কাঁদলেন আনোয়ারা, ৪৪ বছর পর ছোট্ট ‘বিপ্লব’ ঘরে ফিরেছে
‘বাবা বলে গেল, আর কোনো দিন গান কোরো না’ এই গানে পর্দায় ছিলেন আনোয়ারা ও শিশুশিল্পী মাস্টার শামিম। ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’ সিনেমার এই গানে মাস্টার শামিম অভিনয় করেন বিপ্লব চরিত্রে। আনোয়ারার সঙ্গে মাস্টার শামিমের অভিনয় সবার মনে আজও দাগ কেটে আছে। আমজাদ হোসেনের ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’ ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৮১ সালে। ছবিটি মুক্তির পর আনোয়ারা ও শামিমের আর দেখা হয়নি। দীর্ঘ ৪৪ বছর, শুক্রবার বিকেলে আনোয়ারার বনশ্রীর বাসায় হাজির হন শামিম। তাঁর আগে দুজনের ফোনে কথা হয়। এত বছর পর যখন কথা বলছিলেন, কাঁদছিলেন আনোয়ারা, এপারে থাকা শামিমও চোখ মুছছিলেন। অবশেষে প্রথম আলোর মাধ্যমে দুজনের যখন দেখা হয়, তখন বাসায় আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়। দুজনে কাঁদলেন, কাঁদালেন বাসায় থাকা অন্যদেরও।
২০১৪ সালে পরিবার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান এই চিত্রনায়ক। স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে তিনি থাকেন টেক্সাসের ডালাসে। চলতি মাসে দেশে আসেন তিনি। শুক্রবার সকালে আসেন কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর প্রধান কার্যালয়ে। সেখানে বসে তিনি ফিরে যান শৈশব ও কৈশোরের স্মৃতিতে। স্মরণ করেন প্রয়াত পরিচালক আমজাদ হোসেন, গাজী মাজহারুল আনোয়ার, নায়ক রাজ রাজ্জাক এবং ইলিয়াস কাঞ্চনসহ অনেককে। কয়েকজন প্রবীণ শিল্পীর সঙ্গেও দেখা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি।
সেই সময়ে তিনি জানান, অভিনেত্রী আনোয়ারার সঙ্গে তাঁর আর দেখা হয় না ৪৪ বছর হয়ে গেছে। তখন প্রথম আলোর পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় আনোয়ারার অভিনেত্রী মেয়ে রুমানা ইসলাম মুক্তির সঙ্গে। শামিমের সঙ্গে কথা বলেন আনোয়ারা। জানান, তিনিও শামিমকে অনেক খুঁজেছেন, এমনকি কয়েক দিন আগেই মেয়ের সঙ্গে তাঁকে নিয়ে কথা বলেছেন। এরপর আনোয়ারা তাঁকে বনশ্রীর বাসায় যেতে আমন্ত্রণ জানান। কালক্ষেপণ না করে সিএনজিচালিত অটোরিকশা করে শামিম ছুটে যান আনোয়ারাকে দেখতে।
শামিমকে দেখেই জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন আনোয়ারা। ছোট্ট ‘বিপ্লব’কে এত বছর পর সামনে পেয়ে তাঁর চোখে আনন্দাশ্রু। শামিমও কান্না ধরে রাখতে পারেননি। মুহূর্তটা যেন ফিরিয়ে নেয় ৪৪ বছর আগের ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’র শুটিং সেটে। শামিমকে দেখে আনোয়ারার প্রথম কথা ছিল, ‘তুমি এত বড় হয়ে গেছ! মুখটা যেন সেই ছোট্ট বেলার মতোই আছে।’ এরপর দেড় ঘণ্টা ধরে চলে তাঁদের আড্ডা। শুটিং সেটের স্মৃতি থেকে বিএফডিসির জৌলুশ, কারওয়ান বাজার ও ফার্মগেট এলাকার পূর্ব তেজতুরী বাজারে ‘বারী স্টুডিও’ থেকে নারায়ণগঞ্জের পাগলার ‘পপুলার স্টুডিও’র স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছিলেন তাঁরা।
শামিমকে নিয়ে আনোয়ারা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছোট সময় অনেক লক্ষ্মী ছিল। কথা কম বলত, চঞ্চলতা ছিল না। সবাইকে শুটিংয়ে এসে সালাম দিত। সবাই ওকে আদর করতাম।’ শামিমের মতোই আনোয়ারাও এত বছর খুঁজেছেন সেই ‘বিপ্লব’কে। তিনি বলেন, ‘বাবা বলে গেল গানটি প্রায়ই মেয়ে শোনায় আমাকে। তখন ওকে দেখতে অনেক ইচ্ছা হতো। কিন্তু কোথায় পাব, কোথায় আছে, অত বড় দুনিয়া! আজ দেখে অনেক ভালো লাগছে। বড় হয়ে গেলেও মনে হচ্ছে যেন, সেই পিচ্চিটাই সামনে বসে আছে।’
এর আগেও কয়েকবার দেশে এসে আনোয়ারার সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেন শামিম। কিন্তু হয়ে ওঠেনি। আনোয়ারার মেয়ে চিত্রনায়িকা রুমানা ইসলামের ফেসবুক মেসেঞ্জারে বার্তাও পাঠিয়েছেন তিনি। তবে দুজন একসঙ্গে যুক্ত না থাকায় মেসেজটি দেখা হয়নি রোমানার। এবার দেখা হওয়াতে এত বছরের কষ্ট কিছুটা কমেছে বলে জানান শামিম। প্রথম আলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘প্রথম আলোকে ধন্যবাদ, এত বছর পর আনোয়ারা (বেগম) আন্টির সঙ্গে দেখা হলো। আমি যেন সেই শৈশবে ফিরে গেলাম। এত আদর উনি আমাকে করেছেন। ওনার দোয়া নিয়ে এবার ফিরতে পারছি বলে ভালো লাগা কাজ করছে। আমার স্ত্রী ও সন্তানেরাও এটা জানলে খুশি হবেন।’
পুরো ঘটনা আপ্লুত করেছে আনোয়ারার কন্যা রুমানাকে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মা তো কিছুদিন যাবৎ অনেক অসুস্থ। অনেক কিছুই মনে করতে পারে না। বাবা বলে গেল গানটি মা এখনো গুনগুন করে গান। দুদিন আগে শামিম (ইব্রাহিম) ভাইয়ের কথা বলেছেন। আজ উনি আসবেন জেনে এত খুশি হয়েছেন, একেবারে বাচ্চাদের মতো কান্না করে দিয়েছেন।’