অযৌক্তিক ঘটনা দর্শকমনে দাগ কাটে না

কাগজের বাড়ি নাটকে সুবর্ণা মুস্তাফা ও নাবিলা
কাগজের বাড়ি নাটকে সুবর্ণা মুস্তাফা ও নাবিলা

১৬ মার্চ রাত ১১টায় আফরিন আঁখির উপস্থাপনায় বৈশাখী টিভিতে প্রচারিত হলো সংগীতানুষ্ঠান ‘সারগাম’। শিল্পী ছিলেন লুইপা ও সাব্বির। দুজন পালাক্রমে গান করেছেন এ অনুষ্ঠানে। দুজনই করেছেন মূলত পুরোনো জনপ্রিয় আধুনিক বাংলা গান। লুইপা প্রতিশ্রুতিশীল শিল্পী হিসেবে ইতিমধ্যে দর্শকমনে ঠাঁই করে নিয়েছেন। তাঁর কণ্ঠ মিষ্টি ও আবেদনময় এবং পরিবেশনা স্নিগ্ধ ও আকর্ষণীয়। তাঁর পরিবেশিত গানের মাঝে উল্লেখ্য, ‘তুমি আমার মনের মানুষ মনের ভেতর’, ‘দুঃখ ভালোবেসে প্রেমের খেলা খেলতে হয়’ ইত্যাদি। এ ছাড়া দ্বৈত কণ্ঠে গেয়েছেন ‘আরে ও প্রাণের রাজা তুমি যে আমার’, ‘এ জীবন তোমাকে দিলাম তুমি শুধু ভালোবাসা দিও’। তিনি যখন গান পরিবেশন করেন, তখন মনে হয় যেন সুরের সঙ্গে মিশে যান। আর এই বৈশিষ্ট্যের কারণেই তাঁর প্রতিটি গান যেন দর্শকশ্রোতার হৃদয় স্পর্শ করে যায়। গানের বাইরে তিনি যখন কথা বলছিলেন, সেটাও ছিল আনন্দদায়ক ও উপভোগ্য। তবে এ ধরনের অনুষ্ঠানে দর্শক অন্যের গানের পাশাপাশি শিল্পীর নিজের গানও শুনতে চান।

হালকা ও চটুল গানের প্রতি রয়েছে সাব্বিরের বিশেষ পক্ষপাত। যেমন তিনি গেয়েছেন ‘ও গো বিদেশিনী তোমার চেরি ফুল দাও’, ‘সুখে থাকো ও আমার নন্দিনী’, ‘জীবনের এই যে রঙিন দিন’ ইত্যাদি। তাঁর গায়কি এবং পরিবেশনাও ছিল সাদামাটা। আমাদের মনে হয়েছে, সাময়িক জনপ্রিয়তার কথা না ভেবে চটুল গানের পাশাপাশি তাঁকে আরও গভীরতর সুর এবং বাণীসমৃদ্ধ গানেরও চর্চা করা উচিত। গানের অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করার ব্যাপারে আফরিন আঁখির আরও নিষ্ঠা ও দক্ষতা প্রয়োজন।

১৫ মার্চ সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে তুহিন হোসেনের পরিচালনায় মাছরাঙা টিভিতে প্রচারিত হলো টেলিছবি অপেক্ষায় থাকুন। অভিনয়ে তিশা, আফরান নিশো, অরণ্য আনোয়ার প্রমুখ। টেলিছবির গল্পটি সংক্ষেপে এ রকম—আফরান নিশো ও তিশা প্রেমিক-প্রেমিকা। নিশো চিত্রশিল্পী আর তিশা চাকরি করে নিশোর বাবার অফিসে। নিশোর বাবা বেশ পছন্দ করে তিশাকে। এ জন্য সে তিশাকে প্রশ্রয় দেয়, মাঝে মাঝে তাকে নিয়ে ঘুরেও বেড়ায়। নিশোর মা ও ছোট বোন তিশার সঙ্গে বাবার এ মেলামেশা নিয়ে সন্দেহ করে। বাবা বোঝে, কিন্তু কিছু বলে না। শেষে তিশার মামাকে নিয়ে সবার মাঝে বসে নাটকীয়ভাবে জানায়, সে গোড়া থেকেই তার ছেলে নিশোর জন্য নির্বাচন করেছে তিশাকে। তারপর দেখা যায়, একটি খোলা প্রান্তরে নিশো হাঁটু মুড়ে তিশাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভালোবাসার প্রস্তাব করছে এবং দুজন একে অপরকে জড়িয়ে ধরে এগিয়ে যাচ্ছে।

