দুই কর্মচারী কি সুশান্ত মৃত্যুরহস্য ফাঁস করবে

সুশান্ত সিং রাজপুতইনস্টাগ্রাম

বলিউড অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের রহস্যজনক মৃত্যুর জট খুলতে আবার উঠেপড়ে লেগেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ব্যুরো (এনসিবি)। এই বলিউড তারকার বন্ধু তথা রুমমেট সিদ্ধার্থ পিটানিকে ২৮ মে হায়দরাবাদ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল রোববার সুশান্তের বাসার দুই পরিচারক কেশব আর নীরজকে প্রায় ছয় ঘণ্টার মতো জিজ্ঞাসাবাদ করেছে এনসিবি। আজ এই দুজনকে এনসিবি আবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠিয়েছে।

সুশান্ত সিং রাজপুত
ইনস্টাগ্রাম

জানা গেছে, সিদ্ধার্থের সামনে বসিয়ে কেশব আর নীরজকে আজ জেরা করবেন এনসিবির কর্মকর্তারা। অভিযোগ যে সিদ্ধার্থ সুশান্তকে মাদক সরবরাহ করতেন।
২০২০ সালের ১৪ জুন সুশান্তের মৃত্যুর পর এনসিবি আর কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিবিআই) একাধিকবার কেশব আর নীরজকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। এই দুজন এনসিবির হাত থেকে বাঁচার জন্য আট মাসের মতো মুম্বাইয়ের বাইরে গা ঢাকা দিয়ে ছিলেন। পরে মুম্বাইতে ফিরে এসে তাঁরা বিভিন্ন বলিউড তারকার বাসায় কাজ করেছেন। এদিকে এনসিবির নজর ছিল এই মামলার অন্যতম মূল অভিযুক্ত সিদ্ধার্থ পিটানির দিকে।

এনসিবির মুম্বাই জোনালের প্রধান সমীর ওয়ানখেড়ে জানিয়েছেন যে স্থানীয় আদালতের অনুমতি নিয়ে হায়দরাবাদ থেকে সিদ্ধার্থকে গ্রেপ্তারের পর ট্রানজিট রিমান্ডে তাঁকে মুম্বাইতে আনা হয়।

সিদ্ধার্থ পিঠানি ও সুশান্ত সিং রাজপুত
সংগৃহীত

১ জুন পর্যন্ত সিদ্ধার্থ এনসিবির হেফাজতে থাকবে বলে সমীর ওয়ানখেড়ে জানিয়েছেন। এনসিবির ১২ হাজার পাতার চার্জশিটে সুশান্তের প্রেমিকা তথা অভিনেত্রী রিয়া চক্রবর্তী, শৌভিক চক্রবর্তীসহ আরও ৩৩ জন অভিযুক্তের নাম উল্লেখ আছে। নথিপত্রে ২০০ জনের বেশি সাক্ষীর বয়ান আছে। বলিউডে মাদককাণ্ডে তদন্তে এখনো পর্যন্ত একাধিক বলিউড তারকার নাম উঠে এসেছে। এমনকি দীপিকা পাড়ুকোন, সারা আলী খান, রাকুল প্রীত সিং, শ্রদ্ধা কাপুর, অর্জুন রামপালের মতো তারকাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে এনসিবি। তবে এঁদের জিজ্ঞাসাবাদের পর এনসিবির হাতে কোনো প্রমাণ ধরা পড়েনি। তাই এই সব তারকাদের তারা ক্লিন চিট দিয়েছিল। রিয়া ও তাঁর ভাই শৌভিককে মাদক মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পরে তাঁরা জামিনে মুক্তি পান।

১৪ জুন সুশান্তের বান্দ্রার বাসায় তাঁকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখা যায়। এই সময় তাঁর বাসায় চারজন লোক ছিলেন। সিদ্ধার্থ পিটানি (সুশান্তের রুমমেট), দীপেশ সাওন্ত (সুশান্তের বন্ধু), নীরজ সিং (হাউসকিপার), কেশব (রাঁধুনি)। নীরজ সুশান্তের মৃত্যুর আগে তাঁর সঙ্গে শেষ কথোপকথনের কথা সিবিআইকে জানিয়েছিলেন।

সুশান্ত সিং রাজপুত
ছবি: সংগৃহীত

তাঁর কথা অনুযায়ী, সুশান্ত সকালে প্রাতরাশ সেরেছিলেন। কিন্তু সকাল ১০ থেকে সাড়ে ১০ পর্যন্ত নীরজ সুশান্তকে জিজ্ঞেস করতে যান যে সেদিন দুপুরে খাবারে কী হবে। তখন সুশান্ত ঘরের দরজা খোলেননি। এক ঘণ্টা সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর সিদ্ধার্থের সন্দেহ হয় যে কিছু একটা ঘটেছে। তিনি তৎক্ষণাৎ সুশান্তের বোন মিতুকে ফোন করেন। আর চাবিওয়ালাকে ডেকে ঘরের তালা খোলান। সিদ্ধার্থই প্রথম সুশান্তকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখেছিলেন।

আরও পড়ুন

১৯৮৬ সালের ২১ জানুয়ারি পাটনায় জন্ম সুশান্তের। একসময় দিল্লিতে চলে আসে তাঁর পরিবার। দিল্লি কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়েও ভর্তি হন। কিন্তু সেই সময় থেকেই থিয়েটারের দিকে ঝোঁকেন তিনি। নাচও শেখেন। এ জন্য পড়ালেখা শেষ করতে পারেননি।

সুশান্ত সিং রাজপুত

২০১৩ সালে 'কাই পো চে' ছবি দিয়ে বড় পর্দায় অভিষেক ঘটে সুশান্ত সিং রাজপুতের। একই বছরে মুক্তি পায় 'শুদ্ধ দেশি রোমান্স'। ২০১৬ সালে 'ধোনি: দ্য আনটোল্ড স্টোরি' মুক্তির পর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি সুশান্তকে। শুধু ক্যারিয়ার আর লাইফ নয়, ব্যক্তিগতভাবেও সুশান্ত ছিলেন মেধাবী। বক্স অফিসে তাঁর শেষ ছবি ছিল 'ছিঁছোড়ে'। অবশ্য নেটফ্লিক্সের ছবি 'ড্রাইভ'-এ শেষবার দেখা গিয়েছে তাঁকে।