এসএসসি বাংলা ১ম পত্রের সৃজনশীল প্রশ্নে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ার টিপস

প্রিয় পরীক্ষার্থী, এসএসসি পরীক্ষায় বাংলা ১ম পত্রে নির্ধারিত ১৫টি গদ্য থেকে ৪টি, নির্ধারিত ১৫টি কবিতা থেকে ৩টি এবং উপন্যাস ও নাটক থেকে ২টি করে মোট ১১টি সৃজনশীল প্রশ্ন থাকবে। গদ্য থেকে কমপক্ষে ২টি, কবিতা থেকে কমপক্ষে ২টি এবং উপন্যাস ও নাটক থেকে কমপক্ষে ১টি করে মোট ৭টি প্রশ্নের উত্তর করতে হবে।

কত নম্বর পেলে A+ হবে?

বাংলা বিষয়ে A+ নির্ধারিত হয় ১ম পত্র ও ২য় পত্রের নম্বর মিলিয়ে। অর্থাৎ বাংলা দুই পত্রে মোট নম্বর ২০০। A+ পেতে হলে কমপক্ষে ১৬০ নম্বর পেতে হবে। যেমন কেউ যদি বাংলা ১ম পত্রে ৮৮ পায়, তাহলে তার A+ পেতে বাংলা ২য় পত্রে কমপক্ষে ৭২ পেতে হবে। অর্থাৎ যেকোনোভাবে দুই পত্রে মোট ১৬০ নম্বর পেতে হবে।

বিশেষ ধরনের পদ্ধতি

সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতি যেহেতু একটি বিশেষ ধরনের পরীক্ষাপদ্ধতি, তাই এর উত্তর লেখার কৌশলও বিশেষ ধরনের। যেখানে অপ্রাসঙ্গিক তথ্য বা উত্তর লিখে বাহুল্যদোষ ঘটানোর কোনো সুযোগ নেই; বরং উত্তর হবে সুনির্দিষ্ট, পরিমিত ও প্রাসঙ্গিক।

প্রতিটি উত্তর লেখার সময়

পরীক্ষায় তুমি ১১টি সৃজনশীল প্রশ্ন থেকে মোট ৭টি প্রশ্নের উত্তর করার জন্য সময় পাবে ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট। অর্থাৎ প্রতিটি প্রশ্নের জন্য বরাদ্দ ২১ দশমিক ৪২ মিনিট। তোমাকে এই সময়ের মধ্যে ১১টি উদ্দীপক পড়তে হবে, ভাবতে হবে, কল্পনা করতে হবে, পাঠ্যবইয়ের সঙ্গে মেলাতে হবে। বাস্তবতা হলো, একটি প্রশ্নের উত্তর লেখার জন্য তুমি আসলে কোনোভাবেই ১৭ থেকে ১৮ মিনিটের বেশি সময় পাবে না। কাজেই সুনির্দিষ্ট ও পরিমিত উত্তর লেখা ছাড়া ভালোভাবে সম্পূর্ণ উত্তর লেখা শেষ করা সম্ভব নয়।

এত কম সময়ের মধ্যে ৭টি প্রশ্নের উত্তর তোমরা কীভাবে লিখবে? কীভাবে পূর্ণ নম্বর পাবে? তোমাদের এটাই তো জিজ্ঞাসা?

# এখন আমরা এর সমাধান একটি সৃজনশীল প্রশ্ন ও তার নমুনা উত্তরের মাধ্যমে দেওয়ার চেষ্টা করব। ধরো, ‘মমতাদি’ গল্প থেকে একটি উদ্দীপক—

দৃশ্য-১:

পরীক্ষার ফি ও তিন মাসের বেতন বাকি পড়ায় ক্লাসের সবার সামনে আসামির মতো দাঁড়াতে হলো শেফালিকে। সহপাঠীদের বক্রচাহনি তার বুকে তিরের মতো বিঁধতে লাগল। তার মনে হলো—‘ধরণি দ্বিধা হও।’ আর তখনই শেফালি সিদ্ধান্ত নিল—কারও বাসায় কাজ করে হলেও বেতন পরিশোধ করে লেখাপড়া চালিয়ে যাবে।

