মারা গেছেন বলিউড অভিনেতা ফারাজ খান

ফারাজ খান।
ছবি:ইনস্টাগ্রাম

একের পর এক শোকের খবর আসছে বলিউড থেকে। চলতি বছরে প্রয়াত হয়েছেন বেশ কয়েকজন তারকা। কেউ পরিণত বয়সে, কারও অকালমৃত্যু। এবার চলে যাওয়ার মিছিলে শামিল হলেন বলিউড অভিনেতা ফারাজ খান। বেশ কয়েক মাস ধরে অসুস্থ থাকার পর বুধবার সকালে বেঙ্গালুরুর একটি হাসপাতালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন এই অভিনেতা। বয়স হয়েছিল ৫০ বছর। ফারাজের মৃত্যুর খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রথম টুইট করেন পূজা ভাট। তিনি লিখেছেন, ‘সব লড়াই শেষ। আজ কর্মব্যস্ত সকালে ফারাজের যাত্রা শেষ হলো। যেখানেই থাকুন, প্রার্থনা—ভালো থাকুন। অভিনেতার সব অনুরাগীদের কাছে অনুরোধ, সবাই তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করুন। পাশে থাকুন পরিবারের। যাতে শেষযাত্রা যথাযথভাবে সম্পন্ন হয়।’

ফারাজ খান ‘মহাভারত’ সিরিয়ালের জনপ্রিয় অভিনেতা ইউসুফ খানের ছেলে।
ছবি:ইনস্টাগ্রাম

ফারাজ খান ‘মহাভারত’ সিরিয়ালের জনপ্রিয় অভিনেতা ইউসুফ খানের ছেলে। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার পর তাঁর দুটি ফুসফুসও সাংঘাতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। বাড়িতেই চিকিৎসা চলছিল। গেল মাসের শুরুতে মস্তিষ্কে সংক্রমণের জেরে সম্প্রতি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন ফারাজ খান। এরপরই তাঁকে বেঙ্গালুরুর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

হাসপাতালে ভর্তির পর ফারাজের শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হতে শুরু করে। এরপরই তাঁকে আইসিইউতে স্থানান্তরিত করা হয়। দীর্ঘদিন অভিনয় থেকে দূরে সরে যাওয়ায় আর্থিক সংকটে ভুগছিলেন এই অভিনেতা। ফারাজের চিকিৎসার জন্য অর্থ সংগ্রহের কাজ শুরু করে তাঁর পরিবার। ফারাজের চিকিৎসার জন্য তাঁর পরিবারের পাশাপাশি পূজা ভাটও ফারাজ খানের চিকিৎসার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসার বার্তা দেন। ফারাজ খানের চিকিৎসার জন্য যাতে প্রত্যেকে এগিয়ে আসেন, সে বিষয়ে টুইট করেন পূজা ভাট। সে সময় পূজা ভাটের টুইটের পর ফারাজ খানের পরিবারের পাশে দাঁড়ান সালমান খান। ফারাজের চিকিৎসার জন্য আর্থিক সাহায্য নিয়ে হাজির হন এই তারকা। তবে সব চেষ্টা ব্যর্থ করে বিদায় নেন ফারাজ।

১৯৯৮ সালের ‘মেহেন্দি’ ছবিতে ফারাজ অভিনয় করেন খলনায়কের ভূমিকায়।
ছবি:ইনস্টাগ্রাম

হুট করে বলিউডে আসেননি ফারাজ। বরং এ জগতে ছিল পারিবারিক ঐতিহ্য বা যোগাযোগ। বাবা ইউসুফ খান ছিলেন নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয় অভিনেতা। ‘অমর আকবর অ্যান্থনি’, ‘ধর্মাত্মা’, ‘ডন’, ‘কর্জ’সহ বহু ছবিতে অভিনয় করেছিলেন ইউসুফ। ছেলে ফারাজের অভিনয়জীবন শুরু হওয়ার আগেই ১৯৮৫ সালে মারা যান ইউসুফ।

নব্বইয়ের দশকে কিছু নায়ক এসে তাঁদের ‘চকলেট বয়’ ইমেজ দিয়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন, ফারাজ তাঁদের মধ্যে একজন। ১৯৯৬ সালে ‘ফারিব’-এ প্রথম ফারাজকে দেখা যায় নায়ক হিসেবে। বিক্রম ভাটের পরিচালনায় ছবিতে নায়িকা ছিলেন সুমন রঙ্গনাথন। বক্স অফিসে হিট হয়েছিল ‘ফারিব’। ছবির গান মানুষের মুখে মুখে ঘুরত।

নব্বইয়ের দশকে কিছু নায়ক এসে তাঁদের ‘চকলেট বয়’ ইমেজ দিয়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন, ফারাজ তাঁদের মধ্যে একজন।
ছবি:ইনস্টাগ্রাম

আজও এই ছবির গান বেশ জনপ্রিয়। দ্বিতীয় ছবি ছিল ‘পৃথ্বী’। সুনীল শেঠি, শিল্পা শেঠির সঙ্গে তিনি এই ছবিতে পর্দা ভাগাভাগি করেছিলেন। ১৯৯৮ সালের ‘মেহেন্দি’ ছবিতে ফারাজ অভিনয় করেন খলনায়কের ভূমিকায়। ছবির নায়িকা ছিলেন রানী মুখার্জি। পরে রানী ফারাজকে ছাপিয়ে অনেক দূর পাড়ি দেন ক্যারিয়ারে। রাজ কাপুরের ‘রাম তেরি গঙ্গা মেলী’-র রিমেক ‘দুলহান বানু ম্যায় তেরি’ মুক্তি পেয়েছিল ১৯৯৯ সালে। ছবিতে ফারাজের নায়িকা ছিলেন দীপ্তি ভাটনগর। এই ছবিতেও ফারাজের অভিনয় প্রশংসিত হয়। এরপর ‘দিল নে ফির ইয়াদ কিয়া’, ‘চাঁদ বুঝ গ্যায়া’সহ কিছু ছবিতে অভিনয় করেন ফরাজ। কিন্তু ছবিগুলো সাড়া জাগাতে পারেনি। বড় পর্দায় সুবিধা না করতে পেরে ফারাজ চলে আসেন ছোট পর্দায়। ১৯৯৭ থেকে ২০০৮ সাল অবধি বেশ কিছু সিরিয়ালে অভিনয় করেন তিনি। কিন্তু সেখানেও এবার ধীরে ধীরে সুযোগ আসা বন্ধ হয়ে যায়।

তবে ফারাজ খানের ক্যারিয়ার শুরু হওয়ার কথা ছিল অন্যভাবে। ১৯৮৯ সালে ‘ম্যায়নে প্যায়ার কিয়া’ ছবিতে সালমানের বদলে অভিনয় করার কথা ছিল ফারাজের। কিন্তু শুটিং শুরুর কয়েক দিন আগেই ফারাজ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাধ্য হয়ে প্রযোজক-পরিচালক এই ছবি থেকে বাদ দেন তাঁকে। ‘ম্যায়নে প্যায়ার কিয়া’য় অভিনয় করে রাতারাতি সুপারস্টার হয়ে যান সালমান। হয়তো এই ছবি দিয়ে নায়কজীবন শুরু করলে ফারাজের জীবন অন্য রকম হতো।

১৯৮৯ সালে ‘ম্যায়নে প্যায়ার কিয়া’ ছবিতে সালমানের বদলে অভিনয় করার কথা ছিল ফারাজের।
ছবি:ইনস্টাগ্রাম