ব্যাখ্যা জানাতে এনসিটিবি চেয়ারম্যানসহ দুজনকে তলব

ফাইল ছবি

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যবইয়ে থাকা ভুলের বিষয়ে ব্যাখ্যা জানাতে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান ও সদস্যকে (শিক্ষাক্রম) তলব করেছেন হাইকোর্ট।

এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আজ রোববার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন। আগামী ১০ নভেম্বর এনসিটিবির চেয়ারম্যান ও সদস্যকে আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছে।  

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যবইয়ে থাকা ভুল তুলে ধরে তা সংশোধনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা চেয়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মো. আলমগীর আলম ৬ সেপ্টেম্বর ওই রিট করেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আলী মুস্তাফা খান। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।

রুলে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যবইয়ে থাকা ভুল সংশোধনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে এবং ভুলের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। শিক্ষাসচিব, এনসিটিবি চেয়ারম্যান, সদস্যসহ (শিক্ষাক্রম) বিবাদীদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
রিটে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের কোন পাঠ্যবইয়ের কোথায় ভুল আছে, তা উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, একাদশ–দ্বাদশ শ্রেণির পৌরনীতি ও সুশাসন (দ্বিতীয় পত্র) বইয়ের সপ্তম অধ্যায়ে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান শিরোনামে দুর্নীতি দমন কমিশনকে ‘সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে, এ তথ্য দেশের সংবিধানের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।

আরও বলা হয়, ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ে শিরোনাম—মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি: ৩ নং পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, এ সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো এক সাহসী, ত্যাগী, ও দুরদর্শী নেতার “আর্বিভাব” হয়। অথচ প্রকৃত সত্য এই যে, বঙ্গবন্ধু হঠাৎ কোনো “আর্বিভূত” নেতা নন। তিনি তিলে তিলে বাঙালি জাতির নেতা হয়ে উঠেছেন।

সপ্তম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ে ১০ নম্বর পৃষ্ঠার ওপর থেকে ৫ ও ৬ নম্বর লাইনে উল্লেখ করা হয়েছে ১৯৭০ সালের ১৭ ডিসেম্বর পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। “এ নির্বাচন ছিল শুধু পূর্ব পাকিস্তানের।” কিন্তু প্রকৃতপক্ষে পাকিস্তানের সব প্রদেশে প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন হয়েছিল। অষ্টম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ে ১৩ নম্বর পৃষ্ঠায় ওপর থেকে ২ নং লাইনে “মাইল”–এর স্থলে “কিলোমিটার” হবে।

এ ছাড়া নবম-দশম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের ২–৯ নং পৃষ্ঠার বিভিন্ন জায়গায় “শেখ মুজিব” লেখা হয়েছে। অথচ বর্তমানে সকল ক্ষেত্রে তাঁর নামের পূর্বে “বঙ্গবন্ধু” লিখতে হবে। ২২ নং পৃষ্ঠায় ওপর থেকে ৭ নং লাইনে “মুজিবনগর সরকারের রাষ্ট্রপতি”–এর স্থলে “প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি” হবে। ২৯ নং পৃষ্ঠায় নিচ থেকে ১৬ নং লাইনে “প্রেসিডেন্ট ভবন”–এর স্থলে হবে “বঙ্গভবন”। ৮৮ নং পৃষ্ঠায় নিচ থেকে ৩ নং লাইনে “সার্বভৌমের আদর্শই হল আইন” এর স্থলে “সার্বভৌমের আদেশই হল আইন” হবে বলে রিটে উল্লেখ করা হয়।

আদেশের বিষয়টি জানিয়ে আইনজীবী আলী মুস্তাফা খান প্রথম আলোকে বলেন, মাধ্যমিক পর্যায়ে ছয়টি ও উচ্চপর্যায়ের একটি পাঠ্যবইয়ে থাকা ভুলগুলো উল্লেখ করে ওই রিট করা হয়। হাইকোর্ট ভুলের বিষয়ে ব্যাখ্যা জানাতে এনসিটিবি চেয়ারম্যান ও সদস্যকে (শিক্ষাক্রম) ১০ নভেম্বর আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছেন।