পুলিশের দাবি, সাইফের ওপর হামলাকারী বাংলাদেশে কুস্তি লড়তেন, অভিযুক্তের আইনজীবী বললেন ভিন্ন কথা

ওয়াগবিল এলাকা থেকে হামলাকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কোলাজ

প্রায় ৭০ ঘণ্টা চোর-পুলিশ খেলার পর অবশেষে পুলিশ ধরেছে সাইফ আলী খানের হামলাকারীকে। গত রোববার সাতসকালে পুলিশ মুম্বাইয়ের ৩৫ কিলোমিটার দূরে থানে ওয়াগবিল এলাকা থেকে হামলাকারীকে গ্রেপ্তার করেছে। ৩০ বছর বয়সী অভিযুক্তের নাম মুহাম্মদ শরিফুল ইসলাম শেহজাদ। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে যে সাইফের ওপর হামলাকারী ভারতীয় নাগরিক নন। অভিযুক্ত ব্যক্তির থেকে পাওয়া পরিচয়পত্র অনুযায়ী পুলিশ জানতে পেরেছে গ্রেপ্তার করা ব্যক্তি বাংলাদেশি। শরিফুলের কাছ থেকে আরও অনেক তথ্য বের করেছে বান্দ্রা পুলিশ।

সাইফ আলী খান। এএনআই

পুলিশ সূত্র বলছে, ৩০ বছর বয়সী শরিফুল তাঁদের জানিয়েছেন যে ভারতে আসার আগে তিনি বাংলাদেশে কুস্তি করতেন। তাঁর দাবি, জেলা ও জাতীয় স্তরের কুস্তি চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিয়েছেন তিনি। কুস্তিবিদ বলেই সাইফকে আক্রমণের সময় তাঁর গায়ে এতটুকু আঁচড় লাগেনি বলে অভিযুক্ত দাবি করেছেন। গত আগস্টে মুম্বাইয়ে এসেছেন অভিযুক্ত। তারপর থেকে ভারতে নানা জায়গায় কাজ করেছেন শরিফুল।
সবচেয়ে বড় প্রশ্ন ছিল সাইফ-কারিনার বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টে নিরাপত্তাব্যবস্থা বেশ কঠোর। বায়োমেট্রিক ছাড়া তাঁদের ফ্ল্যাটে প্রবেশ করা সম্ভব নয়। কঠোর নিরাপত্তাবেষ্টনী পার করে একজন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি কীভাবে এই বিটাউন তারকার অন্দরমহলে প্রবেশ করলেন, সেটাই ছিল লাখ টাকার প্রশ্ন।

আরও পড়ুন
কারিনা কাপুর খান ও সাইফ আলী খান। এএনআই

জানা গেছে, অভিযুক্ত প্রথম আটতলা পর্যন্ত সিঁড়ি দিয়ে উঠেছিলেন। এরপর ডাক্ট এরিয়া দিয়ে পাইপ বেয়ে উঠে ১৩ তলা পৌঁছে গিয়েছিলেন। এরপর বাথরুমের কাচ ভেঙে তৈমুর-জেহর বেডরুমে পৌঁছে গিয়েছিলেন সেই ব্যক্তি। অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে দেখে ভয়ে চিৎকার করে উঠেছিলেন সাইফ-কারিনার বাসার পরিচারিকা। এরপরই সাইফের ওপর হামলার ঘটনাটি ঘটেছিল। জানা গেছে, এ ঘটনা ঘটার পর সকাল সাতটা পর্যন্ত তিনি আশপাশেই ছিলেন। একদিকে আক্রমণকারীকে ধরার জন্য পুলিশ চিরুনি তল্লাশি চালাচ্ছিল। আর এদিকে হামলাকারী বান্দ্রার পটপবর্ধন এলাকার এক বাসস্টপে পরম নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছিলেন। এরপর দাদার, ওয়ার্লি, আন্ধেরি হয়ে থানেতে গিয়েছিলেন অভিযুক্ত শরিফুল। এরপর থানে থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তাঁকে। মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে পরোটা, ডিম আর পানির বোতল কিনেছিলেন অভিযুক্ত।

আরও পড়ুন
সাইফ আলী খান

ইউনিফাইড পেমেন্ট ইন্টারফেস বা ইউপিআই লেনদেন সূত্রে পুলিশ তাঁর খোঁজ পায়।
পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর অভিযুক্ত নিজের নাম কখনো বিজয় দাস, আবার কখনো মুহাম্মদ ইলিয়াস বলে জানিয়েছেন। পরে পুলিশ জানতে পেরেছে হামলাকারীর আসল নাম মুহম্মদ শরিফুল ইসলাম শেহজাদ। আর তিনি বাংলাদেশ নিবাসী। পুলিশি জেরায় উঠে এসেছে যে শরিফুল শিলিগুড়ি সীমানা দিয়ে ভারতে এসে মুম্বাইয়ে এসেছেন। গত আগস্ট থেকে মুম্বাইয়ে আছেন অভিযুক্ত। থানে থেকে গ্রেপ্তারের পর তাঁকে বান্দ্রা আদালতে পেশ করা হয়েছিল। পুলিশ অভিযুক্ত ব্যক্তির ১৪ দিনের রিমান্ডের জন্য আদালতের কাছে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড দিয়েছেন। ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত অভিযুক্ত ব্যক্তি পুলিশ হেফাজতে থাকবেন। রোববার রাত ১১ নাগাদ শরিফুলকে বান্দ্রা পুলিশ স্টেশন থেকে সান্তাক্রুজ লকআপে রাখা হয়েছিল। সোমবার সকাল সাতটা নাগাদ আবার তাঁকে বান্দ্রা পুলিশ স্টেশনে নিয়ে আসা হয়েছে। গতকাল সারা দিন পুলিশি জেরা চলেছিল।

থানে থেকে গ্রেপ্তারের পর তাঁকে বান্দ্রা আদালতে পেশ করা হয়েছিল। এএনআই

যদিও মুহাম্মদ শরিফুলের আইনজীবী সন্দীপ শেখানে বলেছেন, অভিযুক্ত যে বাংলাদেশি, তার কোনো প্রমাণ নেই। পুলিশের দাবি যে অভিযুক্ত ছয় মাস আগে মুম্বাইতে এসেছেন। এদিকে অভিযুক্ত ব্যক্তির আইনজীবীর দাবি, শেহজাদ সাত বছর ধরে পরিবারের সঙ্গে মুম্বাইতে আছেন। সন্দীপ শেখানে আরও বলেছেন, অভিযুক্তের নাগরিকত্ব বদল করে পুলিশ এ মামলার ফোকাস ঘোরাতে চাইছে। তাঁর দাবি, শরিফুলের কাছ থেকে পুলিশ কোনো কিছু উদ্ধার করতে পারেনি।

আরও পড়ুন

জানা গেছে, সাইফ আলী খান এখন অনেকটাই সুস্থ। গতকাল অর্থাৎ সোমবার তাঁকে ডিসচার্জ করার কথা ছিল। কিন্তু গতকাল হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাননি সাইফ। সম্ভবত আজ অথবা কাল এই বলিউড তারকাকে ডিসচার্জ করা হবে। চিকিৎসক নিতিন ডাঙ্গে জানিয়েছেন যে সাইফের এখন কোনো চিকিৎসা চলছে না। তাঁকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে রাখা হয়েছে।