প্রথমেই বলব, নাম দেওয়া হয়েছে টেলিছবি অথচ সময়কাল ৪৫ মিনিট, এটা কেমন টেলিছবি হলো! এরপর যদি ছবির গল্প ও নির্মাণের কথা বলি, তিশার সঙ্গে বাবার সম্পর্ককে ঘিরে যে সন্দেহ দেখানো হয়েছে, তা বিশ্বস্ত ও বাস্তব করে তুলে ধরতে পারেননি নির্মাতা। মা–মেয়ের পিছু নেওয়ার দৃশ্যগুলো হাস্যকর মনে হয়েছে। সঠিক চরিত্রায়ণেও ছিল দুর্বলতা। বিশেষ করে, টেলিছবির অন্যতম প্রধান চরিত্র হওয়ার পরেও আরফান নিশোর চরিত্রটি একেবারেই বিকশিত হয়নি। তাঁর সরলতা ও অতিবোকামিকে ন্যাকামি মনে হয়েছে। তাঁর সংলাপ এবং অভিব্যক্তি মনে হয়েছে অবিশ্বস্ত ও অস্বাভাবিক। আর অপেক্ষায় থাকুন এটা কেমন নামকরণ হলো, বুঝলাম না। একটি টেলিছবি বা নাটক দর্শকমনে প্রথম আবেদন জাগায় তার নামকরণের মাধ্যমেই। অপেক্ষায় থাকুন নামটি কোনো আবেদনই জাগাতে পারেনি। যদিও টেলিছবিটি পুনঃ প্রচারিত হয়েছে।

১৭ মার্চ রাত ৮টা ১৫ মিনিটে আরটিভিতে প্রচারিত হলো এ সপ্তাহের নাটক কাগজের বাড়ি। রচনা ও পরিচালনা নাহিদ আহমেদ। অভিনয় করেছেন সুবর্ণা মুস্তাফা, ফারহানা মিঠু, আরমান পারভেজ মুরাদ, লুৎফর রহমান জর্জ, মজনুন মিজান, নাবিলা প্রমুখ।

নাটকের শুরুতেই ধনী ঘরের মেয়ে নাবিলা মাকে চিঠি লিখে পালিয়ে বিয়ে করে এক বেকার ছেলেকে। এ নিয়ে তার বাবা, মা, মামা ও বাবার বন্ধু উঠেপড়ে লাগে মেয়েকে উদ্ধার করার জন্য। বাবার বন্ধু ছেলের মামার ঠিকানা দিয়ে পাঠায় নাবিলার মামা মিজানকে। মিজান ছেলেটির মামার বাসায় গিয়ে তার ব্যতিক্রমী পেশা, জীবনযাপন, গান করা দেখেশুনে একটা গান রেকর্ড করে ফিরে আসে। এরপর নাবিলার বড় খালা সুবর্ণা সন্ধ্যাবেলা ফোন করে জানায়, নাবিলা তার বাসায়। সে ওদের বিয়ে দিয়েছে। ছেলেটি দরিদ্র হলেও ভালো। কাজেই কেউ যেন এটা নিয়ে আর কোনো উচ্চবাচ্য না করে। সব থেমে যায়। এরপর মিজান মোবাইলে রেকর্ড করা ছেলের মামার গান শোনালে নাবিলার মা উদাস ও বিষণ্ন হয়ে যায়। বোঝা যায়, সেই অচেনা লোকটি নাবিলার মায়ের প্রথম স্বামী। এই হলো নাটকের গল্প।

নাটকের কোনো একটি দিকও হৃদয় স্পর্শ করতে পারেনি। নাবিলা ও বাবা–মায়ের কোনো অন্তরঙ্গ সম্পর্কও দেখানো হয়নি, পারস্পরিক কোনো টানও দেখানো হয়নি। নাবিলা কেন ঘর ছাড়ল, ঘর ছাড়া একটি মেয়ের জন্য কত কষ্টের—এসব কোনো অন্তর্দ্বন্দ্বই ফুটিয়ে তুলতে পারেননি লেখক ও নির্মাতা। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, এত প্রভাবশালী খালা থাকতে নাবিলাকে ঘর ছাড়তে হলো কেন? খালা তো তার বাবা–মাকে বলেই বিয়ে দিতে পারত। গল্পকে হৃদয়গ্রাহী করতে হলে আগে–পিছে অনেক কিছু ভাবতে হয় নাট্যকার ও নির্মাতাকে।