এখনো তিনি বাংলা চলচ্চিত্রের মহানায়ক

চিরকালের মহানায়ক উত্তমকুমার। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে
চিরকালের মহানায়ক উত্তমকুমার। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

যাঁর মৃত্যুর পর ৪০ বছর পার হলো, তিনি এখনো থাকছেন আলোচনায়! এখনো তিনি বাংলা চলচ্চিত্রের মহানায়ক।

কীভাবে তা সম্ভব হলো?

পরিশ্রম, অধ্যবসায় আর নিষ্ঠাই তাঁকে মৃত্যুর পরও বাঁচিয়ে রেখেছে এত দিন। রাখবে আরও অনেক দিন।

থিয়েটার আর যাত্রায় অনুরক্ত ছেলেটির লোভ ছিল রুপালি পর্দার প্রতি। রুপালি পর্দায় তাঁর আবির্ভাব হলো ঠিকই, কিন্তু শুরুর দিকে তাঁকে ফাটা কপাল বলা না হলে সত্যের অপলাপ হবে। ‘মায়াডোর’ নামে একটি হিন্দি ছবিতে যখন সুযোগ পেলেন, তখনো কেউ জানত না একদিন এই ছেলে মাতিয়ে দেবেন সিনেমাজগৎ।

সে ছবিতে তিনি এক্সট্রা, সে ছবিতে তাঁর প্রতিদিনের আয় পাঁচ সিকে। এর চেয়েও ভয়াবহ সংবাদ হলো, সে ছবি মুক্তি পেল না কোনোকালে।

এরপর থেকে শুরু হলো দুর্ভাগ্যের কাল। ১৯৪৯ সালে মুক্তি পাওয়া ‘দৃষ্টিদান’-এ নায়কের অল্প বয়সের ভূমিকায় অভিনয় করলেন, ছবিটা সুপার ফ্লপ। ফ্লপের ধারাবাহিকতায় দেখা গেল যোগ হয়েছে ‘মর্যাদা’, ‘সহযাত্রী’ ও ‘নষ্টনীড়’। আড়ালে অরুণ কুমারের নাম তখন ফ্লপমাস্টার জেনারেল। এরই মধ্যে নাম বদলে হলেন অরূপ, এরপর হলেন উত্তম। কিন্তু ভাগ্যের শিকে তো আর ছেঁড়ে না। কলকাতার চলচ্চিত্রজগতে তিনি তখনো অপাঙ্‌ক্তেয়।

উত্তমকুমার আলোর দেখা পেলেন ১৯৫৩ সালে এসে
উত্তমকুমার আলোর দেখা পেলেন ১৯৫৩ সালে এসে

উত্তমকুমার আলোর দেখা পেলেন ১৯৫৩ সালে এসে। এ বছর ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর যেন পাল্টে গেল উত্তমের দুনিয়া। যদিও তুলসী চক্রবর্তী আর মলিনা দেবীর ওপরই ছিল মূল ফোকাস, কিন্তু উত্তম-সুচিত্রা জুটিকেও মনে ধরল দর্শকের। এর পর থেকেই উত্তমে কেন্দ্রীভূত হলো সিনেমাপ্রেমীদের দৃষ্টি।

পরের বছরই উত্তম অভিনীত ছবি দাঁড়াল ১৪টিতে। এর মধ্যে সুচিত্রা-উত্তম পর্দায় এলেন ৭টি ছবিতে। ‘দৃষ্টিদান’কে প্রথম ছবি ধরা হলে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত ৩৩ বছরে বাংলা-হিন্দি মিলিয়ে প্রায় আড়াই শ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন তিনি। উত্তম-সুচিত্রা ছবি করেছেন ৩১টি। যদিও সুচিত্রা-উত্তমের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েনের পর একটা সময় তাঁরা একসঙ্গে ছবি করা কমিয়ে দেন, কিন্তু এখন পর্যন্ত বাংলা চলচ্চিত্রে সুচিত্রা-উত্তমের মতো জনপ্রিয় জুটি আর হয়নি।

চিরকালের মহানায়ক উত্তমকুমার। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে
চিরকালের মহানায়ক উত্তমকুমার। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

সুচিত্রা ছাড়াও সুপ্রিয়া দেবী, মালা সিনহা, শর্মিলা ঠাকুর, মাধবী মুখোপাধ্যায়, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ ছিলেন উত্তম কুমারের নায়িকা। ষাট ও সত্তরের দশকে উত্তমের জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। আশির দশকেও তা ম্লান হয়নি। সত্যজিৎ রায় মূলত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজ করলেও ‘চিড়িয়াখানা’ আর ‘নায়ক’ ছবিতে তিনি বেছে নিয়েছিলেন উত্তমকে। ‘নায়ক’ ছবিতে উত্তমের অনবদ্য অভিনয়ের কথা অনেকেরই মনে থাকবে বহুদিন।

উত্তমের অভিনয়ে যে ঈর্ষণীয় সাবলীলতা ছিল, সেটাই তাঁকে বাঁচিয়ে রেখেছে, এ কথা বললে অত্যুক্তি হবে না। সেই সঙ্গে শুরুতেই পরিশ্রম, অধ্যবসায় আর নিষ্ঠার যে কথা বলা হয়েছিল, তার যোগফলেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন মহানায়ক।