ষষ্ঠ শ্রেণি - বাংলা ১ম পত্র | মানবজাতি : সৃজনশীল প্রশ্ন (৬)

ষষ্ঠ শ্রেণির পড়াশোনা

মানবজাতি

উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও

শোনো হে মানুষ ভাই

সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই

জাতপাত যাই নিয়ে গর্ব করিনা কেন ভাই

আসল সত্য আমরা সবাই মানুষ, সৃষ্টির সেরা তাই,

প্রশ্ন

ক. ‘মানবজাতি’ কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে?

খ. ‘একই পৃথিবীর স্তন্যে লালিত’ — লাইনটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?

গ. উদ্দীপক ও ‘মানবজাতি’ কবিতার মধ্যে কী মিল রয়েছে — ব্যাখ্যা করো।

ঘ. কালো আর ধলো বাহিরে কেবল। ভিতরে সবারই সমান রাঙা — উদ্দীপকের আলোকে চরণটি ব্যাখ্যা করো।

উত্তর

ক. ‘মানবজাতি’ কবিতাটি অভ্র আবীর কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।

খ. মায়ের দুধ পান করে সন্তানসন্ততিরা যেমনি বড় হয়ে ওঠে, তেমনি পৃথিবীর সব জাতি, ধর্ম ও গোত্রের মানুষ একই পৃথিবীর খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করে প্রতিপালিত হচ্ছে। মা যেমন তার সন্তানদের ভালোবাসা দিয়ে দুধ পান করিয়ে পরম যত্নের মাধ্যমে বড় করে তোলেন, তেমনিভাবে পৃথিবীও প্রবল ভালোবেসে সব মানবসন্তানকে খাদ্য ও পানীয় সমানভাবে জোগান দিয়ে থাকে।

গ. ‘মানবজাতি’ কবিতায় কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের মানবপ্রেমের দিকটি অত্যন্ত চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে। উদ্দীপকেও মানবজাতি ‘সর্বশ্রেষ্ঠ’—এ সত্যটি প্রকাশিত হয়েছে।

কবি ‘মানবজাতি’ কবিতায় জাতি-ধর্ম-বর্ণের ঊর্ধ্বে উঠে মানুষের আসল পরিচয়কে অত্যন্ত চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, বিশ্বের সব মানুষের দেহে লাল রক্তকণিকা বইছে। কালো আর সাদা কেবল বাইরের দৃষ্টিগ্রাহ্য বিষয়। পৃথিবীতে যে যেখানেই বসবাস করে না কেন, সবারই একটি পরিচয়। সেটি হলো মানুষ। তা ছাড়া সব মানুষের ক্ষুধা-তৃষ্ণা, শীত, গরমের অনুভূতি একই। চন্দ্র-সূর্য সবাইকে সমান আলো ও তাপ দেয়। জাতি প্রথা বা বর্ণ প্রথা মানুষের দ্বারা সৃষ্টি হয়েছে। তাই কবি বলেছেন, এই জাতিপ্রথা ভুলে পৃথিবীর সব মানুষকে একই জাতি হিসেবে গণ্য করতে হবে। সে জাতির একই পরিচয়, তা হলো মানুষ।

উদ্দীপকে বলা হয়েছে, আমরা সবাই মানুষ। জাতপাত বলে আমাদের মাঝে কোনো ভিন্নতা নেই। জাত নিয়ে আমরা যতই গর্ব করি না কেন, আমাদের আসল জাত, আসল পরিচয় হলো—আমরা মানুষ। মানুষ যতই নিজেদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করুক না কেন, প্রকৃতপক্ষে সব মানুষই সমান ও এক। এই পৃথিবী জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবারই বাসভূমি।

সুতরাং বলা যায়, ‘মানবজাতি’ কবিতা ও উদ্দীপকের বক্তব্যের মধ্যে সম্পূর্ণরূপে মিল রয়েছে। উভয় ক্ষেত্রেই বলা হয়েছে পৃথিবীব্যাপী মানুষ এক ও অভিন্ন। মানুষের আসল পরিচয় তারা মানুষ।

ঘ. ‘মানবজাতি’ কবিতায় সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত দেখিয়েছেন মানুষ একই জায়গা থেকে জন্মগ্রহণ করে। একই পৃথিবীতে লালিত-পালিত হয়। পৃথিবীর বুকে ক্ষুধা-তৃষ্ণা-শীত ও তাপের অনুভূতির সবার একই রকম। আবার মৃত্যুর পর সবাই একই জায়গায় চলে যাবে।

বাইরে মানুষের গায়ের রং এক হতে পারে আবার কারও গায়ের রং কালো, আবার কারও ফরসাও হতে পারে। কিন্তু তাদের শরীরের ধমনিতে প্রবহমান রক্তের রং একই রকম লাল। ধর্ম, বর্ণ, গোত্রভেদে মানুষের যে পরিচয় আমরা পেয়ে থাকি, তা কখনোই মানুষের প্রকৃত পরিচয় নয়। ধর্মীয় বৈষম্য, জাতিগত বৈষম্য, বর্ণগত বৈষম্য, নৃগোষ্ঠীগত বৈষম্য, আর্থসামাজিক বৈষম্য—এসব মানুষের তৈরি করা কৃত্রিম বৈষম্য। বাইরে চেহারায় সাদা-কালোর ব্যবধান থাকতেই পারে। তাই বলে সাদা-কালোর মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করা যাবে না। পৃথিবীতে সব মানুষ সমান। সাদা-কালো, গরিব-ধনী, জাতি-ধর্ম ইত্যাদির কারণে নিজেদের পরিচয়কে সংকীর্ণ ও গণ্ডিবদ্ধ করা যাবে না।

উদ্দীপক ও ‘মানবজাতি’ কবিতায় জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোত্রনির্বিশেষে সব মানুষের প্রতি যে অসাম্প্রদায়িক মানসিকতার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে, তা মানুষকে মানবসেবায় অনুপ্রাণিত করবে।

আমিনুল ইসলাম, শিক্ষক, উত্তরা মডেল স্কুল, ঢাকা

◀ সৃজনশীল প্রশ্ন - সুখ