‘পরিবারকে সময় দিতে পারি বলেই কাজেও মনোযোগ দিতে পারি’
চার বছরের বিরতির পর অ্যামাজন প্রাইম ভিডিওর বহুল আলোচিত ওয়েব সিরিজ ‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান’-এর তৃতীয় মৌসুম ফিরেছে স্বমহিমায়। আবারও শ্রীকান্ত তিওয়ারি হয়ে পর্দায় হাজির হয়েছেন মনোজ বাজপেয়ী। মুক্তির আগে নতুন সিজন, প্রস্তুতি, উদ্বেগ, বদলে যাওয়া শ্রীকান্ত এবং বাস্তব জীবনের ‘ফ্যামিলি ম্যান’ হিসেবে নিজের অভিজ্ঞতা—সব মিলিয়ে নানা প্রসঙ্গে কথা বললেন এই অভিনেতা। মুম্বাইয়ের এক পাঁচতারা হোটেলে প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধির সঙ্গে এই আড্ডায় উপস্থিত ছিলেন আরও দুই সাংবাদিক।
আড্ডার শুরুতেই মনোজ জানালেন, তৃতীয় মৌসুমের যাত্রা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বড় ও ঝুঁকিপূর্ণ। তাঁর ভাষায়, ‘এবারের অভিযানটা ভীষণ রোমাঞ্চকর। স্কেল অনেক বড়, তাই চ্যালেঞ্জও বেশি। শত্রুরাও আরও ভয়ংকর। জয়দীপ অহলাওয়াত ও নিমরাত কাউরের মতো শিল্পীরা যুক্ত হওয়ায় শুরু থেকেই বুঝছিলাম—এটা হালকা কিছু হচ্ছে না। শ্রীকান্ত তিওয়ারি এবার আরও গভীরতা আর নতুন লড়াই নিয়ে ফিরেছে।’
ওটিটি হোক বা বড় পর্দা—গভীর ও প্রভাবশালী চরিত্রে মনোজ বাজপেয়ীর দাপট বরাবরই চোখে পড়ার মতো। তবু তিনি অকপটে স্বীকার করলেন, অভিনেতা হিসেবে তিনি স্বভাবতই নার্ভাস। আজও নতুন কোনো কাজের শুটিং শুরুর আগে উৎকণ্ঠায় তাঁর ঘুম আসে না। চিত্রনাট্য হাতে না পাওয়া পর্যন্ত অস্থির থাকেন। হালকা হাসি দিয়ে বললেন, ‘স্ক্রিপ্ট হাতে পেলেই পড়ে ফেলি। তারপর পরিচালকের সঙ্গে আলোচনা শুরু করি। সেই আলোচনা শুটিং শেষ না হওয়া পর্যন্ত চলতেই থাকে। “দ্য ফ্যামিলি ম্যান ৩”-এর শুরুর ১০–১৫ দিন বেশ চাপের মধ্যেই কেটেছে, পরে ধীরে ধীরে ছন্দে ফিরেছি।’
নতুন মৌসুমে শ্রীকান্তের লড়াইটাও যে একেবারেই আলাদা, তা স্পষ্ট করে জানালেন মনোজ। তাঁর কথায়, ‘এবার শুধু শ্রীকান্তের নয়, পুরো পরিবারের লড়াই। এটা টিকে থাকার যুদ্ধ। নিজের জীবন, পরিবারের নিরাপত্তা, সামাজিক ইমেজ—সবকিছু বাঁচানোর চেষ্টা। সন্তানরা বড় হয়েছে, পারিবারিক সমীকরণ বদলেছে, দাম্পত্যেও টানাপোড়েন এসেছে। তবে শ্রীকান্ত মানুষ হিসেবে আগের মতোই আছে। বদলেছে পরিস্থিতি। আর একটা সম্পর্ক আছে, যেটা একেবারেই অটুট—শ্রীকান্ত আর জেকের (শারিব হাশমি) বন্ধুত্ব। বরং এবার সেটা আরও গাঢ় হয়েছে।’
‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান’ অনেকটাই ভারতীয় বিনোদন দুনিয়ার ভাষা বদলে দিয়েছে। সিরিজটিকে ‘গেমচেঞ্জার’ বলা যায় কি না—প্রশ্নে দ্বিধাহীন মনোজ। মাথা নেড়ে বললেন, ‘নিশ্চয়ই। এই সিরিজ ওটিটির ধারণাটাকেই পাল্টে দিয়েছে। দর্শককে বুঝিয়েছে—থিয়েটারের বাইরেও বিশাল এক মাধ্যম আছে। দ্বিতীয় সিজন তো আরও বড় আলোড়ন তুলেছিল। আমার মনে হয়, এই শো আমাদের দেশে বিনোদনের সংজ্ঞাই বদলে দিয়েছে।’
নিজেকে বারবার ভাঙতে আর নতুনভাবে গড়ে তুলতে ভালোবাসেন মনোজ বাজপেয়ী। একই ইমেজে আটকে থাকার সমর্থক নন তিনি। দীর্ঘ অভিনয়জীবনের পরও নতুন করে কী তাঁকে অনুপ্রাণিত করে—প্রশ্নের উত্তরে বললেন, ‘অভিনয় আমার পেশা নয়, অভিনয় আমার আবেগ। নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের কাজ আমাকে খুব অনুপ্রাণিত করে। এই সিজনে জয়দীপ অহলাওয়াত, নিমরাত কাউর—সবাই দুর্দান্ত কাজ করেছে। ওদের সঙ্গে কাজ করেই আমি নিজে আরও তাগিদ অনুভব করি। আর রাজ–ডিকের সঙ্গে কাজ করলে সব সময়ই একটা আপন ঘরের অনুভূতি পাই।’
সিরিজের নামেই পরিবার—তাই বাস্তব জীবনের ‘ফ্যামিলি’ প্রসঙ্গও এল আলোচনায়। হেসে মনোজ বললেন, সিরিজে তিনি বস হলেও বাস্তব জীবনে মোটেও তা নন। ‘বাড়িতে আমার মেয়েই আসল বস। ও ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে, আর আমাকে নানা কিছু শেখাচ্ছে। আমার ফ্যাশন থেকে হাঁটাচলা—সব ওই ঠিক করে দেয়। ইংরেজির ভুল ধরিয়ে দেয়। আমি ওকে হিন্দি শেখানোর চেষ্টা করি, যদিও ও খুব একটা আগ্রহ দেখায় না। বলা যায়, বাবা-মেয়ের মধ্যে ভাষা বিনিময় চলছে।’
শেষ প্রশ্নে উঠে এল চিরাচরিত দ্বন্দ্ব—পরিবার না কাজ। শ্রীকান্তের মতো বাস্তব জীবনেও কি কখনো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে? মনোজের উত্তর স্পষ্ট, ‘আমার ক্ষেত্রে পরিবার আর কাজ কখনো একে অন্যের প্রতিবন্ধক হয়নি। এর পুরো কৃতিত্ব আমার স্ত্রীর। যখনই পরিবার আমাকে চেয়েছে, আর আমি যদি ফাঁকা থেকেছি, সময় দেওয়ার চেষ্টা করেছি। পরিবারকে সময় দিতে পারি বলেই আমি মন দিয়ে কাজটা করতে পারি।’