তিনি ছিলেন 'গুপী গাইন-বাঘা বাইন'-এর আঁকিয়ে

রবীন্দ্র কৃষ্ণ পাল। ছবি: সংগৃহীত
রবীন্দ্র কৃষ্ণ পাল। ছবি: সংগৃহীত

একবার দুর্গাপূজার আগে মহালয়া অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে ১০০ ফুট বাই ৫ ফুটের বিশেষ প্যানেল এঁকেছিলেন তিনি, যা দেখতে কলকাতার ধর্মতলা অঞ্চলে কিলোমিটারব্যাপী মানুষের দাঁড়িয়ে থাকা বিশেষভাবে নজর কেড়েছিল। এখান থেকেই তিনি নজরে পড়ে যান বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের। তাঁর চলচ্চিত্র ‘গুপী গাইন–বাঘা বাইন’-এর জন্য ১২০ ফুট বাই ৫ ফুটের দুটি প্যানেল আঁকেন, যা চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত হয়েছে।

যাঁর কথা বলা হচ্ছে, তিনি ভারতের প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী রবীন্দ্রকৃষ্ণ পাল। গত শনিবার সকালে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর সময় তিনি রেখে গেলেন সহধর্মিণী পুতুল পাল এবং একমাত্র ছেলে নরেন্দ্রনাথ পালকে। প্রথম আলোকে তাঁর মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন ভারতের চিত্রশিল্পী ও শিল্প গবেষক অনিন্দ্য কান্তি বিশ্বাস।

রবীন্দ্রকৃষ্ণ পাল রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি পরীক্ষক হিসেবে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালনের করেছেন। পাশাপাশি জড়িত ছিলেন কলকাতার নেহরু চিলড্রেন মিউজিয়ামের সঙ্গে। প্রখ্যাত শিল্পী ও শিল্প ঐতিহাসিক শোভন সোম ও ভাস্কর অবতার সিং পানোয়ারের সহপাঠী ছিলেন তিনি।

রবীন্দ্রকৃষ্ণ পালের জন্ম ১৯৩১ সালের ২৯ নভেম্বর। তৎকালীন অবিভক্ত বাংলাদেশের বিক্রমপুর অঞ্চলের সিরাজদিখানের আবিরপাড়ায়। বাবা নিত্যানন্দ পাল এবং মা কুঞ্জ দাসী পালের চতুর্থ সন্তান তিনি। রাজদিয়া অভয় পাইলট স্কুলে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে চলে যান ভারতে। তিনি ভর্তি হন বর্তমানে ভারতের উত্তরবঙ্গ অঞ্চলের তুফানগঞ্জ নৃপেন্দ্র নারায়ণ মেমোরিয়াল হাইস্কুলে। সেখান থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করে ভর্তি হন শান্তিনিকেতনের কলাভবনে। তখনো অবশ্য বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি হয়নি। ১৯৪৯ সালে যখন তিনি কলাভবনের ছাত্র, তখন এর পরিচালক ছিলেন নন্দলাল বসু। সে সময় কলাভবনের অন্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে ছিলেন ধীরেন্দ্রকৃষ্ণ দেববর্মণ, রামকিঙ্কর বেইজ, বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়, বিনায়ক মাসোজী, বিশ্বরূপ বসু, প্রশান্ত রায়, রাধাচরণ বাগচী, গৌরীভঞ্জ, যমুনা সেন প্রমুখ। শিল্পী প্রশান্ত রায়ের কাছ থেকে ব্যক্তিগতভাবে জলরঙে ওয়াশ পদ্ধতিতে বিশেষ পাঠ নেন যুবক রবীন্দ্রকৃষ্ণ। ১৯৫৩ সালে কলাভবন থেকে পাস করে যোগ দেন ‘খাদি গ্রামোদ্যোগ’-এ। সেখানে তিনি ৩৩ বছর কাজ করেছেন।

ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে এবং ভারতের বাইরে বেশ কয়েকবার একক ও যৌথ প্রদর্শনী হয়েছে রবীন্দ্রকৃষ্ণ পালের ছবির। তাঁর অলংকরণের ওপর রচনা করা বইগুলোও সমাদৃত হয়েছে ভারতের বাইরেও।

রবীন্দ্রকৃষ্ণ পালের ছবির বিশেষ প্রদর্শনীটি হয় ২০১৫ সালের মার্চ মাসে দিল্লির ‘লোকাত’ আর্ট গ্যালারিতে। দারুণ সাড়া ফেলেছিল সেই প্রদর্শনী। ১৯৫১ থেকে শুরু করে ২০০৬ সাল পর্যন্ত আঁকা হাজারো ছবির মধ্য থেকে ৬৯টি ছবি বাছাই করে ‘রবীন্দ্রকৃষ্ণ পাল: রেট্রোস্পেকটিভ’ শিরোনামের এ প্রদর্শনীর কিউরেট করেছিলেন প্রখ্যাত শিল্পী ও শিল্প ঐতিহাসিক অনিন্দ্য কান্তি বিশ্বাস। তিনি বলেন, রবীন্দ্রকৃষ্ণ পালের ওয়াশ ও টেম্পেরা পদ্ধতিতে করা কাজগুলো পরবর্তী প্রজন্মের কাছে উল্লেখযোগ্য দলিল হয়ে থাকবে।