এআই দিয়ে ‘রানঝানা’র গল্প বদল, বলিউডের তুমুল বিতর্ক

‘রানঝানা’ আগামী ১ আগস্ট নতুন করে মুক্তি পাবেপ্রযোজনা সংস্থার পেজ

২০১৩ সালে মুক্তির পর আনন্দ এল রাইয়ের ‘রানঝানা’ দর্শক-সমালোচক উভয়ই পছন্দ করেন। এক যুগ পর সিনেমাটি নতুন করে মুক্তি পাচ্ছে। কিন্তু এই মুক্তি নিয়েই নির্মাতা আনন্দ এল রাই আর প্রযোজনা সংস্থা ইরোস ইন্টারন্যাশনালের মধ্যে প্রচণ্ড বিতর্ক শুরু হয়েছে। কারণ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে সিনেমাটির সমাপ্তি বদলে মুক্তি দিতে যাচ্ছে ইরোস। এতেই খেপেছেন নির্মাতা। তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন অন্য নির্মাতা, লেখক ও অভিনয়শিল্পীরা।
ইরোস সম্প্রতি ঘোষণা দেয়, ‘অম্বিকাপথি’ নামে তামিল ভাষায় ‘রানঝানা’ আগামী ১ আগস্ট নতুন করে মুক্তি পাবে। যেখানে এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে সিনেমার সমাপ্তি পাল্টে দেওয়া হয়েছে—ট্র্যাজিক সমাপ্তির বদলে এখন কুন্দনের (ধানুশ) মৃত্যু নয়, বরং বেঁচে থাকাই দেখানো হবে।

পরিচালক আনন্দ এল রাই এ প্রসঙ্গে ভ্যারাইটিকে বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত নির্মাতা বা সংশ্লিষ্ট কারও সম্মতি বা অনুমোদন ছাড়াই নেওয়া হয়েছে। এ ধরনের পদক্ষেপ গভীরভাবে উদ্বেগজনক।’ তিনি আরও বলেন, ‘ইরোস প্রযোজক হিসেবে নির্দিষ্ট কিছু অধিকার রাখলেও কাজটি শিল্পীর অভিপ্রায় ও সম্মতির মৌলিক নীতিকে লঙ্ঘন করে।’

‘অম্বিকাপথি’ নামে তামিল ভাষায় ‘রানঝানা’ আগামী ১ আগস্ট নতুন করে মুক্তি পাবে। যেখানে এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে সিনেমার সমাপ্তি পাল্টে দেওয়া হয়েছে—ট্র্যাজিক সমাপ্তির বদলে এখন কুন্দনের (ধানুশ) মৃত্যু নয়, বরং বেঁচে থাকাই দেখানো হবে।
আনন্দ এল রাই বলছেন, ‘চলচ্চিত্র শুধু ব্যবসায়িক পণ্য নয়, এটা তার নির্মাতাদের শ্রম ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন।’
কোলাজ

ইরোসের পাল্টা প্রতিক্রিয়া ও আইনি যুক্তি
ইরোস গ্রুপের প্রধান নির্বাহী প্রদীপ দ্বিবেদী বলছেন, এআই ব্যবহার করে নতুন সমাপ্তি দেওয়া একটি সাধারণ ঘটনা। দ্বিবেদীর দাবি, ভারতীয় কপিরাইট আইনের অধীনে প্রযোজকই একজন চলচ্চিত্রের একমাত্র ও পূর্ণ অধিকারপ্রাপ্ত। ‘এই ছবির ক্ষেত্রে পরিচালক লিখিতভাবে তাঁর নৈতিক অধিকার পরিত্যাগ করেছিলেন। চুক্তিতে এটা আছে,’ বলেছেন তিনি।

২০২২ সালে অন্য একটি মামলায় ভারতের সুপ্রিম কোর্ট রায় দেন, চলচ্চিত্র পরিচালকেরা লেখক হিসেবে বিবেচিত হন এবং তাঁদের নির্দিষ্ট নৈতিক অধিকার রয়েছে, এমনকি অর্থনৈতিক অধিকার প্রযোজকের কাছে হস্তান্তর করলেও।
আরও পড়ুন

