‘সাবা’তে অভিনয়ের প্রস্তাব কীভাবে এল
মেহজাবীন: সবকিছু হঠাৎ করেই ঘটে। পরিচালক মাকসুদ হোসাইনের সহকারী আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, পরিচালক নিজে আমাকে গল্পটি শোনাতে চান। গল্পটা শুনতে বসে একধরনের আন্তরিকতা খুঁজে পেয়েছিলাম। গল্পটা আমার কাছে খুব আবেগপূর্ণ ও মানবিক মনে হয়েছিল। সাবা চরিত্রটাও বেস ইন্টারেস্টিং লাগে, চরিত্রের অনেকগুলো স্তর, তখনই ভেবেছিলাম যদি ঠিকভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারি, তাহলে এটি এমন একটি কাজ হবে, যা মানুষের কাছে আমাকে দীর্ঘদিন বাঁচিয়ে রাখবে।
প্রথম আলো :
এ গল্পটি দিয়েই কেন প্রথম সিনেমায় নাম লেখালেন?
মেহজাবীন: টেকনিক্যালি এটি আমার প্রথম সিনেমা না। ‘প্রিয় মালতী’ আমার প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা, তাই সেটাই সব সময় আমার প্রথম চলচ্চিত্র হিসেবে থাকবে। যদিও ‘সাবা’র দৃশ্যধারণ আগে হয়েছিল, কিন্তু মুক্তি পরে হয়েছে। গল্পটি শোনার সময়ই একধরনের টান অনুভব করেছিলাম। এর আবেগ এবং গভীরতা আমাকে আকৃষ্ট করেছিল, আর সে জন্যই কাজটি করার সিদ্ধান্ত নিই। সাধারণত আমরা যখন পরিচালকদের সঙ্গে দেখা করি বা কোনো চরিত্রের প্রস্তুতি শুরু করি, তখন পরিচালকই বলেন এই সিনেমাটা দেখো, এই বইটা পোড়ো, এই রিসার্চটা কোরো। কিন্তু আমি মাকসুদ হোসাইনকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘আপনি কেন এই গল্পটি আমার কাছে নিয়ে এসেছেন? এর আগে কি আপনি অন্য কারও কাছে এটি বলেছেন?’ পরিচালকের উত্তরে আমি সততা খুঁজে পাই। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি এর আগে তিনজন অভিনেত্রীর কাছে গিয়েছিলাম, কিন্তু সাবাকে খুঁজে পাইনি। এরপর আমি তোমার নাটকগুলো দেখতে শুরু করি, অনেকগুলোই দেখেছি, আমার বিশ্বাস হয়েছে, তুমি সাবাকে ফুটিয়ে তোলার ক্ষমতা রাখো।’ বিষয়টি খুব পছন্দ করেছিলাম, কারণ তিনি আমাকে বলেননি ‘তুমিই একমাত্র যাকে আমি সাবা হিসেবে দেখি’ বা ‘তুমি আমার প্রথম পছন্দ।’ তিনি বরং খোলামেলাভাবে সত্যিটাই বলেছেন। এই সততাটাই আমাকে টেনেছিল। তখনই অনুভব করেছিলাম, এই গল্প আর চরিত্র আমার করার মতো।
গল্পটি বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে নেওয়া। এতে অভিনয়ের জন্য আপনার মানসিক প্রস্তুতি কেমন ছিল?
মেহজাবীন: এই ছবিতে এমন অনেক কিছু ছিল, যেগুলোর জন্য আলাদা প্রস্তুতির প্রয়োজন ছিল, আবার অনেক কিছুই খুব স্বাভাবিকভাবে এসেছে। কোনো প্রস্তুতিই একা করা যায় না, এটা টিমওয়ার্কের ফল। আমি সাবার জন্য ঠিক সেইভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি, যেভাবে অন্য চরিত্রগুলোর জন্য নিই। আমরা রিহার্সাল করেছি, আর শুটিং শুরুর আগেই বুঝে গিয়েছিলাম আমি চরিত্রটিকে যেমনভাবে ভাবছি, পরিচালকও ঠিক তেমনভাবেই দেখছেন। এই বোঝাপড়াটাই আমাদের দুজনকেই চরিত্রটিকে জীবন্ত করে তুলতে সাহায্য করেছে।
প্রথম আলো :
চরিত্র ধারণ করতে গিয়ে চ্যালেঞ্জ কী ছিল?
মেহজাবীন: প্রত্যেক কাজেরই নিজস্ব কিছু চ্যালেঞ্জ থাকে। ‘সাবা’ ছবির ক্ষেত্রে সবচেয়ে কঠিন ছিল সাবা এবং তার মায়ের সম্পর্কটিকে বাস্তবভাবে ফুটিয়ে তোলা। কারণ তাদের সম্পর্কটা একদম সাধারণ মা-মেয়ের মতো নয়, বরং অনেক গভীর, জটিল এবং আবেগপূর্ণ। সেই সম্পর্কের বাস্তবতা তুলে ধরাটাই ছিল আমার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
গল্পের আবেগ ও চরিত্রের সঙ্গে আপনার ব্যক্তিগত অনুভূতির কোনো মিল বা সংযোগ কি অনুভব করেছেন?
মেহজাবীন: আমি কখনোই এমন কোনো চরিত্র বেছে নিতে চাই না, যার সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত জীবনের কোনো মিল আছে। কারণ, যদি চরিত্রের সঙ্গে আমার মিল থেকে যায়, তাহলে পর্দায় মানুষ আমাকে দেখবে, সাবাকে নয়। আমি চাই দর্শক কেবল চরিত্রটিকেই দেখুক। তাই ভবিষ্যতেও আমি এমন চরিত্রেই কাজ করতে চাই, যেগুলোর সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত জীবনের কোনো সাদৃশ্য নেই।
প্রথম আলো :
আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ‘সাবা’ প্রদর্শনের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
মেহজাবীন: এটা ছিল অবিশ্বাস্য এক অভিজ্ঞতা। ভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতির মানুষ যখন ছবির শেষে চোখের পানি আর করতালিতে সাড়া দিয়েছেন, তখন মনে হয়েছিল আমাদের পরিশ্রম সার্থক হয়েছে। সেই মুহূর্তটা আমি কোনো দিন ভুলব না। আমার জীবনের সেরা স্মৃতি হয়ে থাকবে। আসলে আবেগের তো কোনো ভাষা নেই। মানুষ যেখানেই থাকুক, ভালোবাসা আর মায়ের সম্পর্ক সবার কাছেই সমান। বিদেশি দর্শকের চোখে যখন সেই অনুভূতি দেখেছি, তখন সত্যিই মনে হয়েছে সিনেমা সব সীমান্ত ভেঙে মানুষকে এক করে দেয়।
প্রথমবার মোস্তফা মন্ওয়ারের সঙ্গে অভিনয় করলেন
মেহজাবীন: মোস্তফা মন্ওয়ার ভাই একজন অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং নিবেদিতপ্রাণ অভিনেতা। তাঁর সঙ্গে কাজ করার সময় অনুভব করেছি প্রতিটি দৃশ্যে তিনি একধরনের সত্যিকারের সংযোগ তৈরি করেন। কাজের সময় আমাদের মধ্যে যে বোঝাপড়াটা তৈরি হয়েছিল, সেটা পুরো অভিজ্ঞতাটাকে আরও সহজ এবং উপভোগ্য করে তুলেছিল।
প্রথম আলো :
অনেক নির্মাতার সঙ্গেই তো কাজ করেছেন, মাকসুদ হোসাইনের সঙ্গে কাজ করার সময় কি কোনো ভিন্নতা বা নতুন অভিজ্ঞতা হয়েছে?
মেহজাবীন: মাকসুদ ভাইয়ের কাজ করার ধরন একেবারেই আলাদা। তিনি শুধু একজন পরিচালক নন, তিনি একজন পর্যবেক্ষকও। তিনি জানেন কীভাবে একজন অভিনেতার ভেতরের অনুভূতিটা বের করে আনতে হয়। তাঁর সঙ্গে কাজ করা আমার জন্য নতুন এক অভিজ্ঞতা, যা নিঃসন্দেহে আমার ক্যারিয়ারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে থাকবে।