৫০০ সিনেমা করেও মানবেতর জীবনযাপন ‘মুঘল-ই-আজম’ অভিনেতার

মুরাদ। আইএমডিবি

পঞ্চাশের দশকের জনপ্রিয় অভিনেতা মুরাদের জীবনের শেষটা ছিল বিয়োগান্ত। ৫০০টির বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করা সত্ত্বেও, নিজের একটি বাড়ি কিংবা গাড়িও কখনো কেনা হয়ে ওঠেনি তাঁর। বলিউডের এমন অনেক শিল্পীর গল্পই রয়েছে, যাঁরা জীবনের শেষভাগে এসে পড়েছেন আর্থিক টানাপোড়েনে।
সম্প্রতি ইউটিউব চ্যানেল ‘ফিল্মি চর্চা’তে এক সাক্ষাৎকারে এ প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন মুরাদের ছেলে অভিনেতা রাজা মুরাদ। তিনি বলেন, ‘আমি দারিদ্র্য দেখেছি, কষ্টের দিন দেখেছি। আমাদের ভোপালের বাসায় বিদ্যুৎও ছিল না। পরীক্ষা দেওয়ার সময় আমি রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের নিচে বসে পড়তাম। রাত ১২টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত পড়াশোনা করতাম।’

রাজা মুরাদ আরও বলেন, ‘বলিউডের অনেক পুরোনো দিনের অভিনেতা শেষ জীবনে আর্থিক কষ্টে ভুগেছেন, কিন্তু এর জন্য তাঁরাই দায়ী। টাকা উপার্জনের সময় ভবিষ্যতের কথা ভাবা উচিত ছিল। আমাদের ইন্ডাস্ট্রির টেকনিশিয়ানরাও নিজেদের বাড়ি বানিয়ে নিয়েছে। তারা জানে, যেকোনো সময় কাজ বন্ধ হয়ে যেতে পারে, শরীর খারাপ হতে পারে। তাহলে কেন আর কারও দ্বারে গিয়ে হাত পাততে হবে?’

বাবার কোলে রাজা মুরাদ। এক্স থেকে

রাজা মুরাদ আরও বলেন, ‘অনেক নামকরা অভিনেতা ছিলেন, যাঁরা একসময় খুব ব্যস্ত ছিলেন। প্রচুর টাকা ও খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। কিন্তু সবই খরচ করে ফেলেছিলেন। বৃদ্ধ বয়সে এসে তাঁরা ভাড়া বাড়িতে থাকতে বাধ্য হন। অথচ একটা সময় রাজকীয় বাংলোয় থাকতেন। আমি তাঁদের অটোতে ঘুরতে দেখেছি।’

এরপর নিজের বাবার উদাহরণ দিয়ে রাজা মুরাদ বলেন, ‘অনেকেই ভবিষ্যতের কথা ভাবেননি। ৫০-৬০-এর দশকের অনেক জনপ্রিয় অভিনেতা ছিলেন, যাঁরা চরম আর্থিক সংকটে পড়েছিলেন। আমার বাবা মুরাদও ছিলেন তাঁদের একজন। তিনি ৫০০টির বেশি ছবিতে কাজ করেছিলেন। কিন্তু আমাদের কখনো একটি গাড়িও ছিল না, ভাড়া বাড়িতেই জীবন কেটেছে। রীতিমতো মানবেতর জীবন যাপন করতেন। আমি নিজে যখন প্রতিষ্ঠিত হই, প্রথমেই একটি বাড়ি কিনেছিলাম। জীবনে কী করা উচিত নয়, সেটাও আমরা শিখি আমাদের পূর্বসূরিদের কাছ থেকে। আমি আমার বাবাকে অসম্মান করতে চাই না—তিনি যেভাবে চাইতেন, সেভাবেই জীবন কাটিয়েছেন। তবে আমি সময়মতো নিজের জায়গা তৈরি করে নিতে পেরেছি।’
এর আগে আরেক সাক্ষাৎকারে রাজা বলেছিলেন, ‘আমরা যখন ছোট, তখন গাড়ি ছিল না। আমি বাসে কিংবা ট্রেনে যাতায়াত করতাম।’

মুরাদ ১৯৩৮ সালে মুম্বাইয়ে চলে আসেন। কারণ, তখন তাঁর সামনে আর কোনো বিকল্প ছিল না। রামপুরের নবাব রাজা আলী খানের সঙ্গে এক তর্কাতর্কির জেরে তাঁকে শহর ছাড়তে হয়। মাত্র ২৪ ঘণ্টার সময়সীমা দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। শুরুতে লেখক হতে চেয়েছিলেন মুরাদ, কিন্তু পরিচালক মেহবুব খান তাঁকে অভিনয়ের সুযোগ দেন। পরে তিনি ‘দো বিঘা জমিন’, ‘আন্দাজ’, ‘মুঘল-ই-আজম’-এর মতো অসাধারণ সব ছবিতে অভিনয় করেন। এমনকি হলিউডের ‘টারজান গোজ টু ইন্ডিয়া’ ছবিতেও তাঁকে দেখা গিয়েছিল।

আরও পড়ুন

মুরাদ প্রায় ৩০০ ছবিতে বিচারকের চরিত্রে অভিনয় করেছেন—এ সংখ্যাটিও একরকম রেকর্ড। ১৯৯৭ সালে ৮৫ বছর বয়সে মুম্বাইয়ে তাঁর মৃত্যু হয়।

তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস