কর্মহীন সময়টা যেন দীর্ঘ না হয়

সালাহউদ্দিন লাভলু। ছবি: সংগৃহীত
সালাহউদ্দিন লাভলু। ছবি: সংগৃহীত

ক্ষমতা, অহংকার, অর্থসম্পদ যে কতটা অর্থহীন, তা বুঝিয়ে দিয়েছে অদৃশ্য ক্ষুদ্র এক ভাইরাস—করোনা। বিশ্ববাসীকে ঘরবন্দী হতে বাধ্য করেছে। অন্যান্য প্রাণিকুল এখন বাইরে নিরাপদ কিন্তু মানুষ এখন ঘরে নিরাপদ। এমনটা আমরা কখনো ভাবতে পেরেছি? এই কিছুদিন আগে, করোনাকালের আগে, প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠেই আমাদের যে ছোটাছুটি, রীতিমতো ঊর্ধ্বশ্বাসে ছোটা, কিসের যেন প্রতিযোগিতায় (শুধুই কি জীবনযাপনের প্রয়োজনে?) মত্ত হয়ে ছিলাম—সেটা যে কতটা অপ্রয়োজনীয়, সেটা বোঝার সময় এখন।

সুস্থ–স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার জন্য এত অর্থ, এত চাওয়া, এত লোভ যে অপ্রয়োজন—সেটা বোঝার সময় এখন। পৃথিবীর তাবৎ সৃষ্টিকুলের জন্যই প্রাকৃতিক ভারসাম্য প্রয়োজন, প্রকৃতি সুস্থ থাকলে সমগ্র সৃষ্টিকুল সুস্থ থাকবে—এই কথাগুলো বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞরা বারবারই বলে এসেছেন। আমরা কি সেটা অনুধাবন করেছি? করলেও কি আমরা সেভাবে আমাদের জীবন যাপন করেছি? প্রতিনিয়ত পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে, বনাঞ্চল ধ্বংস হচ্ছে, নদ–নদী মৃতপ্রায়। বাংলাদেশের ষড়ঋতু আর অনুধাবন করতে পারি না। এসবই মানুষের অতিরিক্ত লোভের পরিণাম।

সালাহউদ্দিন লাভলু। ছবি: সংগৃহীত
সালাহউদ্দিন লাভলু। ছবি: সংগৃহীত

আমরা যারা শিল্প–সাহিত্যে অঙ্গনে কাজ করি, আমরাও সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমরা মানুষের মনকে উৎফুল্ল রাখি, বিনোদিত করি, সুস্থ–সুন্দর থাকতেও সামাজিকভাবে সচেতন করি। পাশাপাশি দেশের প্রয়োজনে, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ও মানুষের প্রয়োজনে আমরা সব সময় এগিয়ে আসি। এই দুর্যোগেও আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তবে জনসমুক্ষে নয়। এবারের দুর্যোগে জনসমুক্ষে আসার সুযোগ নেই। সরকার–নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধিতেও জনসমাগম থেকে বিরত থাকতে হবে।

আমরা ঘরবন্দী হয়েও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমরা মানুষের পাশে আছি এবং মানুষের সচেতনতা সৃষ্টিতেও নানাভাবে কাজ করে যাচ্ছি। শিল্পীদের ফ্যান ফলোয়ার বেশি। সুতরাং এই মাধ্যমেও আমরা আমাদের ভূমিকা পালন করছি। টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিতে আমরা যারা কর্মরত, তাদের সংখ্যা পাঁচ হাজারের বেশি। শিল্পী–কলাকুশলীরাও এখন কর্মহীন। মার্চের ২০ তারিখ থেকে আমরা শুটিং বন্ধ ঘোষণা করেছি।

আমাদের বেশির ভাগ শিল্পী ও কুশলীরা স্বল্প আয়ের। ঈদের এই সময়টাতে, বিশেষ করে দুই ঈদকে কেন্দ্র করে অনেক নাটক, বিজ্ঞাপনচিত্র, নৃত্যানুষ্ঠান ও বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান নির্মিত হয়। মূলত আমাদের সারা বছর জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের একটি বিরাট অংশ উপার্জিত হয়ে থাকে এই দুই ঈদ থেকে। এই দুর্যোগকালীন সময়ে আমরা শুরু থেকেই আমাদের এই সহকর্মীদের পাশে থাকছি আমাদের সীমিত সাধ্য অনুযায়ী। যদিও সেটি প্রয়োজনের তুলনা অতি অপ্রতুল। কিন্তু এই কর্মহীন সময়টা দীর্ঘতর হলে মহা মুশকিলে পড়ে যাব সবাই। কর্মহীন সময়টা যেন দীর্ঘ না হয়, সে প্রত্যাশা।