সুপ্রিম কোর্ট বনাম ইরোসের ব্যাখ্যা
তবে ২০২২ সালে অন্য একটি মামলায় ভারতের সুপ্রিম কোর্ট রায় দেন, চলচ্চিত্র পরিচালকেরা লেখক হিসেবে বিবেচিত হন এবং তাঁদের নির্দিষ্ট নৈতিক অধিকার রয়েছে, এমনকি অর্থনৈতিক অধিকার প্রযোজকের কাছে হস্তান্তর করলেও।
এই বিতর্কের পাশাপাশি একটি করপোরেট দ্বন্দ্বও চলছে—আনন্দ এল রাইয়ের প্রযোজনা সংস্থা কালার ইয়েলো প্রোডাকশনের  বিরুদ্ধে ‘অবৈধ লেনদেন ও বোর্ড অনুমোদন ছাড়াই লেনদেন’ ইত্যাদির অভিযোগ এনেছে ইরোস। রাই এ বিষয়ে বলেন, ‘বাণিজ্যিক দ্বন্দ্ব থাকলেও তা এই সৃজনশীল বিতর্কের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। কিন্তু এই এআই ইস্যু একেবারে আলাদা ও গুরুত্বপূর্ণ।’

এআই বনাম শিল্পী: ভারতীয় সিনেমার মোড় ঘোরানো মুহূর্ত?
আনন্দ এল রাই বলছেন, ‘চলচ্চিত্র শুধু ব্যবসায়িক পণ্য নয়, এটা তার নির্মাতাদের শ্রম ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন। এ ধরনের পরিবর্তন শিল্পীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা। যদি তা নিয়ন্ত্রণহীন থাকে, তবে একসময় প্রযুক্তিনির্ভর সুবিধাবাদ শিল্পের মৌলিকত্বকে গ্রাস করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এখন একটি সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। আজকের সিদ্ধান্তই নির্ধারণ করবে, ভবিষ্যতের নির্মাতারা সম্মান, স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করতে পারবেন কি না।’

এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে সিনেমার সমাপ্তি পাল্টে দেওয়া হয়েছে—ট্র্যাজিক সমাপ্তির বদলে এখন কুন্দনের (ধানুশ) মৃত্যু নয়, বরং বেঁচে থাকাই দেখানো হবে।
প্রযোজনা সংস্থার পেজ
ইরোস ভবিষ্যতে আরও সিনেমার এআইভিত্তিক পুনর্নির্মাণ নিয়ে ভাবছে ও প্রয়োজনে নির্মাতাদের সঙ্গে সহযোগিতাও করতে পারে, যদিও তা আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক নয়।

ইরোস বলছে ‘নতুন যুগের সূচনা’
এদিকে দ্বিবেদী বলেন, ‘প্রযোজকই সিনেমার আইনগত লেখক—ভারতের আইনেও তা–ই বলা আছে। নতুন এআই সংস্করণটি সিনেমাটি নতুন করে বানাইনি; বরং এটির একটি বিকল্প সমাপ্তি দর্শকের সামনে উপস্থাপন করেছে।’

তিনি জানান, ইরোস ভবিষ্যতে আরও সিনেমার এআইভিত্তিক পুনর্নির্মাণ নিয়ে ভাবছে ও প্রয়োজনে নির্মাতাদের সঙ্গে সহযোগিতাও করতে পারে, যদিও তা আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক নয়।

২০১৩ সালে মুক্তির পর আনন্দ এল রাইয়ের ‘রানঝানা’ দর্শক-সমালোচক উভয়ই পছন্দ করেন
প্রযোজনা সংস্থার পেজ
আরও পড়ুন

নজিরবিহীন বিতর্ক
এই বিতর্ক ভারতের সিনেমাজগতে নতুন এক বিতর্ক তৈরি করেছে। যেখানে প্রযুক্তি, শিল্প, আইন এবং করপোরেটের লড়াই এক জায়গায় এসে ঠেকেছে। পরিচালক রাই একে বলছেন, ‘ভারতীয় সিনেমার ভবিষ্যতের জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট।’
তথ্যসূত্র: ভ্যারাইটি