দৃশ্য-২:

শেফালি তার প্রত্যাশামতো কাজ পায় সায়েম সাহেবের বাসায়। কাজের ফাঁকে ফাঁকে সে সায়েম সাহেবের ছোট মেয়ে সীমার কাছে লেখাপড়া করে, নানা বিষয়ে গল্পগুজব করে। এমনিভাবে তাদের মধ্যে গভীর সখ্য গড়ে ওঠে। সীমার দাদি এতে খুব খুশি হন। কিন্তু খুশি হন না মিসেস সায়েম। তিনি এ নিয়ে মাঝেমধ্যেই শেফালিকে বকাঝকা করতেন এবং সীমাকে ওর সঙ্গে মিশতে নিষেধ করতেন। সর্বশেষ যেদিন মিসেস সায়েম এ নিয়ে শেফালির গায়ে হাত তুলল, সেদিনই সবার অজান্তে নিরুদ্দেশ হলো শেফালি।

ক. ‘মমতাদি’ গল্পটি কোন গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে?

খ. ‘গুরু নিন্দা বাঁচাতে মিথ্যা বলা’—কথাটির দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?

গ. দৃশ্য-১–এ শেফালির মধ্যে ‘মমতাদি’ গল্পের মমতাদির যে বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে, তা ব্যাখ্যা করো।

ঘ. শেফালির করুণ পরিণতি রোধে ‘মমতাদি’ গল্পের শিক্ষা সায়েম পরিবারের সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বলে তুমি মনে করো কি? যুক্তি দাও।

∎ জ্ঞানমূলক অংশ

ক. জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ছিল—‘মমতাদি’ গল্পটি কোন গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে? এর উত্তরে তোমরা হয়তো লিখবে—‘মমতাদি’ গল্পটি ‘সরীসৃপ’ নামক গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ উত্তরটি আমরা ‘সরীসৃপ’ এই একটিমাত্র শব্দেও দিতে পারি। একটি পূর্ণবাক্য লেখার দরকার নেই। তাহলে এই প্রশ্নের উত্তরেই আমরা সাত থেকে ৮টি শব্দ লেখার সময় বাঁচাতে পারি। এভাবে ৭টি সৃজনশীলের জ্ঞানমূলক প্রশ্নের উত্তরেই অনেকগুলো শব্দ লেখার সময় বাঁচানো যায়। পূর্ণ বাক্য না লিখলেও তুমি এখানে পূর্ণ ১ নম্বরই পাবে। তবে এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে—জ্ঞানমূলক প্রশ্নে যে তথ্যটি জানতে চাওয়া হয়েছে, সেটির বানান ভুল করলে উত্তর কাটা যাবে এবং শূন্য পাবে।

∎ অনুধাবনমূলক অংশ

খ. অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ছিল—‘গুরু নিন্দা বাঁচাতে মিথ্যা বলা’—কথাটির দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?

এর মধ্যে ১টি নম্বর জ্ঞানের জন্য, আর ১টি নম্বর অনুধাবনের জন্য। তাই আমরা জ্ঞান অংশের জন্য লিখতে পারি—কথাটির দ্বারা স্বামীর প্রতি মমতাদির শ্রদ্ধা-ভালোবাসা বোঝানো হয়েছে।

