'কাঁচা মরিচ দিয়ে মাছ রান্না, আহা!'

‘স্কুলে পড়ার সময় দাদাবাড়িতে গেলে চাচির হাতে কাঁচা মরিচ দিয়ে রান্না করা মাছের তরকারি খেতাম। এ যে অমৃত। খাওয়ার অনেকক্ষণ পরও মুখে স্বাদ লেগে থাকত। বহু বছর পর চাচির রান্না করা সেই মাছের তরকারি খেলাম। মন ভরে আর পেট পুরে খেলাম। আশপাশে আর কী তরকারি আছে, তার কথা মনেই ছিল না।’ বললেন জনপ্রিয় মডেল আদিল হোসেন নোবেল। ১৪ বছর পর এবার ঈদে দাদাবাড়িতে গিয়ে চাচির হাতের রান্নার স্বাদ নিলেন। ঢাকায় চলে এলেও সেই খাবারের কথা যেন ভুলতেই পারছেন না।
নোবেলের জন্ম চট্টগ্রামের চন্দ্রঘোনায়। বেড়ে ওঠা আর স্কুল ও কলেজের সময়টা কেটেছে সেখানেই। দাদাবাড়ি চট্টগ্রামের চকরিয়ায়। স্কুলে পড়ার সময় প্রতি কোরবানির ঈদে পরিবারের সবাই দল বেঁধে চকরিয়ায় দাদা বাড়ি বেড়াতে যেতেন। সে সময়গুলো জীবনের অন্যতম মধুর অধ্যায় হয়ে আছে তাঁর কাছে। বহু বছর পর এবার ঈদে গ্রামের বাড়িতে গেলে ওই সময়ের অনেক স্মৃতিকথা মনের দরজায় কড়া নেড়েছে। ঈদের পর ঢাকায় ফিরে তাঁর কিছু ধারণা নিজের ফেসবুকে দিয়েছেন। আত্মীয়স্বজন আর কাছের মানুষদের সঙ্গে মজার কিছু স্থিরচিত্রও পোস্ট করেছেন। ফেসবুকে নোবেল লিখেছেন, ‘এ এক ভিন্ন রকমের ঈদ, প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় পরে। পরিবারের সবাইকে নিয়ে অসাধারণ আনন্দের মুহূর্তগুলো পাড়ি দিয়ে আসা। গ্রামে গিয়ে স্বজনদের উল্লাসের মাঝে আমি বাকরুদ্ধ। শেষমেশ সমুদ্রসৈকতের ধারে গিয়ে মনে হলো, ঈদের আনন্দটা অনেক। এ এক অসাধারণ ঈদ আমার! এই আনন্দে সবচেয়ে বেশি মিস করেছি, আমার মেয়ে নামিরাকে।’

নোবেল শেষ কবে গ্রামের বাড়িতে গেছেন, তা সঠিক মনে নেই। তবে তাঁর স্ত্রীর মতে, ২০০৪ সালে শেষবারের মতো গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলেন তিনি। নোবেল বলেন, ‘ছোটবেলায় যখন গ্রামে যেতাম, তখন আমার চাচির কাঁচা মরিচের রান্না করা মাছ খেতাম। এমনিতে তো সবাই লাল মরিচ ছাড়া রান্না করে না, কিন্তু আমার ওই চাচি কাঁচা মরিচে রান্না করতেন। কাঁচা মরিচে বাটা মাছ রান্না তো ছিল অসাধারণ। এবার গ্রামের বাড়ি যাওয়ার আগে চাচাতো ভাইকে বলেছি, কাঁচা মরিচ দিয়ে চাচির হাত দিয়ে যেন বাটা মাছ বা কোরাল মাছ রান্না করতে। যাওয়ার পর তো এমন খাওয়া খেয়েছি, কিসের কোরবানি গরুর মাংস! বহু বছর বছর পর চাচির হাতে কাঁচা মরিচের রান্না খেলাম।’
গ্রামের বাড়িতে নোবেলকে কাছে পেয়ে সবাই খুব খুশি হয়েছেন। সবাই তাঁকে দেখতে এসেছেন। সবার ভালোবাসায় নোবেলও ছিলেন বেশ উচ্ছ্বসিত। বললেন, ‘সবচেয়ে ভালো লাগছে, গ্রামের আশপাশের কত মানুষ, এমনকি মসজিদের ইমাম সাহেবও আমাকে দেখতে আসেন। এরপর তিনি আমাকে মসজিদে নিয়ে গেছেন। বললেন, এই মসজিদের জন্য আপনারা কত কিছু করছেন, একসঙ্গে নামাজ পড়লাম। দাদা-দাদির কবর জিয়ারত করালেন। আমার ছেলের সামনে গ্রামের অনেক মুরুব্বি বললেন, আমি যখন ছোটবেলায় গ্রামে যেতাম, কী কী করতাম। এসব শুনে তিনি আর আমি মজা পেয়েছি। জীবনের এ এক অসাধারণ মুহূর্ত। যাদের জীবনে এই মুহূর্ত আসে না, সে কখনো বুঝতে পারবে না।’
ছোটবেলায় চট্টগ্রাম শহরে থাকতেন নোবেল। কোরবানির ঈদে মা-বাবার সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে চলে যেতেন। নোবেল বলেন, ‘দাদা গ্রামে থাকায় সব চাচা গাড়ি নিয়ে চলে যেতাম। ঈদের পরদিন শহরে আসতাম। এবার যাওয়ার পর সেসব স্মৃতি মনে পড়েছে।’

নোবেল এবার ঈদের আগেই স্ত্রী আর সন্তানকে নিয়ে চট্টগ্রামে উড়াল দেন। চট্টগ্রামের ওআর নিজাম রোডে বড় ভাইয়ের বাসায় ঈদ উদযাপন করেছেন। এবার তাঁর ছেলে আর পরিবারের অন্যদের সঙ্গে হাটে গিয়ে কোরবানির গরু কিনেছেন। পরদিন সকালে চকরিয়া যান। এবার গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার পর নোবেলের মধ্যে অন্য রকম উপলব্ধি হয়েছে। নোবেল বলেন, ‘আমার মনে হয়েছে, গ্রামের বাড়িতে আরও আগে যাওয়া উচিত ছিল। একটু কাছে যদি থাকতাম, তাহলে নিয়মিতই যেতাম। ঢাকায় থাকাতে সবকিছু সামলে যাওয়া বেশি টাফ হয়ে গেছে। এবার সবাই মিলে গ্রামের বাড়ি যাওয়াতে আব্বা বেশি খুশি হয়েছেন। সবার অনেক আদর পেলাম।’
নোবেল জানান, চকরিয়া থেকে তিনি পরদিন সকালে কক্সবাজার যান। দুপুরের পর চট্টগ্রাম ফিরে রাত ১০টায় পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন।