সেলাই মেশিন থেকে উর্দু, ‘হক’-এর জন্য আর কী কী শিখতে হয়েছিল
সংবেদনশীল বিষয় ও বাস্তব এক কাহিনি অবলম্বনে নির্মিত ছবি ‘হক’। ১৯৮০ সালের ঐতিহাসিক শাহ বানো মামলার অনুপ্রেরণায় ছবি নির্মাণ করেছেন পরিচালক সুপর্ণ ভার্মা। ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন ইয়ামি গৌতম; তাঁর স্বামীর ভূমিকায় আছেন ইমরান হাশমি। মুক্তির পর হক প্রশংসিত হয়েছে দর্শক–সমালোচকের কাছে। প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধি ও তিনজন স্থানীয় সাংবাদিককে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইয়ামি কথা বলেছেন হক–কে ঘিরে বিতর্ক, চরিত্রের প্রস্তুতি, নারীর অধিকার এবং ব্যক্তিজীবনের নানা দিক নিয়ে।
সিনেমার বিষয়বস্তু সংবেদনশীল—এ কথা মাথায় রেখে কাজ করার আগে কখনো বিতর্কের আশঙ্কা হয়েছিল কি না জানতে চাইলে ইয়ামি বলেন, ‘আমার মনে হয় অভিনয়শিল্পীর একটাই লেন্স থাকা উচিত—সেটা হলো ছবির সুর। আমি দেখি ছবিটা নির্মাণ করা হচ্ছে শুধু বিতর্ক তৈরির জন্য, না আলোচনার জন্য। এই দুটো একেবারেই আলাদা জিনিস। ইন্ডাস্ট্রিতে এত বছর পর নিশ্চয় দর্শক জানেন—আমি কখনোই বিতর্কের জন্য সিনেমা করি না। তবে কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনা না হলে তা অর্থহীন। ভালো বা খারাপ—যেকোনো কারণে আলোচিত হওয়া জরুরি। মাঝারি মানের সিনেমার কোনো জায়গা নেই। আশা করি “হক” ভালো ছবি হিসেবে আলোচনায় থাকবে। আর আমি ব্যক্তিগতভাবে কোনো ধরনের বিতর্ককে বাহবা দিই না। কাজ শেষ করেই সোজা বাড়ি ফিরি।’
‘হক’–এ কাজ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ প্রসঙ্গে ইয়ামি জানান, ‘আমি সব সময় খুব মন দিয়ে চিত্রনাট্য পড়ি। হক–এর ক্ষেত্রেও তাই করেছি। পুরো চিত্রনাট্য পড়া শেষ করে মনে হলো—এই ছবিটা আমাকে করতেই হবে।’ তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ‘হক কোনো বায়োপিক নয়। শাহো বানো মামলার প্রেরণায় বাস্তব আর কল্পনার মিশেলে তৈরি এক গল্প। ওনার জার্নি আমাকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে। তাঁর লড়াই আজও প্রাসঙ্গিক। একজন শিল্পী হিসেবে আমার দায়িত্ব ছিল চরিত্রের প্রতি ন্যায় করা—আমি সেটাই করার চেষ্টা করেছি।’
‘আর্টিকেল ৩৭০’–এর মতো সিরিয়াস ছবি থেকে ‘ধুম ধাম’–এর মতো হালকা মেজাজের ছবিতেও দেখা গেছে ইয়ামিকে। ভিন্ন ভিন্ন প্রকল্প বেছে নেওয়ার সময় তিনি কী দেখেন—এমন প্রশ্নে তাঁর উত্তর, ‘চিত্রনাট্যই আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম পাঠেই যে অনুভূতি আসে, সেই আন্তরিক অনুভূতিই আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। গল্প যত বাস্তব ও সংলগ্ন হয়, আগ্রহও তত বাড়ে। তারপর গুরুত্ব পায় চরিত্র আর পরিচালক।’
হক–এ নিজের অধিকারের জন্য লড়তে দেখা গেছে ইয়ামিকে। বাস্তবে তিনি কোন পরিবর্তনের জন্য আওয়াজ তুলতে চান—এ প্রশ্নে বলেন, ‘শব্দের চেয়ে আমি কাজের মাধ্যমে বার্তা দিতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।’ তাঁর ব্যাখ্যা, ‘আগে অভিনেত্রীরা বিয়ে লুকিয়ে রাখতেন, মা হওয়া তো আরও কঠিন ছিল। এখন আমি মা, কাজ করছি এবং কোনো অসুবিধা হয়নি। এটা আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে বড় পরিবর্তন।’
বলিউডের অভিজ্ঞতা টেনে তিনি আরও বলেন, ‘এখন মা হওয়ার পর কেউ কাজ করতে চাইলে তাঁকে সৃজনশীলতার জায়গায় আর বাধার মুখে পড়তে হয় না। এটা বড় অর্জন। অভিনেত্রীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে। তবে মেয়েদের নিরাপত্তা ও শিক্ষার মতো আরও কিছু ক্ষেত্রে স্থায়ী পরিবর্তন জরুরি।’ তাঁর ভাষায়, ‘আমি শুধু সাজিয়ার হয়ে নয়, প্রতিটি নারীর হয়ে আওয়াজ তুলেছি। হক বিশেষ কোনো সম্প্রদায়ের গল্প নয়—এটা সবার গল্প।’
বাস্তব চরিত্রের প্রাণ তুলে ধরতে সবচেয়ে কঠিন কী ছিল—জানতে চাইলে ইয়ামি বলেন, ‘সবচেয়ে কঠিন ছিল আবেগকে অনুভব করা। আবেগ একবার ধরে ফেলতে পারলেই শরীরী ভাষা নিজে থেকেই আসে।’ শাহ বানোর যন্ত্রণা, সাহস আর লড়াই ফুটিয়ে তুলতে তাঁকে শিখতে হয়েছে সেলাই মেশিন চালানো, কুরুশের কাজ; পাশাপাশি ইন্দোরের ডিকশন কোচ ইদ্রাক ভাইয়ের কাছে প্রশিক্ষণ নিয়ে উর্দুর উচ্চারণ ও টোনালিটি আয়ত্ত করেছেন তিনি।
কথা প্রসঙ্গে ইয়ামি বলেন, তাঁর সবচেয়ে বড় শক্তি তাঁর পরিবার। বিয়ের পর ক্যারিয়ার চালিয়ে যেতে স্বামী আদিত্য ধরের (চিত্রনির্মাতা) সমর্থন তাঁকে অনুপ্রাণিত করে। তবে সবচেয়ে বেশি অবদান বাবা–মায়ের। ‘আমি আর আদিত্য দুজনেই নিশ্চিন্তে কাজ করতে পারছি বাবা–মায়ের সহযোগিতার কারণে’, বললেন ইয়ামি। একই সঙ্গে তিনি মনে করেন, ‘অন্য অভিনেত্রীরা বিয়ের পর কাজ না করলে সেটাও তাঁদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত—এতে কোনো ভুল নেই।’