এরপর অনুধাবন অংশে ব্যাখ্যা করব যে ‘মমতাদি’ গল্পে আমরা দেখি, স্বামীর চাকরি না থাকার কারণে জীবিকার তাগিদে গল্পকথকের বাড়িতে কাজ নেন মমতা। তার স্বামী তাকে ভালোবাসত না, বরং শারীরিক নির্যাতন করত। মমতার গালে থাপ্পড় দিয়ে আঙুলের দাগ বসিয়ে দিয়েছিল। সে সত্য প্রকাশ করলে স্বামীর নিন্দা হবে, তাই সে মিথ্যা বলে যে মশা মারতে নিজেই নিজের গালে থাপ্পড় দিয়েছে। তা ছাড়া স্বামীর চাকরিহীনতা বা বেকারত্বকে লেখকের মা এবং প্রতিবেশীরা করুণার চোখে দেখলে মমতার কষ্ট হয়। সে জন্য গুরু নিন্দা, তথা তার স্বামীর অপমান সইতে না পেরে সে মিথ্যা কথা বলে—তার স্বামীর চাকরি হয়েছে। এমনিভাবে স্বামীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা-ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে মমতার।

# তুমি ইচ্ছা করলে জ্ঞান অংশের উত্তর আগে অনুধাবনমূলক উত্তর পরে অথবা অনুধাবনমূলকের উত্তর আগে জ্ঞানমূলকের উত্তর পরে লিখতে পারো। তবে জ্ঞানমূলকের উত্তর আগে লিখে অনুধাবনের উত্তর পরে লেখাই সবচেয়ে ভালো।

অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তর এক প্যারাতেও লেখা যায়, দুই প্যারাতেও লেখা যায়। তবে দুই প্যারাতে লেখার চেষ্টা করবে। আর অনুধাবনমূলক প্রশ্নের শুরুতে অযথা কবি বা সাহিত্যিককে নানা বিশেষণে বিশেষায়িত করার দরকার নেই। মনে রাখতে হবে, সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর হবে—‘জিরো ফ্যাট’ অর্থাৎ চর্বিশূন্য। শুধু অনুধাবনেই নয়, কোনোক্রমে কোনো প্রশ্নের উত্তরেই অপ্রাসঙ্গিক কথা, অপ্রয়োজনীয় তথ্য বা বাহুল্যদোষ করা যাবে না।

# এ জন্যই ‘খ’ অংশ, অর্থাৎ অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে বোর্ড বলছে—সর্বোচ্চ ৫টি বাক্যে উত্তর লেখা যেতে পারে।

∎ প্রয়োগমূলক অংশ

গ. প্রয়োগমূলক প্রশ্ন ছিল—গ. দৃশ্য-১–এ শেফালির মধ্যে ‘মমতাদি’ গল্পের মমতাদির যে বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে, তা ব্যাখ্যা করো।

এক্ষেত্রে মোট নম্বর ৩। ১ নম্বর জ্ঞানে, ১ নম্বর অনুধাবনে এবং ১ নম্বর প্রয়োগে। তাই প্রয়োগমূলকের উত্তর তিন প্যারায় করাই ভালো। প্রয়োগ মানে আমরা জানি, শিক্ষার্থী তার পাঠ্যবই থেকে যা জেনেছে এবং যা বুঝেছে, তা নতুন ক্ষেত্রে, অর্থাৎ উদ্দীপকে প্রয়োগ করবে। কাজেই উদ্দীপকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গল্প বা কবিতার যে দিকটির সাদৃশ্য বা বৈসাদৃশ্য থাকে, সেটাই জ্ঞান। ওই দিকটি ১টি শব্দে বা ১টি বাক্যে লিখতে পারলেই ১ নম্বর পাবে।

