৩৩ বছর পর ‘আশিক প্রিয়া’র দেখা হাসপাতালে
১৯৯২ সালে নতুন জুটি শামিম-সোনিয়াকে নিয়ে ‘আশিক প্রিয়া’ নির্মাণ করেন আওকাত হোসাইন। ছবিটি মুক্তি পায় পরের বছর। শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় শুরু করলেও নায়ক হিসেবে এ সিনেমা দিয়েই শামিমের অভিষেক। নায়িকা সোনিয়ারও এটি প্রথম সিনেমা। এরপর কেটে গেছে তিন দশক—শামিম-সোনিয়ার আর দেখা হয়নি। ৩৩ বছর পর গতকাল শনিবার আবার দুজনের দেখা হয়েছে।
এই দেখা হওয়াটাও যেন সিনেমার মতো। এমবিবিএস করে এখন ঢাকার একটি হাসপাতালে সনোলজিস্ট কনসালট্যান্ট হিসেবে কর্মরত সোনিয়া। একদিন চেম্বারে রোগী দেখছিলেন। এমন সময় শোনেন, বাইরে কে যেন তাঁর ডাকনাম ধরে সহকারীর কাছে তাঁর খোঁজ করছেন। মানুষটাকে চিনতে পারেন সোনিয়া, সম্পর্কে তাঁরই আত্মীয়। তিনিই প্রথম আলোতে শামিম ইব্রাহিমকে নিয়ে প্রকাশিত একটি খবরের কথা সোনিয়াকে জানান। গত ৪ মে প্রথম আলোতে ‘আশিক প্রিয়া সিনেমার আশিক এখন কোথায়’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছিল। সোনিয়া বলেন, ‘মাথায় চরিত্রের নাম ফয়সাল ছিল, শামিম ইব্রাহিম নামটা ভুলে গিয়েছিলাম। সে দেশে নাকি বিদেশে, তা–ও জানতাম না। প্রথম আলোর খবরটি দেখে ফেসবুকে তাঁর খোঁজ পাই।’
২০১৪ সালে পরিবার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান শামিম ইব্রাহিম। স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে থাকেন টেক্সাসের ডালাসে। চলতি মাসে দেশে আসেন তিনি। প্রথম আলোকে শামিম বলেন, ‘ঢাকায় এলে প্রতিবারই চেকআপ করানো হয়। সোনিয়ার সঙ্গে কয়েক মাস আগেই এত বছর পর কথা হলো। জানতে পারলাম সে চিকিৎসক। তো তার কাছেই চেকআপ করাতে চলে গেলাম।’ ধানমন্ডিতে সোনিয়ার সেই হাসপাতালেই তিন দশক পর দুজনের দেখা। অনেক স্মৃতিচারণা হলো। শামিম বলেন, ‘দুজনের পরিবার ও বাচ্চাদের নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। বেশ ভালো লাগছে।’ আরেকটা কারণেও এবারের আসাটা দীর্ঘদিন মনে রাখবেন শামিম, ‘শুক্রবার আনোয়ারা আন্টির সঙ্গে দেখা হয়েছে। ফলে অনেক ভালো কিছু স্মৃতি নিয়ে এবার যুক্তরাষ্ট্রে ফিরতে পারব।’ ৪৪ বছর পর অভিনেত্রী আনোয়ারার দেখা পেয়েছেন তিনি।
শুটিংয়ের সে সময়ের স্মৃতি স্মরণ করে সোনিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘বয়স আর তখন কত। শুটিং সম্পর্কেও তো ধারণা ছিল না। শুধু মনে পড়ে, আমরা একজন আরেকজনের সঙ্গে কোনো কথা বলতাম না। দৃশ্য শেষে কেউ কারও খবর রাখতাম না।’
‘তোমার আগে আর কেউ নেই, তোমার পরেও আর কেউ নেই/ যেখানেই যাই, যেদিকে তাকাই, শুধু তুমি শুধু তুমি, আমি আশিক তুমি প্রিয়া’—নব্বই দশকের অন্যতম সুপারহিট আশিক প্রিয়া সিনেমার গান। কুমার শানু ও কবিতা কৃষ্ণমূর্তির গাওয়া এ গানটির জনপ্রিয়তা এখনো কমেনি। এরপর একই পরিচালকের জানের বাজি সিনেমায় সর্বশেষ শামিমকে দেখা গেলেও সোনিয়া ফেরদৌসকে আর চলচ্চিত্রে পাওয়া যায়নি। ইউটিউবে সিনেমা ও এর গানের মন্তব্যে অনেকেই দুজনের খোঁজ চেয়েছেন। চলচ্চিত্রের বিভিন্ন পেজ ও গ্রুপেও তাঁদের সর্বশেষ অবস্থা জানতে পোস্ট দেওয়া হয়েছে। প্রথম আলোর প্রতিবেদনে শামিমের খোঁজ পাওয়া গেলেও সোনিয়ার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না।
সোনিয়া তখন ঢাকার একটি স্কুলে নবম শ্রেণির ছাত্রী। নাচ থেকে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা—সবকিছুতেই চ্যাম্পিয়ন। একই স্কুলে পরিচালক আওকাত হোসাইনের মেয়েও পড়ত। বাসায় গিয়ে সোনিয়াকে নিয়ে বাবার সঙ্গে অনেক গল্প করত। ‘আশিক প্রিয়া’ ছবির জন্য নতুন মুখ খুঁজছিলেন আওকাত হোসাইন। সোনিয়াকে দেখেই পছন্দ হয়ে যায়। স্ত্রীর মাধ্যমে সোনিয়ার বাসায় প্রস্তাব পাঠান। কিন্তু কোনোভাবেই সোনিয়ার বাবাকে রাজি করানো যাচ্ছিল না। অনেক জোরাজুরির পর রাজি হয় পরিবার। এ ছবির পর আবার পড়াশোনায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন সোনিয়া। এরপর এমবিবিএস শেষ চিকিৎসক।
সোনিয়ার এক ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়ে এ লেভেলে পড়ছে, আর ছেলে অষ্টম শ্রেণি। গত বছর প্রথমবার দুই সন্তানকে ‘আশিক প্রিয়া’ ছবিটি দেখিয়েছেন সোনিয়া।