বড় ঘোষণা দিলেন আমির খান
আজ শেষ হচ্ছে ভারতের ৫৬তম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। শেষ দিনের ‘ফায়ারসাইড চ্যাট’ যেন পরিণত হয়েছিল এক অনন্য সিনেমা-মাস্টারক্লাসে। জনাকীর্ণ মিলনায়তনে সেই আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন বলিউডের ‘মিস্টার পারফেকশনিস্ট’ আমির খান। চলচ্চিত্র সমালোচক ভরদ্বাজ রঙ্গনের সঞ্চালনায় আয়োজিত এ অধিবেশনের শিরোনাম ছিল—‘দ্য ন্যারেটিভ আর্কিটেক্ট অব সোশ্যাল ট্রান্সফরমেশন অ্যান্ড ইনক্লুসিভিটি’। অনুষ্ঠানে ক্যারিয়ার নিয়ে বড় ঘোষণা দিয়েছেন অভিনেতা।
আলোচনার শুরুতেই আমির ফিরে যান নিজের শৈশবে। দাদির মুখে শোনা গল্প আর রেডিওতে ‘হাওয়া মহল’-এর সেই জাদুকরি অভিজ্ঞতা—এসবই নাকি তাঁর গল্পপ্রেম এবং সৃজনশীল মানস গড়ে তুলেছে। তিনি বলেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকেই গল্পের প্রতি ভীষণ আকৃষ্ট ছিলাম। সেই ভালোবাসাই আমাকে একজন অভিনেতা হিসেবে প্রতিটি সিদ্ধান্ত নিতে পথ দেখিয়েছে।’
আলোচনায় উঠে আসে তাঁর কাজের মূল দর্শন—পরিকল্পনার চেয়ে অন্তর্দৃষ্টির ওপর বেশি ভরসা করেন তিনি। আমির বলেন, ‘আমি নিজেকে পুনরাবৃত্তি করতে পারি না। এক ধরনের সিনেমা করলে আমি পরেরবার নতুন কিছু খুঁজতে থাকি। আমি এমন গল্প চাই, যেগুলো নতুন, আলাদা এবং আমাকে সৃজনশীলভাবে রোমাঞ্চিত করে।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘ট্রেন্ড অনুসরণ করে আমি সিনেমা বেছে নিই না। গল্পের প্রতি আমার আবেগপ্রবণ উত্তেজনাই আমার একমাত্র গাইড।’
নিজের ক্যারিয়ারের কিছু ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ সিদ্ধান্তের কথাও তুলে ধরেন আমির। ‘লগান’ প্রসঙ্গে বলেন, ‘শিল্পের দৃষ্টিতে আমার অনেক সিদ্ধান্তই ছিল “অযৌক্তিক”। জাভেদ (আখতার) সাহেব পর্যন্ত আমাদের না করতে বলেছিলেন। সব যুক্তি অনুযায়ী আমার তারকা হয়ে ওঠার কথা ছিল না—আমি সব নিয়ম ভেঙেছিলাম। কিন্তু সেই অপ্রচলিত সিদ্ধান্তগুলো দর্শকের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে। আমি এ জন্য কৃতজ্ঞ।’
সামাজিক বার্তাবাহী ছবিগুলো প্রসঙ্গেও নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেন আমির। তাঁর ভাষায়, ‘আমি কখনো ভাবি না—পরবর্তী কোন সামাজিক বিষয় নিয়ে ছবি করব। আমি শুধু এমন স্ক্রিপ্ট খুঁজি, যেগুলো আমাকে রোমাঞ্চিত করে। কোনো ভালো গল্পের সঙ্গে যদি সামাজিক বার্তা থাকে, সেটা একটি বোনাস, মূল ব্যাপার নয়।’ একই সঙ্গে তিনি ‘থ্রি ইডিয়টস’, ‘দঙ্গল’ ও ‘লাপাতা লেডিস’-এর মতো ছবির পেছনে লেখকদের অবদানকে গুরুত্ব দেন।
সবচেয়ে বড় চমক আসে তাঁর ক্যারিয়ারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে। আমির স্পষ্টভাবে জানান, খুব বড় এক পরিবর্তনের পথে হাঁটতে চলেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘আমি যেসব ছবি প্রযোজনা করছি—“লাহোর ১৯৪৭”, “হ্যাপি প্যাটেল’ এবং আরও কিছু প্রকল্প—এসবের কাজ আগামী কয়েক মাসের মধ্যে শেষ হবে। তার পর থেকে আমি প্রযোজনা ছেড়ে পুরোপুরি অভিনয়ে ফিরে যাব।’ তিনি আরও বলেন, ‘এর পর থেকে আমি যেকোনো গল্প শুনব, সেটা শুধু আমার জন্য—একজন অভিনেতা হিসেবে। এটা আমার ক্যারিয়ারে বড় একটা পরিবর্তন, কিন্তু এখনই সঠিক সময় নিজেকে আবার পুরোপুরি অভিনয়ে সমর্পণ করার।’
বর্তমানে বেশ কিছু নতুন চিত্রনাট্য শুনছেন বলেও জানান আমির। তাঁর মতে, ‘কয়েকটি গল্প আমাকে খুবই রোমাঞ্চিত করেছে—বিশেষ করে দুই-তিনটি। তবে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিচ্ছি।’
পরিচালনা করা নিয়ে পুরোনো স্বপ্নের কথাও অকপটে ভাগ করে নেন তিনি। ‘পরিচালনাই আসলে আমার সবচেয়ে বড় ভালোবাসা। সিনেমা বানানোর কাজটাই আমি সবচেয়ে বেশি উপভোগ করি। কিন্তু যেদিন আমি সচেতনভাবে পরিচালনায় নামব, হয়তো অভিনয় ছেড়ে দেব—কারণ, পরিচালনা আমাকে পুরোপুরি গ্রাস করবে। তাই আপাতত সেই সিদ্ধান্ত পিছিয়ে দিচ্ছি,’ বলেন তিনি।