আজম বলেছিল, গান চালিয়ে যা

একসঙ্গে দুই বন্ধু ফেরদৌস ওয়াহিদ ও আজম খান। ছবি: সংগৃহীত
একসঙ্গে দুই বন্ধু ফেরদৌস ওয়াহিদ ও আজম খান। ছবি: সংগৃহীত
প্রয়াত হয়েছেন তিন ভুবনের তিন উজ্জ্বল নক্ষত্র—অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি, সংগীতশিল্পী আজম খান, অভিনেতা সালমান শাহ। না-ফেরার দেশে চলে যাওয়া এই তিন বন্ধুকে নিয়ে স্মৃতি হাতড়িয়েছেন তিন তারকা—আফজাল হোসেন, ফেরদৌস ওয়াহিদ ও মৌসুমী। ৬ আগস্ট বন্ধু দিবস উপলক্ষে আনন্দ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো তিন বন্ধুর স্মৃতি।

১৯৭৩ সাল হবে বোধ হয়। আমাদের বন্ধু ইশতিয়াক, ন্যারি, ইদুসহ বেশ কয়েকজন মিলে একটি ইংলিশ গানের দল করেছিলাম। হোটেল কন্টিনেন্টালে গান করতাম। একদিন ফিরোজ সাঁই এসে আমাকে বললেন, তাঁর পরিচিত একজন ছেলে আছে, নাম আজম খান। ভালো গান করেন। ইশতিয়াকদের বিষয়টি জানানো হলে তাঁরা বাংলা গানের সঙ্গে বাজাতে চাইলেন না। এর কয়েক দিন পর ফিরোজ সাঁই আজম খানকে নিয়ে এলেন আমার কাছে।

পরিচয়ের প্রথম দিনই আজম খানের গানে মুগ্ধ হলাম আমি। তখনই চিন্তা করলাম, তাঁর গান রেকর্ডিং করব। বন্ধু এনায়তুল্লা খানকে দিয়ে ইশতিয়াকদের রাজি করালাম।

গান রেকর্ডিং করতে গিয়ে মজার অভিজ্ঞতা হয়েছিল আমাদের। একদিন আমি, বন্ধু শামীম ও রুমি মিলে আড়াই শ টাকা দিয়ে ইন্দিরা রোডে অবস্থিত ঢাকা রেকর্ডিং স্টুডিওতে এক শিফট ভাড়া করলাম। ওখানে আজম খান গাইলেন ‘ওরে সালেকা ওরে মালেকা’ ও ‘হাইকোর্টের মাজারে’ এবং আমি গাইলাম ‘চাঁদ জাগে তারা জাগে’ ও ‘দুনিয়াটা কত যে মজার’—মোট চারটি গান। গান শোনার পর খুশি হয়ে স্টুডিওর মালিক আমাদের গানগুলো রেকর্ড আকারে বের করার দায়িত্ব নিলেন। গানগুলো সুপারভিশন করে দিলেন আজম খানের বড় ভাই আলম খান।

প্রথমে আজম খানের দুটি গান রেকর্ড আকারে বের হয়। শুরুতেই বাজিমাত করে আজম। বের হওয়ার কয়েক দিনের মাথায় দুটি গানই সুপারহিট। এরপর একসময় সবাই মিলে গঠন করলাম বাংলা পপ গানের ব্যান্ড ‘উচ্চারণ’।

এই হলো আমাদের আজম খান ও আমার গান-বিষয়ক সম্পর্ক। বন্ধুত্ব নিয়ে বলব, বন্ধু হিসেবে অসাধারণ ছিল আজম খান। অনেক মজার মানুষ। কোথাও শো করতে গেলে হাসাতে হাসাতে পেট ব্যথা করে দিত। একবার চট্টগ্রামে শো করতে গিয়ে মজার ঘটনা ঘটেছিল। শোর আগে আয়োজকেরা আমাদের ভাতের সঙ্গে শুধু ডাল ও আধা সেদ্ধ ডিম দিয়ে খেতে দিয়েছেন। অবস্থা দেখে আজম খান আমাকে চোখ টিপুনি দিয়ে বলল, ‘কি দোস্ত, কোথায় এলাম, কেমন লাগছে? আজ গান পেট দিয়ে বের হবে তো!’ ওর কথা শুনে হাসতে হাসতে আমার নাক-মুখ দিয়ে খাবার বের হওয়ার অবস্থা।

মারা যাওয়ার সপ্তাহখানেক আগে বন্ধু আজম খানের সঙ্গে শেষ কথা হয় আমার। সেদিন ও আমাকে বলল, ‘গানের মাঠের অবস্থা ভালো না। তুই অভিমান করে দূরে থাকিস না। গান চালিয়ে যা। আমি হয়তো আর ফিরতে পারব না।’ ওটাই ছিল আমার বন্ধুর সঙ্গে শেষ কথা! পরে যা হওয়ার, তা-ই তো হলো।

গ্রন্থনা: শফিক আল মামুন