এইচএসসি ২০২২ - সমাজবিজ্ঞান ২য় পত্র | অধ্যায় ১ : সৃজনশীল প্রশ্ন (১)

পুনর্বিন্যাসকৃত সিলেবাস অনুসারে

অধ্যায় ১

আয়েশা চট্টগ্রাম মহিলা কলেজে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছেন। প্রথম ক্লাসে তিনি বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে অধ্যাপক নাজমুল করিমের নাম জানতে পারেন। এ অধ্যাপক অগ্রণী ভূমিকা নিয়ে ১৯৫৭ সালে নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন। জ্ঞানের একটি বিকাশমান শাখা হিসেবে পরবর্তী সময় দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি-বেসরকারি কলেজে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ চালু হয়।     

প্রশ্ন

ক. The Positive Background of Hindu Sociology গ্রন্থের লেখক কে?  

খ. প্রাচ্যের কৌটিল্যকে পাশ্চাত্যের ম্যাকিয়াভেলির অগ্রদূত বলা হয় কেন?        

গ. সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে উদ্দীপকে নির্দেশিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা তুলে ধরো। 

ঘ. বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান বিকাশের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে—কথাটির যথার্থতা নিরূপণ করো।

উত্তর

ক. গ্রন্থটির লেখক অধ্যাপক বিনয় কুমার সরকার। 

খ. যে দু-একজন ভারতীয় চিন্তাবিদ প্রাচীন সমাজ সম্পর্কে আলোচনা করেছেন, তাঁদের মধ্যে কৌটিল্য অন্যতম। তাঁর লেখা অর্থশাস্ত্র গ্রন্থটি সমাজ গবেষকদের কাছে অতি মূল্যবান। গ্রন্থটিতে তিনি মৌর্য আমলের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থার বিশদ আলোচনা করেছেন। পরবর্তী সময়ের অধিকাংশ গবেষকই প্রাচ্য নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে তাঁর আলোচনা দ্বারা সমৃদ্ধ হয়েছেন। তাই তাঁকে পাশ্চাত্যের ম্যাকিয়াভেলির অগ্রদূত বলা হয়।        

গ. উদ্দীপকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে নির্দেশ করা হয়েছে। ১৯৫৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়।   

স্বতন্ত্র বিভাগ হিসেবে প্রতিষ্ঠার আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানসহ বিভিন্ন বিভাগে সহায়ক কোর্স হিসেবে সমাজবিজ্ঞান পড়ানো হতো। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নাজমুল করিমের আগ্রহের ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্ভাব্যতা যাচাই করে ইউনেসকোর কাছে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ চালু করার জন্য সহযোগিতা কামনা করে। ইউনেসকো বিভাগটি চালুর বিষয়ে সহযোগিতা করতে সামাজিক নৃবিজ্ঞানী পেরি বেসাইনিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেরণ করে। এই ধারাবাহিকতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউনেসকোর যৌথ উদ্যোগে ১৯৫৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বতন্ত্র বিভাগ হিসেবে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের যাত্রা শুরু হয়। ইউনেসকোর বিশেষজ্ঞ পেরি বেসাইনি এ বিভাগের প্রথম অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। অধ্যক্ষ ও নাজমুল করিমসহ চারজন শিক্ষক নতুন এ বিভাগে যোগ দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক সহযোগিতায় সমাজবিজ্ঞান বিভাগ একটি পূর্ণাঙ্গ বিভাগ হিসেবে মর্যাদা লাভ করে।     

ঘ. বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান চর্চার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। অবিভক্ত বাংলায় কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র, আবুল ফজলের আইন-ই-আকবরী প্রভৃতি গ্রন্থ সমাজবিজ্ঞান চর্চার পটভূমি রচনা করে।  গ্রন্থগুলোতে তাঁরা তৎকালীন বাঙালি সমাজের আর্থসামাজিক বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করেন।     

১৮৩৯ সালে ফরাসি দার্শনিক অগাস্ট কোঁতের হাত ধরে জ্ঞানের রাজ্যে সমাজবিজ্ঞানের যাত্রা শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় অবিভক্ত বাংলায় প্রথম কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞানের অধ্যয়ন শুরু হয়। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিভাগে সমাজবিজ্ঞানের পাঠ শুরু হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এ কে নাজমুল করিমের সার্বিক প্রচেষ্টায় ও ইউনেসকোর সহযোগিতায় ১৯৫৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বতন্ত্র বিভাগ হিসেবে সমাজবিজ্ঞানের যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে ১৯৬৯ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও ১৯৭০ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তী সময়ে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে সমাজবিজ্ঞানের অধ্যয়ন শুরু হয়। বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি–বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি কলেজেও সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এর বিকাশ অব্যাহত রয়েছে।      

অধ্যাপক নাজমুল করিমের হাত ধরেই বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞানের আনুষ্ঠানিক অধ্যয়ন শুরু হয়। তারপর অধ্যাপক এফ আর খান, অধ্যাপক আফসার উদ্দিন, রঙ্গলাল সেন, অনুপম সেন, আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী প্রমুখ বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞানের ক্ষেত্রকে আরও গতিশীল করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় এটি একটি পূর্ণাঙ্গ বিভাগ হিসেবে মর্যাদা লাভ করে। ওপরের আলোচনা থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান বিকাশের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।

মোহাম্মদ জসিমউদ্দীন, প্রভাষক, মোহাম্মদপুর মডেল কলেজ, ঢাকা