নের নম্বর ২। কারণ, এর মধ্যে একটি নম্বর জ্ঞানের জন্য আরেকটি নম্বর অনুধাবনের জন্য। তুমি ইচ্ছা করলে জ্ঞান অংশের উত্তর আগে অনুধাবনমূলক উত্তর পরে অথবা অনুধাবনমূলকের উত্তর আগে জ্ঞানমূলকের উত্তর পরে লিখতে পারো। তবে জ্ঞানমূলকের উত্তর আগে লিখে অনুধাবনের উত্তর পরে লেখাই ভালো। অনুধাবনের প্রশ্নের উত্তর এক প্যারাতেও লেখা যায়। তবে দুই প্যারাতে লেখার চেষ্টা করবে। অনুধাবনমূলক প্রশ্নের শুরুতে অযথা লেখককে নানা বিশেষণে বিশেষায়িত করবে না। 

প্রয়োগমূলক প্রশ্নের মোট নম্বর-৩। ১ নম্বর জ্ঞানে, ১ নম্বর অনুধাবনে এবং ১ নম্বর প্রয়োগে। যদিও এক প্যারাতে সব কটি তথ্য দিয়ে উত্তর লিখলেও হবে। তবে দুই–তিন প্যারা করাই ভালো। প্রয়োগ মানে আমরা জানি, শিক্ষার্থী তার পাঠ্যবই থেকে যা জেনেছে এবং যা বুঝেছে, তা নতুন ক্ষেত্রে অর্থাৎ উদ্দীপকে প্রয়োগ করবে। কাজেই উদ্দীপকটি যে ভাব/Theme –এর আলোকে তৈরি করা হয়েছে এবং উদ্দীপকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গল্প/কবিতার যে দিকটির সাদৃশ্য/বৈসাদৃশ্য থাকে সেটিই জ্ঞান। তারপর ওই দিকটি/প্রসঙ্গটি পাঠ্যবইয়ের আলোকে বর্ণনা করাই হলো অনুধাবন। দ্বিতীয় প্যারায় অনুধাবন অংশের উত্তর লিখতে পারা এবং সবশেষে ওই দিকটি উদ্দীপকে কীভাবে ফুটে উঠেছে, তা বর্ণনা করাই প্রয়োগ।

উচ্চতর দক্ষতামূলক প্রশ্নের মোট নম্বর ৪। ১ নম্বর জ্ঞানে, ১ নম্বর অনুধাবনে, ১ নম্বর প্রয়োগে এবং ১ নম্বর উচ্চতর দক্ষতায়। উচ্চতর দক্ষতা মানেই একটা সিদ্ধান্তের ব্যাপার। প্রশ্নেই সাধারণত একটা অনুসিদ্ধান্ত দেওয়া থাকবে। যদি সিদ্ধান্তটি সঠিক হয় তাহলে সেটাকেই ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে, উদ্দীপকে প্রয়োগ করে প্রমাণ করবে যে সিদ্ধান্তটি সঠিক। আর যদি সিদ্ধান্তটি ভুল হয় তাহলে কেন ভুল সেটাও প্রমাণ করতে হবে। অনেক সময় সিদ্ধান্তটি আংশিক সত্য হতে পারে। সে ক্ষেত্রে উদ্দীপকের সঙ্গে পাঠ্যবইয়ের যে অংশটুকুর মিল আছে, তা বর্ণনা করে যে যে ক্ষেত্রে মিল নেই সেগুলোও বর্ণনা করতে হবে এবং সর্বশেষ সিদ্ধান্ত দিতে হবে যে বক্তব্যটি/সিদ্ধান্তটি আংশিক সত্য, পুরোপুরি নয়। বিচার-বিশ্লেষণ-সংশ্লেষণ, মূল্যায়ন করে সিদ্ধান্ত দেওয়ার নামই উচ্চতর দক্ষতা। 

সৃজনশীল পদ্ধতির বহুনির্বাচনি প্রশ্নগুলো একটু ভিন্ন ধরনের। ৩০টি বহুনির্বাচনি প্রশ্ন থাকবে, সব কটির উত্তর দিতে হবে, সময় ৩০ মিনিট। এর জন্য তোমাদের মূল বই বেশি বেশি রিডিং পড়তে হবে। কবিতাগুলো মুখস্থ রাখতে পারলে ভালো। বিগত সালের প্রশ্ন থেকে দেখা গেছে, কবিতা থেকে এমন কিছু বহুনির্বাচনি প্রশ্ন এসেছে, যেগুলোর উত্তর কবিতা মুখস্থ থাকলে দেওয়া সম্ভব হতো।

মো. সুজাউদ দৌলা, সহকারী অধ্যাপক, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ, ঢাকা