যেমন আলোচ্য প্রশ্নের জ্ঞান হলো—আত্মসম্মানবোধ/আত্মমর্যাদাবোধ/ব্যক্তিত্ববোধ। এগুলোর যেকোনো একটি শব্দ লিখলেও তুমি জ্ঞান অংশের জন্য ১ নম্বর পাবে। আর যদি ১ বাক্যে উত্তর লিখতে চাও, তাহলে এভাবে লিখতে পারো—দৃশ্য-১–এ শেফালির মধ্যে ‘মমতাদি’ গল্পের মমতাদির যে বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে, তা হলো আত্মসম্মানবোধ। এরপর ওই দিকটি পাঠ্যবইয়ের আলোকে বর্ণনা করাই হলো অনুধাবন। দ্বিতীয় প্যারায় আমরা লিখব—‘মমতাদি’ গল্পে আমরা দেখতে পাই—স্বামীর চাকরি না থাকার কারণে লোকলজ্জা উপেক্ষা করে গল্পকথকের বাড়িতে রাঁধুনির কাজ নেন মমতা। গল্পের শুরু থেকেই তাঁর মধ্যে প্রখর ব্যক্তিত্ববোধ বা আত্মমর্যাদাবোধের পরিচয় পাওয়া যায়। নিজের মুখে কাজের বেতন না চাওয়া, স্বল্পভাষিণী হয়ে নীরবে নিভৃতে আপনমনে দক্ষতার সঙ্গে সব কাজ করা, তোষামোদির আশ্রয় না নেওয়া, লেখক ‘বামুনদি’ বলায় মমতাদির মুখ লাল হয়ে যাওয়া ইত্যাদির মধ্যে তাঁর ব্যক্তিত্ব ফুটে ওঠে। তবে একদিন মমতা যখন পরম স্নেহে লেখককে আদর করছিলেন, তখন লেখকের মা তা দেখতে পান। তখন মমতা আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য লেখকের কপালে চুমু এঁকে দেন। সামান্য রাঁধুনি বাড়ির ছোটকর্তাকে আদর করেছে বলে লেখকের মা যদি সেদিন মুখ কালো করতেন কিংবা ছেলেকে শাসন করতেন, তাহলে চরম দারিদ্র্য সত্ত্বেও এবং অনেক টাকার লোভেও মমতা আর সে বাড়িতে কাজ করতে আসতেন না। এমনিভাবে গল্পে মমতাদির মর্যাদাবোধ প্রবলভাবে প্রকাশ পেয়েছে। এইটুকু লিখলে আরও ১ নম্বর পাওয়া যাবে।

সবশেষে ওই দিকটি (আত্মসম্মানবোধ/আত্মমর্যাদাবোধ/ব্যক্তিত্ববোধ) উদ্দীপকে কীভাবে ফুটে উঠেছে, তা বর্ণনা করাই প্রয়োগ। অর্থাৎ দৃশ্য-১–এ মমতাদির মতো শেফালিও যে প্রবল ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ও আত্মমর্যাদাবোধের অধিকারী, তা ব্যাখ্যা করার নামই প্রয়োগ। পরীক্ষার ফি ও তিন মাসের বেতন বাকি পড়ায় ক্লাসের সবার সামনে আসামির মতো দাঁড়ানোর বিষয়টি তার আত্মমর্যাদায় প্রবল আঘাত হানে। সহপাঠীদের আচরণও তাকে মর্মাহত করে। লজ্জা ও অপমানে মাটির নিচে লুকিয়ে যেতে ইচ্ছা করে তার। আর তাই আত্মমর্যাদা ও ব্যক্তিত্ববোধকে প্রতিষ্ঠার জন্য কারও বাসায় কাজ করে হলেও স্কুলের বেতন পরিশোধ করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয় শেফালি। এভাবে শেফালির আত্মমর্যাদাবোধের কথাগুলো লিখতে পারলে আরও ১ নম্বর পাবে। অর্থাৎ প্রয়োগমূলক উত্তরে সহজেই তুমি পূর্ণ ৩ নম্বরই পেতে পারো।

# ‘গ’ অংশ বা প্রয়োগমূলক সম্পর্কে বোর্ড বলছে–এর উত্তর ১২ বাক্যের মধ্যে শেষ করা যেতে পারে।

∎ উচ্চতর দক্ষতার অংশ

ঘ. উচ্চতর দক্ষতার প্রশ্ন ছিল—ঘ. শেফালির করুণ পরিণতি রোধে ‘মমতাদি’ গল্পের শিক্ষা সায়েম পরিবারের সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বলে তুমি মনে করো কি? যুক্তি দাও।

এ ক্ষেত্রে মোট নম্বর-৪। ১ নম্বর জ্ঞানে, ১ নম্বর অনুধাবনে, ১ নম্বর প্রয়োগে এবং ১ নম্বর উচ্চতর দক্ষতায়।

আমরা জানি, উচ্চতর দক্ষতা মানেই একটি সিদ্ধান্তের ব্যাপার। প্রশ্নেই সাধারণত একটি অনুসিদ্ধান্ত দেওয়া থাকে। যদি সিদ্ধান্তটি ঠিক হয়, তাহলে সেটিকেই ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে, উদ্দীপকে প্রয়োগ করে প্রমাণ করতে হবে যে সিদ্ধান্তটি ঠিক। আর যদি সিদ্ধান্তটি ভুল হয়, তাহলে কেন ভুল, সেটিও প্রমাণ করতে হবে। অনেক সময় সিদ্ধান্তটি আংশিক সত্য হতে পারে। সে ক্ষেত্রে উদ্দীপকের সঙ্গে পাঠ্যবইয়ের যে অংশটুকুর মিল আছে, তা বর্ণনা করে যে যে ক্ষেত্রে মিল নেই, সেগুলোও বর্ণনা করতে হবে এবং শেষে সিদ্ধান্ত দিতে হবে যে বক্তব্যটি বা সিদ্ধান্তটি আংশিক সত্য, পুরোপুরি নয়। বিচার-বিশ্লেষণ-সংশ্লেষণ, মূল্যায়ন করে সিদ্ধান্ত দেওয়ার নামই উচ্চতর দক্ষতা। এ ক্ষেত্রে প্রশ্নটি ভালোভাবে পড়ে পাঠ্যবইয়ের সঙ্গে মিলিয়ে বুঝতে হবে। প্রশ্ন বুঝতে ভুল হলে পুরো ৪ নম্বরে ০ পাবে। যেমন আলোচ্য প্রশ্নে জানতে চাওয়া হয়েছে—শেফালির করুণ পরিণতি রোধে ‘মমতাদি’ গল্পের শিক্ষা সায়েম পরিবারের সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বলে তুমি মনে করো কি? যুক্তি দাও।

প্রথমেই আমরা জ্ঞান অংশে বলব যে, শেফালির করুণ পরিণতি রোধে ‘মমতাদি’ গল্পের শিক্ষা, অর্থাৎ গৃহকর্মে নিয়োজিত মানুষের প্রতি মানবিক আচরণ ও সহানুভূতিশীল মনোভাব প্রদর্শন সায়েম পরিবারের শুধু মিসেস সায়েমের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, অন্যদের ক্ষেত্রে নয় বলে আমি মনে করি। এটুকুর জন্য ১ নম্বর পাবে। এরপর অনুধাবন অংশের জন্য তুমি লিখবে—

‘মমতাদি’ গল্পের শুরুতেই আমরা দেখি, স্বামীর চাকরিহীনতায় জীবিকার তাগিদে কাজের সন্ধানে আসা মমতার প্রতি লেখকের মা আন্তরিকতাপূর্ণ আচরণ করেছেন। মমতার অসহায়ত্বের কথা শুনে তিনি সহানুভূতিশীল হন এবং মমতার প্রত্যাশার চেয়েও বেশি মাইনে দিয়ে তাকে রাঁধুনি হিসেবে কাজে নিয়োজিত করেন। শুধু তা–ই নয়, ওই পরিবারে কেউ কখনোই মমতার সঙ্গে অশালীন-অশোভন আচরণ করেননি, কাজের ক্ষেত্রে কোনো রকম বিধিনিষেধ আরোপ করেননি; বরং মমতাকে সবাই সেই পরিবারের একজন সদস্য হিসেবেই মনে করেছেন। রাঁধুনি হয়ে বাড়ির ছোটকর্তাকে আদর করলে লেখকের মা তাতে রাগ করেননি, বরং খুশি হয়েছেন। আর এতে মমতাও তার আত্মমর্যাদা ও ব্যক্তিত্ববোধের মূল্য পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়েছেন। এটুকু লিখতে পারলে তুমি আরও ১ নম্বর পাবে।

