১২৫ রুপির কেরানির চাকরি থেকে বলিউড তারকা, ধর্মেন্দ্র সম্পর্কে ২৫ তথ্য
৮৯ বছর বয়সে মারা গেছেন বলিউড অভিনেতা ধর্মেন্দ্র; দীর্ঘ ক্যারিয়ারে নানা বৈচিত্র্যময় চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গেছে তাঁকে। সত্তরের দশকের আলোচিত এই নায়কের ব্যক্তিগত জীবনও ছিল ঘটনাবহুল। জেনে নেওয়া যাক প্রয়াত এই অভিনেতার জীবনের জানা–অজানা দিক।
১.বলিউডের ‘হি–ম্যান’
১৯৬১ সালে মুক্তি পাওয়া দ্বিতীয় ছবি ‘শোলা অউর শবনম’ দিয়েই প্রথম বাণিজ্যিক সাফল্য পান ধর্মেন্দ্র। ধীরে ধীরে তিনি হয়ে ওঠেন বলিউডের অন্যতম সুপারস্টার, যিনি মূলত পৌরুষদীপ্ত ও শক্তিমান চরিত্রে অভিনয়ের জন্য পরিচিত হয়ে ওঠেন। একের পর এক ব্লকবাস্টার ছবির মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন সাহস ও বীরত্বের প্রতীক। এখান থেকেই তাঁর নাম হয়—‘হি–ম্যান অব হিন্দি সিনেমা’।
২. শুধু নায়ক নন
১৯৬৪ সালে মোহন কুমার পরিচালিত ও জে ওম প্রকাশ প্রযোজিত ‘আয়ি মিলান কি বেলা’ ছিল তাঁর ক্যারিয়ারের একটি গুরুত্বপূর্ণ ছবি। এখানে তিনি ধূসর চরিত্রে অভিনয় করেন, যা তাঁর অভিনয়–প্রতিভার আরেকটি দিক তুলে ধরে; সমালোচকদের প্রশংসা কুড়ায় সিনেমাটি।
৩. রাজেশ খান্নার উত্থান ও প্রতিযোগিতা
১৯৬৯ সালে ‘আরাধনা’ ও ‘দো রাস্তে’ ছবির মাধ্যমে রাজেশ খান্না বলিউডে ঝড় তোলেন। নতুন তারকার আগমনে যখন অনেক অভিনেতা চাপে পড়েন, ধর্মেন্দ্র তখন নিজের অবস্থান শক্ত রাখেন। একই বছরে ‘আয়া শাওন ঝুম কে’, ‘ইয়াকিন’, ‘পেয়ার হি পেয়ার’ ও ‘আদমি অউর ইনসান’–এর মতো হিট ছবির মাধ্যমে তিনি নিজেকে বাণিজ্যিক সিনেমার সফল তারকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।
৪. মোহাম্মদ রফির সঙ্গে স্মরণীয় জুটি
গায়ক মোহাম্মদ রফি ধর্মেন্দ্রের জন্য শতাধিক গান গেয়েছেন। এই জুটি হিন্দি চলচ্চিত্র সংগীতের ইতিহাসে এক সমৃদ্ধ অধ্যায় তৈরি করেছে।
৫. হেমা মালিনীর সঙ্গে হিট জুটি
১৯৭০–এর দশক ছিল ধর্মেন্দ্র–হেমা মালিনী জুটির স্বর্ণযুগ। ‘তুম হাসিন ম্যায় জওয়ান’ ও ‘শারাফাত’ দিয়ে শুরু করে ‘সীতা অউর গীতা’, ‘সামধি’, ‘রাজা রানি’সহ একাধিক হিট ছবি উপহার দেন তাঁরা। বাস্তব জীবনের এই দম্পতি ‘শোলে’সহ ৩০টির বেশি ছবিতে একসঙ্গে অভিনয় করেছেন।
৬. ‘শোলে’ ও অবিস্মরণীয় সিদ্ধান্ত
১৯৭৫ সালের ক্ল্যাসিক ‘শোলে’ চলতি বছর ৫০ বছর পূর্ণ করেছে। ছবির ‘ঠাকুর বলদেব সিং’ চরিত্রে অভিনয় করেন সঞ্জীব কুমার। শুরুতে এই চরিত্রে আগ্রহী ছিলেন ধর্মেন্দ্র নিজে। তবে তিনি বুঝতে পারেন, ‘বীরু’র চরিত্রটি করলে হেমা মালিনীর বিপরীতে অভিনয় করার সুযোগ পাবেন, তাই ‘ঠাকুর’-এর চরিত্রটি ছেড়ে দেন। পরিচালক রমেশ সিপ্পি চরিত্রটির দিলীপ কুমারকেও ভাবনায় রেখেছিলেন।
৭. পর্দায় পিতৃত্ব: ছেলে ও পরিবার
ধর্মেন্দ্রের দুই ছেলে সানি দেওল ও ববি দেওল বলিউডে নিজেদের জায়গা তৈরি করেন। ‘দিলাঙ্গি’, ‘আপনে’ ও ‘ইয়ামলা পাগলা দিওয়ানা’ ইত্যাদি সিনেমায় দুই ছেলের সঙ্গে অভিনয় করেন। পাশাপাশি সানি দেওলের অন্যতম সফল ছবি ‘ঘায়েল’ প্রযোজনাও করেন ধর্মেন্দ্র।
৮. সময়ের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া
কিছুটা বিরতির পর, ২০০০–এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে নতুন প্রজন্মের নির্মাতাদের সঙ্গে কাজ করে আবারও আলোচনায় ফেরেন ধর্মেন্দ্র। ‘জনি গাদ্দার’, ‘লাইফ ইন আ...মেট্রো’ সিনেমায় তাঁর অভিনয় সমাদৃত হয়।
