'সবাই সার্থক নাট্যকার হতে পারেন না'

ফেরদৌসী মজুমদার
ফেরদৌসী মজুমদার
>

আবদুল্লাহ আল-মামুনের ৭৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে থিয়েটার আয়োজন করেছে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের। গতকাল ও আজ মিলিয়ে সেখানে তাঁর লেখা ও নির্দেশনায় নাটক মেরাজ ফকিরের মা-এর ২০০তম প্রদর্শনী হবে। টানা ২০০টি প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেছেন ফেরদৌসী মজুমদার। নাটক ও অন্যান্য বিষয়ে কথা হলো তাঁর সঙ্গে।

নাটকটির শুরুর দিকের স্মৃতিগুলো মনে পড়ে?

এই নাটকের পেছনে একটা ঘটনা আছে। তিনি (আবদুল্লাহ আল-মামুন) আমাদের দলের নাট্যকার, তবে অনেকের জন্যই লিখতেন। একদিন তিনি খুব বিষণ্ন। সবাই বলছে, ‘কী হয়েছে, স্যার?’ তিনি কিছু বলছেন না। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘আপনি এত বিষণ্ন হয়ে আছেন কেন, কী হয়েছে?’ তিনি বললেন, ‘একটা সংগঠনের জন্য এই নাটকটি লিখেছি। নাটকটির সবই তাদের পছন্দ, একটি জায়গায় সমস্যা। এর প্রধান চরিত্র মেরাজ ফকিরের মা হিন্দু। তাকে মুসলমান বানিয়ে দিতে হবে।’ এতেই তাঁর মন খুব খারাপ হয়েছে। কারণ, সাম্প্রদায়িকতা নিয়েই তিনি নাটকটি লিখেছিলেন। আমি বললাম, ‘আমরা করি তাহলে?’ আমি পাণ্ডুলিপিটা হাতে নিলাম। তিনি বললেন, ‘আপনি পড়ে দেখেন, আপনার যদি একটা সংলাপও খারাপ লাগে, বলবেন।’ পাণ্ডুলিপি খোলামাত্রই মেসেজ দেওয়ার মতো একটা সংলাপ দেখলাম। নাটকের মূল বক্তব্য—সবার ওপরে মা। সেই সংলাপে এটি প্রকাশ পেয়েছে। পরে দেখলাম, এটা আমারই সংলাপ। আমার ভীষণ ভালো লাগল। নাটকটির মেসেজগুলোর কথা মনে পড়ে। যে কারণে আজও মানুষ নাটকটি দেখে মুগ্ধ হয়ে কাঁদে-হাসে। কারণ, আবদুল্লাহ আল–মামুন নাটক লিখতেন বাস্তবতাকে ভিত্তি করে। আমার সৌভাগ্য ২০০তম শো করছি।

টানা ২০০তম শো করছেন! আপনার অনুপ্রেরণা কী?
বিধাতার আশীর্বাদ, একটি প্রদর্শনীও বাদ যায়নি। কারণ, আমি মনে হয় নাটককে অনেক ভালোবাসি। আমার এত লম্বা পথ পাড়ি দেওয়ার পেছনে তাঁরই (আবদুল্লাহ আল-মামুন) অবদান। নাট্যকার, নির্দেশক, উপদেষ্টা, যা-ই বলেন না কেন, সবকিছু তিনি। সে কারণে আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি, আনন্দে আপ্লুত হয়ে যাই। ২০০তম শো করতে পারছি। তাঁর সম্মান রেখেছি, মর্যাদা রেখেছি, তাঁর ইচ্ছা পূরণ করেছি।

ভালো নাট্যকার হচ্ছে না বলে শোনা যায়। আপনার মত কী?
অনেকে ভালো লিখছেন, কিন্তু জীবনঘেঁষা নাটক হচ্ছে না। এটা বিরাট ব্যাপার। নাটকে বিশেষ বক্তব্য না থাকলে, মানুষের মন স্পর্শ না করলে, সে নাটক যত সুন্দর হোক, সার্থক হয় না। নাট্যকার যে হননি তা নয়; অনেক নাট্যকার এসেছেন, ভালো লিখেছেন, কিন্তু মানুষের মনকে স্পর্শ করে না বলেই এমনটি হচ্ছে। তবে এটা তো স্বীকার করতেই হবে, সবাই সার্থক নাট্যকার হতে পারেন না। সার্থক নাট্যকার তখনই হন, যখন নাটক দর্শকের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়।

নিয়মিত অভিনয় করতে তরুণদের জন্য পরামর্শ কী?
খুব সাধারণ একটা কথা। আমার অভিজ্ঞতায় শেখা। যেকোনো কাজ যদি অন্তর থেকে ভালোবেসে করা যায়, সেটা থেকে সাফল্য অবশ্যই পাওয়া যায়। যদি কোনো উদ্দেশ্য থাকে, তবে সফল হওয়া যায় না।