মা মাহির এইসব দিনরাত্রি
২৮ মার্চ রাতে প্রথমবারের মতো মা হয়েছেন মাহিয়া মাহি। তবে মা হওয়ার আগে সময়টা এই ঢাকাই ছবির নায়িকার ভালো কাটেনি। মামলা, গ্রেপ্তার, অতঃপর জামিন—সব মিলিয়ে কঠিন সময় পার করেন তিনি।
৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় গ্রেপ্তার, পরে মুক্তি; অন্যদিকে স্বামীর গ্রেপ্তারের আশঙ্কা। কেমন ছিল সেই সময়টা? মাহিয়া মাহি বললেন, ‘খুব বেশি মানসিক চাপ যে অনুভব করেছি, সেটা বলব না। একটা বিষয় ভেবে অনেকটা রিলাক্সেই ছিলাম।’ কোন বিষয়, সেটিও খোলাসা করলেন, ‘ওই সময় আমি ৯ মাসের গর্ভবতী। আমার বিশ্বাস ছিল, প্রশাসন আমাকে গ্রেপ্তার বা হয়রানি করবে না। কারণ, এটি একটি মানবিক ব্যাপার। এরপরও আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। যদিও ওই দিনই মুক্তি দেওয়া হয়।’ ওই সময়টাতে মানসিক চাপ অনুভব না করলেও শারীরিকভাবে অনেকটাই ধকল সইতে হয়েছে। ‘সে সময় শারীরিকভাবে কষ্ট পেয়েছি। প্রচণ্ড গরম ছিল। কিছু সময়ের জন্য কারাগারে নেওয়া হয়েছিল। কিছুটা ভেঙেও পড়েছিলাম—বারবার আশঙ্কা হচ্ছিল, আমার বাচ্চার ওপর চাপ পড়বে কি না,’ বলেন তিনি।
প্রথমবার সন্তানের মুখ
একদিকে মামলা, গ্রেপ্তার, অন্যদিকে অনাগত সন্তানের ভূমিষ্ঠ হওয়ার দিন সন্নিকটে—এসব কারণে শরীর ভালো যাচ্ছিল না। গত ২৮ মার্চ নিয়মিত শরীরিক পরীক্ষা–নিরীক্ষা করার জন্য রাজধানীর একটি হাসপাতালে যান মাহি, ‘হাসপাতালে চিকিৎসক পরীক্ষা করে দেখেন, সন্তানের হার্টরেটে সমস্যা। দ্রুতই ভর্তি হতে বলেন। জাস্ট দুই ঘণ্টার নোটিশে ডেলিভারি হয়।’ এক মাস আগেই পৃথিবীতে চলে আসে সন্তান। সতর্কতা হিসেবে হাসপাতালে মা ও বাচ্চাকে দুই দিন আলাদা করে রাখা হয়।
এ নিয়ে মাহি বলেন, ‘তিন ঘণ্টা পরপর বাচ্চাকে আমার কাছে আনা হতো। যখনই আনে, দেখি ঘুমায়। মা হওয়ার নিজের অনুভূতিটা তখন বুঝতে পারিনি। প্রথম কয়েক দিন সন্তানকে দেখে মনে হচ্ছিল, আমার পাশে এটা কে?’
‘ফারিশ’ ‘ফারিশ’
হাসপাতালে মা হওয়ার অনুভূতি তেমন না বুঝলেও চার দিন পর বাসায় ফিরে ঠিকই বুঝতে পারছেন, জীবনটা বদলে গেছে। মাহির ভাষ্যে, কোলে সন্তান—এটি যেন একজন মায়ের কাছে মধুর অনুভূতি। মাহি বলেন, ‘বাসায় ফিরে নিজেকে সত্যিকারের সন্তানের মা বলে মনে হচ্ছে (হা হা হা...)। কোলে নিচ্ছি, পাশে শুয়ে থাকছে। এটি পৃথিবীর সেরা অনুভূতি।’ মা হওয়ার পর জীবনের বদলটাও ভালোই টের পাচ্ছেন মাহি, ‘এখন ভয়ে খুব একটা ঘুমাচ্ছি না। ছোট বাচ্চা একটু কান্না করলেই টেনশন হচ্ছে। মনে হচ্ছে কোনো সমস্যা হয়েছে ছেলের। এক ঘণ্টা পরপরই কাঁদে। ওই সময় খাওয়াতে হয়। তাই টানা আধা ঘণ্টা, এক ঘণ্টার বেশি ঘুমাচ্ছি না।’
গত ৩১ মার্চ হাসপাতাল ছেড়ে প্রথমে শ্বশুরবাড়িতে যান মাহি। কিছু সময় কাটিয়ে ওই দিনই উত্তরায় স্বামীর বাসায় উঠেছেন। মাহির এই সন্তানকে ঘিরে আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে আনন্দ বইছে। মাহি বলেন, ‘সন্তানের দাদা ও নানার পক্ষের আত্মীয়স্বজন আসছেন, সবাই খুশি। সবাই “ফারিশ” “ফারিশ” বলে ঢাকছে। আগেই বলেছিলাম, মেয়ে হলে নাম রাখব ফারিশতা। ছেলে হয়েছে বলে ফারিশ রেখেছি। আকিকা দিয়ে ছেলের ভালো নাম রাখব।’
ফিরছেন কবে
অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর গত অক্টোবরে সর্বশেষ শুটিং করেন মাহিয়া মাহি। সামনে আরও বেশ কয়েক মাস ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে পারবেন না। ঘরের বাইরেও সেভাবে যেতে পারবেন না। মাহি বলেন, ‘আগে তো ইচ্ছা হলেই রাতবিরাতে গাড়ি নিয়ে বের হতে পারতাম। এখন আর পারছি না। এ জন্য কেমন-কেমন লাগছে।’
মাহি জানান, শুটিংয়ে ফিরতে তাঁর মন উদ্গ্রীব হয়ে আছে। তাহলে কবে ফিরছেন? মাহি বলেন, ‘সাত-আট মাস তো লাগবেই। এই সময়টা আমার সন্তানের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে একটু একটু করে সন্তান বড় হবে। চার-পাঁচ মাসের মাথায় নিজেকে ফিট করতে প্রস্তুতি নিতে শুরু করব। দেখেন না, আলিয়া ভাট সন্তান জন্ম দেওয়ার পর কত দ্রুতই নিজেকে প্রস্তুত করে আবার কাজে ফিরলেন।’
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মাহি অভিনীত সর্বশেষ সিনেমা ‘বুবুজান’ মুক্তি পায়। মুক্তির অপেক্ষায় আছে ‘আনন্দ অশ্রু’ ও ‘নরসুন্দরী’।