এই পরিচালকদের ওপর আস্থা না রাখাই কি হিন্দি সিনেমা ফ্লপ হওয়ার কারণ
দক্ষিণ ভারতের সিনেমার দাপট, দর্শকের মনমতো গল্প না থাকাসহ হিন্দি সিনেমার ব্যর্থতার কারণ হিসেবে অনেক কিছুকেই দাঁড় করানো হয়েছে। তবে ভারতীয় গণমাধ্যম পিংকভিলা মনে করে, বক্স অফিসে সাফল্য এনে দেওয়া পরিচালকদের ওপর আস্থা না রাখাও হিন্দি সিনেমার সাম্প্রতিক ব্যর্থতার বড় কারণ।
গত বছর দেড়েকের মধ্যে মুক্তি পাওয়া হিন্দি সিনেমাগুলোর মধ্যে হিট তকমা পেয়েছে কেবল ‘সূর্যবংশী’, ‘গাঙ্গুবাই কাঠিয়াবাড়ি’, ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’, ‘ভুল ভুলাইয়া ২’ ও ‘ব্রহ্মাস্ত্র’। এ ছাড়া ‘যুগ যুগ জিয়ো’ মোটামুটি ব্যবসা করেছে। গত সপ্তাহে মুক্তি পাওয়া ‘উঁচাই’ও ভালো করছে।
হিট ছবিগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, এসব সিনেমার পরিচালকদের বেশির ভাগকেই প্রযোজক পেতে এখনো সংগ্রাম করতে হয়। প্রযোজকেরা তো বটেই, বড় স্টুডিও, পরিবেশকদের কাছ থেকেও বিমাতাসুলভ আচরণ পান তাঁরা।
গত এক–দেড় বছরে বলিউডকে যেসব পরিচালক ব্যবসা দিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে আছেন সঞ্জয় লীলা বানসালি, বিবেক অগ্নিহোত্রী, আনিস বাজমি, রোহিত শেঠি, সুরজ বরজাতিয়া, অয়ন মুখোপাধ্যায়রা।
চলতি বছর আনিস আজমির ‘ভুল ভুলাইয়া ২’ সুপারহিট ব্যবসা করেছে, সুরজ বরজাতিয়ার ‘উঁচাই’ও হিট হওয়ার পথে। কিন্তু ২০২২ সাল শুরুর আগে বেশির ভাগ গণমাধ্যমের করা বছরের সম্ভাব্য হিট তালিকায় দুই ছবির কোনোটিরই নাম ছিল না। এমনকি এই দুই পরিচালকের সিনেমা যে মুক্তি পাবে, সেটিও জানতেন না অনেক দর্শক। এই দুই পরিচালকের ওপর বড় সংস্থাগুলো সেভাবে আস্থা রাখতে পারেনি।
অন্যদিকে রোহিত শেঠি ও সঞ্জয় লীলা বানসালি পরপর হিট দিয়ে গেলেও তাঁদের নিয়ে আলোচনা হয় কমই। পিংকভিলার দাবি, এ দুজনকেও নিজের মনমতো ছবি বানাতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়।
একইভাবে বলা যায়, আব্বাস–মাস্তানের কথাও। ২০১৭ সালে সর্বশেষ ছবি বানিয়েছিলেন একসময়ে একের পর এক হিট উপহার দেওয়া এই পরিচালক জুটি। কিন্তু নিয়মিত সিনেমা বানাতে আগ্রহী হলেও সুযোগ পাচ্ছেন না। দুই পরিচালকের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র দাবি করে, হিন্দি সিনেমার অনেক প্রযোজকই মনে করেন, এই সময়ের বলিউডে যেসব ছবি হয়, সে ধরনের সিনেমা করার দক্ষতা আব্বাস-মাস্তানের নেই।
সুযোগ না পাওয়া পরিচালকদের তালিকায় উঠে এসেছে ফারাহ খানের নামও। তাঁর সর্বশেষ ছবি ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ সুপারহিট হওয়ার পরও কেন আর সিনেমা বানাচ্ছেন না তিনি? এখানেও একই কথা—বলিউড পাড়ার অনেকে মনে করেন, ফারাহ খান যে ধরনের সিনেমা করেন, সে ধরনের সিনেমা এখন চলবে না। তিনি বড় তারকাদের নিয়ে ছবি নির্মাণ করেন, বাজেটও বেশি হয়। ফলে তাঁর ছবি ফ্লপ করলে প্রযোজকের বড় ক্ষতি। সে কারণে ফারাহকে নিয়ে ঝুঁকি নিতে চাইছে না কেউ।
কিছুদিন আগে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নির্মাতা অনুরাগ কশ্যপ বলেছিলেন, বলিউড ছবি নিজের শিকড় থেকে সরে গেছে। এখনকার নির্মাতাদের প্রায় কেউই হিন্দি বলতে পারেন না, অথচ তাঁরা হিন্দি ছবি করছেন। ফলে তাঁরা কেবল মুম্বাইয়ের মতো শহরের দর্শকের কথা মাথায় রেখে সিনেমা করছেন। সে কারণে সিনেমাগুলো প্রত্যাশামতো ব্যবসা করতে পারছে না।
বারবার ব্যবসাসফল ছবি উপহার দেওয়া এসব পরিচালককে সুযোগ দেওয়া হলে হয়তো হিন্দি সিনেমার চিত্র বদলে যেতে পারে।