৯. শাবানা আজমির সঙ্গে পুনর্মিলন
২০২৩ সালে করণ জোহরের ‘রকি অউর রানি কি প্রেম কাহানি’ ছবিতে শাবানা আজমির সঙ্গে অভিনয় করেন ধর্মেন্দ্র। তাঁদের রসায়ন প্রশংসিত হয়। এর আগে তাঁরা একসঙ্গে অভিনয় করেছিলেন ‘মর্দো ওয়ালি বাত’ (১৯৮৮) ছবিতে।
১০. শেষ ছবি
ধর্মেন্দ্রের শেষ ছবি হিসেবে মুক্তি পেতে যাচ্ছে ‘ইক্কিস’, যা চলতি বছরের বড়দিনে প্রেক্ষাগৃহে আসার কথা। ছবিটি পরিচালনা করেছেন শ্রীরাম রাঘবন। কাহিনি ভারতের সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান ‘পরমবীর চক্র’প্রাপ্ত সর্বকনিষ্ঠ সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট অরুণ খেতারপালকে নিয়ে। অরুণের চরিত্রে অভিনয় করবেন অগস্ত্য নন্দা, ধর্মেন্দ্র অভিনয় করেছেন অরুণের দাদার ভূমিকায়। কাকতালীয়ভাবে তাঁর মৃত্যুর দিনেই আসে সিনেমাটিতে ধর্মেন্দ্রর প্রথম লুক।
আরও তথ্য
১১. তাঁর আসল নাম ছিল ধরম সিং দেওল। প্রথম ছবি মুক্তির সময় পরিচালক অর্জুন হিংগোরানি তাঁর নাম রাখেন ‘ধর্মেন্দ্র’।
১২. ১৯৬০ সালের প্রথম ছবি ‘দিল ভি তেরা হাম ভি তেরে’র জন্য তিনি পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন মাত্র ৫১ রুপি।
১৩. ১৯৫৮ সালে ফিল্মফেয়ার ‘নিউ ট্যালেন্ট কনটেস্ট’ জিতে তিনি প্রথম মুম্বাইয়ে আসেন।
১৪. ‘শোলে’ (১৯৭৫) ছবিতে তিনি ছিলেন সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত অভিনেতা—পেয়েছিলেন প্রায় ১ দশমিক ৫ লাখ রুপি।
১৫. অভিনয়ে আসার আগে তিনি রেলওয়ের কেরানি হিসেবে কাজ করতেন, মাসিক বেতন ছিল প্রায় ১২৫ রুপি।
১৬. তিনি এক দিনে তিন–চারটি শিফটে কাজ করতেন এবং খুব কমই কোনো স্ক্রিপ্টে ‘না’ বলতেন।
১৭. ১৯৮৭ সালে এক বছরে তাঁর সাতটি সফল ছবি মুক্তি পায়।
১৮. তাঁর প্রযোজনা সংস্থা বৈজন্তী ফিল্মসের ‘বেতাব’ (১৯৮৩) ছিল ওই বছরের অন্যতম হিট।
১৯. প্রথম স্ত্রী সঙ্গে তাঁর দুই কন্যা—বিজেতা ও আজেতা—যাঁরা পর্দার আড়ালে ব্যক্তিগত জীবন বেছে নেন।
২০. উর্দু কবিতা ও শায়েরির প্রতি তাঁর গভীর আগ্রহ ছিল।
২১. তিনি ‘গরম ধরম ধাবা’ নামে রেস্তোরাঁ চেইনও চালু করেছিলেন।
২২. ১৯৬০, ’৭০, ’৮০ ও ২০০০—চারটি দশকেই তিনি বড় হিট ছবি উপহার দিয়েছেন।
২৩. লোনাভালার প্রায় ১০০ একর জমির ফার্ম হাউসে থাকতেন। সেখানে তিনি জৈবকৃষি নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন।
২৪. ২০১১ সালে তিনি রিয়েলিটি শো ‘ইন্ডিয়াজ গট ট্যালেন্ট’ অনুষ্ঠানের বিচারক হিসেবেও কাজ করেন।
২৫. তিনি প্রথমে ‘জঞ্জির’ (১৯৭৩) ছবির প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন, যা পরে অমিতাভ বচ্চনের ‘অ্যাংরি ইয়াং ম্যান’ ইমেজ তৈরি করে।
গতকাল ২৪ নভেম্বর সোমবার সকালে মুম্বাইয়ের জুহুতে নিজ বাসায় শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন ধর্মেন্দ্র। বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। মুম্বাইয়ের পবন হংসে গতকাল অনুষ্ঠিত হয় ধর্মেন্দ্রর শেষকৃত্য। ১৯৩৫ সালে পাঞ্জাবে জন্ম নেওয়া এই অভিনেতা ১৯৬০ সালে চলচ্চিত্রে পা রাখেন এবং খুব দ্রুতই বলিউডে নিজের আলাদা জায়গা তৈরি করেন। এরপরের পাঁচ–ছয় দশকজুড়ে তিনি অভিনয় করেছেন ৩০০–রও বেশি ছবিতে—যার মধ্যে অসংখ্য ব্লকবাস্টার আজও জনপ্রিয়।