পাঁচ বিয়ে তবু নিঃসঙ্গ মৃত্যু হয় জনপ্রিয় এই খলনায়কের
১৯৮২ সালে ‘সনম তেরি কসম’ ছবির টাইটেল গানে ব্যাকগ্রাউন্ড ড্যান্সার হিসেবে বলিউডে পা রাখেন মহেশ আনন্দ। কমল হাসান ও রিনা রায় অভিনীত সেই ছবিতে নেপথ্য নৃত্যশিল্পী হিসেবে তাঁর যাত্রা শুরু হলেও, ১৯৮৪ সালে ‘কারিশমা’ ছবির মাধ্যমে অভিষেক হয় অভিনয়ে। শুরুটা কঠিন ছিল, তবে ‘শাহেনশাহ’ ছবিতে অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে অভিনয়ের পর পরিচিতি পান মহেশ। পর্দার এই খলনায়ককে নিয়ে বাস্তবে বিস্তর বিতর্ক হয়েছে। তাঁর জীবনের শেষটা তো সবচেয়ে বিয়োগান্তক।
‘শাহেনশাহ’র পর ‘গুমরাহ, ‘গঙ্গা যমুনা সরস্বতী’, ‘তুফান’সহ বহু ছবিতে খল চরিত্রে দেখা যায় মহেশ আনন্দকে। আশি ও নব্বই দশকে বলিউডের অন্যতম সফল খলনায়ক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। অভিনয়ে আসার আগে তিনি ছিলেন একজন মডেল ও নৃত্যশিল্পী। কারাতেতে ব্ল্যাক বেল্টও ছিল তাঁর।
আশি ও নব্বই দশকের হিন্দি সিনেমার দর্শক মহেশ আনন্দকে চিনেছে খলনায়ক হিসেবেই। ভিলেন হিসেবে মহেশ আনন্দের জনপ্রিয়তা এতটাই বেড়ে যায় যে বছরে ছয় থেকে আটটি ছবিতে তাঁকে দেখা যেত।
ক্যারিয়ারের তুঙ্গে থাকা অবস্থায় তিনি কাজ করেন সঞ্জয় দত্ত, অক্ষয় কুমার, অমিতাভ বচ্চন, গোবিন্দ, শশী কাপুর, সানি দেওল, বিনোদ খান্না, সালমান খানের মতো তারকাদের সঙ্গে। সব মিলিয়ে ৩০০টির বেশি ছবিতে অভিনয় করেন তিনি।
তবে পেশাগত সাফল্যের বিপরীতে ব্যক্তিগত জীবনে মহেশ আনন্দ ছিলেন অত্যন্ত বিপর্যস্ত। পাঁচবার বিয়ে করেন তিনি, জড়িয়েছিলেন ১২ জন নারীর সঙ্গে। প্রথম স্ত্রী ছিলেন রিনা রায়ের বোন বরখা রায়।
তাঁদের বিচ্ছেদের পর মহেশ বিয়ে করেন মিস ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল এরিকা মারিয়া ডি’সুজাকে, যাঁদের এক সন্তানও রয়েছে। তৃতীয় বিয়ে হয় ১৯৯৯ সালে মধু মলহোত্রার সঙ্গে। এরপর অভিনেত্রী উষা বচ্চনকে বিয়ে করলেও সে সম্পর্কও বিচ্ছেদে গড়ায়। পঞ্চম ও শেষবার তিনি বিয়ে করেন রাশিয়ান নারী লানাকে।
চোখধাঁধানো অভিনয়জীবনের আড়ালে মহেশ আনন্দ ভুগেছেন চরম অর্থকষ্টে। তিনি নিজেই ফেসবুকে লিখেছিলেন, ‘সবাই আমাকে মদ্যপ বলে। আমার কোনো পরিবার নেই। সৎভাই আমার ছয় কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। আমি ৩০০টির বেশি ছবি করেছি, অথচ পানির বোতল কেনার টাকাও নেই। আমার জীবনে একটাও প্রকৃত বন্ধু নেই, খুবই দুঃখজনক।’
মহেশ আনন্দ অর্থসংকটে দিন কাটিয়েছেন ১৮ বছর। বহুবার অভিনয়ে ফেরার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। হতাশা থেকে ধীরে ধীরে ডুবে যান বিষণ্নতা আর মদ্যপানে। ২০১৯ সালে গোবিন্দর ‘রঙিলা রাজা’ ছবিতে ছোট্ট একটি চরিত্রে দেখা মেলে তাঁর, যা কিছুটা আশার আলো জাগিয়েছিল।
কিন্তু ছবিটি মুক্তির মাত্র ২২ দিনের মাথায়, ৯ ফেব্রুয়ারি নিজ বাড়িতে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় মহেশ আনন্দকে। সোফায় বসা অবস্থায় তাঁর দেহ পাওয়া যায়। পাশে ছিল একটি মদের বোতল ও খাবারের প্লেট। পোস্টমর্টেমে জানা যায়, মৃত্যুর তিন দিন পর তাঁর দেহ উদ্ধার হয়েছিল।
তথ্যসূত্র: ডিএনএ