অষ্টম শ্রেণি – বিজ্ঞান | অধ্যায় ৩ : সৃজনশীল প্রশ্ন (২)

অষ্টম শ্রেণির পড়াশোনা

সৃজনশীল প্রশ্ন

ফারজানা সেমাই রান্না করার জন্য কিশমিশ পানিতে ভিজিয়ে রাখলেন। কিছু সময় পরে তিনি লক্ষ করলেন কিশমিশগুলো ফুলে উঠেছে। ব্যাপারটি তাঁকে কৌতূহলী করে তুলল।

ক. প্রস্বেদন কাকে বলে?

খ. ইমবাইবিশন বলতে কী বোঝায়?

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বস্তুর পরিবর্তনের কারণ ব্যাখ্যা করো।

ঘ. উল্লিখিত প্রক্রিয়াটি যদি উদ্ভিদদেহে সংঘটিত না হয়, তাহলে কী হবে? বিশ্লেষণ করো।

উত্তর

ক. উদ্ভিদের দেহাভ্যন্তর থেকে পাতার মাধ্যমে বাষ্পাকারে পানি নির্গমন-প্রক্রিয়াকে প্রস্বেদন বা বাষ্পমোচন বলে।

খ. কলয়েড জাতীয় শুকনো বা অর্ধশুকনো পদার্থের তরল পদার্থ শোষণের বিশেষ প্রক্রিয়াকে ইমবাইবিশন, অর্থাৎ উদ্ভিদদেহের কোষপ্রাচীর, প্রোটোপ্লাজম ইত্যাদির পানি শোষণ-প্রক্রিয়াকে ইমবাইবিশন বলা হয়।

অঙ্কুরোদ্​গমের সময় শুকনা বীজ যে পরিমাণ পানি শোষণ করে, তার অধিকাংশই ইমবাইবিশন-প্রক্রিয়ায় হয়ে থাকে।

গ. অন্তঃঅভিস্রবণ-প্রক্রিয়ায় উল্লিখিত বস্তুর (কিশমিশ) মধ্যে পানি প্রবেশ করে। ফলে কিশমিশগুলো ফুলে ওঠে। যে অভিস্রবণ-প্রক্রিয়ায় পানি (দ্রাবক) কোষের বাইরে থেকে কোষের ভেতরে প্রবেশ করে, তাকে অন্তঃঅভিস্রবণ বলে। কিশমিশের ভেতরে কোষরসের ঘনত্ব বাইরের দ্রবণের ঘনত্ব অপেক্ষা বেশি। কিশমিশের বাইরের আবরণটি বৈষম্যভেদ্য ঝিল্লি হিসেবে কাজ করে থাকে। কিশমিশের বাইরে বাটির দ্রবণে পানির পরিমাণ বেশি। কিন্তু কিশমিশের ভেতরের দ্রবণে পানির পরিমাণ খুবই কম। এ অবস্থায় বাটি থেকে পানি কিশমিশের বৈষম্যভেদ্য ঝিল্লি ভেদ করে ভেতরে ঘন দ্রবণে প্রবেশ করছে। ফলে কিশমিশগুলো ফুলে গেছে। এটাই উল্লিখিত বস্তুর (কিশমিশ) পরিবর্তনের কারণ।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত প্রক্রিয়াটি অভিস্রবণ। যে প্রক্রিয়ায় একটি বৈষম্যভেদ্য ঝিল্লির মধ্য দিয়ে হালকা ঘনত্বের দ্রবণ থেকে পানি (দ্রাবক) অধিক ঘন দ্রবণের দিকে প্রবাহিত হয়, তাকে অভিস্রবণ বলে। মূলরোমের সাহায্যে পানি পরিশোষণ অভিস্রবণ-প্রক্রিয়ায় হয়ে থাকে। কাজেই অভিস্রবণ-প্রক্রিয়া সংঘটিত না হলে পানি পরিশোষণ বিঘ্নিত হবে। অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় কোষের রসস্ফীতি ঘটে। এ প্রক্রিয়া উদ্ভিদের কান্ড ও পাতাকে সতেজ এবং খাড়া রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও অভিস্রবণের মাধ্যমে পাপড়ি বন্ধ করতে বা খুলতে পারে।

উদ্ভিদের কোষ থেকে কোষাভ্যন্তরে পানির চলাচল, কোষের স্ফীতি অবস্থা বজায় রাখা, কোষের স্বাভাবিক আকার ও আকৃতি ঠিক রাখা, পত্ররন্ধ্র খোলা ও বন্ধ হওয়া, প্রস্বেদনের হার নিয়ন্ত্রণে অভিস্রবণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। অভিস্রবণ-প্রক্রিয়া সংঘটিত না হলে এসব শারীরবৃত্তীয় কাজ সম্পন্ন হবে না। এ ছাড়া নরম কোষগুলোতে দৃঢ়তা প্রদান ও বীজের অঙ্কুরোদ্​গমে অভিস্রবণের গুরুত্ব রয়েছে। সুতরাং অভিস্রবণ-প্রক্রিয়া উদ্ভিদদেহে সংঘটিত না হলে বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কাজে মারাত্মক বিঘ্ন সৃষ্টি হবে। ফলে উদ্ভিদের জীবন হুমকির সম্মুখীন হবে।

মোহাম্মদ আক্তার উজ জামান, প্রভাষক, সরকারি রূপনগর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা

◀ সৃজনশীল প্রশ্ন (১)