এরপর প্রয়োগ অংশে তুমি লিখবে— দৃশ্য-২–এ আমরা দেখতে পাই আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন শেফালি বেতনের টাকা জোগাড় করতে সায়েম সাহেবের বাসায় ঝিয়ের কাজ নেন। সেই পরিবারের মেয়ে সীমার সঙ্গে শেফালির গভীর সখ্য গড়ে ওঠে। শেফালিকে পড়ালেখা করায় সীমা, কাজের ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন বিষয়ে গল্পগুজব করে ওরা। অর্থাৎ শেফালির সঙ্গে আন্তরিকতাপূর্ণ সহানুভূতিশীল আচরণ করেন সীমা। সীমার দাদিও এ দলের অন্তর্ভুক্ত। কারণ, তিনি সীমার এ ধরনের আচরণকে খুশি মনে সমর্থন করেছেন। এতটুকুর জন্য তুমি আরও ১ নম্বর পাবে। এরপর উচ্চতর দক্ষতার স্তরের জন্য তুমি লিখতে পারো—

কিন্তু পরিবারের কর্ত্রী, অর্থাৎ মিসেস সায়েম শেফালির সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করেননি। তার মেয়ে সীমার সঙ্গে সখ্য ভাবের কারণে তিনি মাঝেমধ্যেই শেফালিকে বকাঝকা করতেন এবং সীমাকে ওর সঙ্গে মিশতে নিষেধ করতেন। এ নিয়ে মিসেস সায়েম শেফালিকে প্রহারও করেন, যা শেফালির ব্যক্তিত্ব ও আত্মমর্যাদায় আঘাত করে। তাই সবার অজান্তে শেফালি নিরুদ্দেশ হয়। মিসেস সায়েম যদি পরিবারের অন্য দুই সদস্য সীমা ও তার দাদুর মতো সহানুভূতিশীল ও মানবিক হতেন, তাহলে শেফালির এ ধরনের করুণ পরিণতি হতো না বলে আমি মনে করি। কারণ, ‘মমতাদি’ গল্পে আমরা দেখেছি—গৃহকাজে নিয়োজিত মমতার সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করায় মমতা তার ব্যক্তিত্ব ও আত্মমর্যাদা নিয়ে লেখকের পরিবারে সগর্বে কাজ করেছে। শেফালির ক্ষেত্রেও তা–ই হতে পারত।

তাই ‘মমতাদি’ গল্প থেকে সায়েম পরিবারের সবার নয়, শুধু মিসেস সায়েমের মানবিকতার শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। এটুকুর জন্য তুমি আরও ১ নম্বর পাবে। এভাবে ধাপে ধাপে সুন্দর করে প্রাসঙ্গিক উত্তর লিখতে পারলে তুমি অবশ্যই পূর্ণ ৪ নম্বরই পাবে।

শেষ কথা, শেষ পরামর্শ

দেখলে তো, কীভাবে একটি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর যথার্থভাবে লেখা যায় এবং আশা করা যায় এভাবে লিখলে ১০–এ ১০ পাওয়া সম্ভব। শুধু সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর লেখার কৌশল জানলেই হবে না, পাঠ্যবই ভালোভাবে পড়তে ও বুঝতে হবে। প্রতিটি গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস ও নাটকের প্রতিটি বাক্য ধরে ধরে পড়তে হবে, বুঝতে হবে। প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো মনে রাখতে হবে; তাহলেই কেবল সৃজনশীল প্রশ্নে নয়, বরং বহুনির্বাচনি অংশেও তুমি ভালো ফল করতে পারবে।

মোহাম্মদ হুমায়ূন কবীর, প্রভাষক, মাস্টার ট্রেইনার, সেন্ট যোসেফ উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়, ঢাকা