মনোনয়ন না পেয়ে যা বললেন এই তারকারা
দ্বাদশ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে একের পর এক তারকারা মনোনয়ন ফরম তুলে আলোচনায় ছিলেন। এই তালিকায় ছিলেন ১০ জনের বেশি তারকা। তাঁদের কেউ কেউ নিশ্চিত মনোনয়ন পেতে একাধিক আসন থেকেও মনোনয়ন তুলেছিলেন। মনোনয়নে এবার চমক দেখানোর আশা দেখছিলেন মিডিয়া অঙ্গনের মানুষেরা। মনোনয়ন নিয়ে তারকারা আলোচনায় থাকলেও বেশির ভাগ তারকাকে শেষ মুহূর্তে খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে। মনোনয়ন না পাওয়া এসব তারকারা কী বলছেন?
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী ফেনী-৩ আসন থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন। এই অভিনয়শিল্পী, সংগঠক ও রাজনীতিবিদ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক উপকমিটির সদস্য। এবারের নির্বাচনে অংশ নিতে শুরু থেকেই আলোচনায় ছিলেন। অভিনয়ের বাইরে রাজনীতিতেই তিনি বেশি সময় দিচ্ছেন। কিন্তু গতকাল রোববার মনোনয়ন ঘোষণা করা হয়। সেই তালিকা থেকে জানা যায়, তিনি দল থেকে মনোনয়ন পাননি।
রোকেয়া প্রাচী বলেন, ‘আমাদের নেত্রী যাঁকে ভালো মনে করেছেন, তাঁকেই দল থেকে মনোনয়ন দিয়েছেন। তিনি অবশ্যই আমাদের চেয়ে ভালো বোঝেন। আমি দলীয় প্রার্থী যাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, তাঁর সঙ্গে আছি। তাঁর সঙ্গে থাকা মানেই দলীয় আদর্শ। এর বাইরে গিয়ে আমি স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনের কথা মোটেও ভাবছি না। আগামী নির্বাচনে একসঙ্গে কাজ করব।’
বেশ কয়েক বছর ধরে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত চিত্রনায়ক শাকিল খান। তাঁর দাবি, ১৯ বছর ধরে তিনি এলাকার মানুষের পাশে থেকেছেন। এলাকার উন্নয়নে কাজ করছেন। তিনি এলাকার মানুষের কথা চিন্তা করে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চাচ্ছিলেন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বাগেরহাট-৩ (রামপাল ও মোংলা) আসনের জন্য মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন। কিন্তু মনোনয়ন পাননি। আজ সোমবার হোয়াটসঅ্যাপে তাঁকে ফোন করা হয়। তবে এখনই তিনি এ ব্যাপারে কথা বলতে চান না।
২০২১ সালে গাজীপুরের রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী কামরুজ্জামান সরকার রাকিবকে বিয়ে করেন মাহিয়া মাহি। বিয়ের পরদিন প্রথম আলোর মুখোমুখি হন মাহি। সেদিন তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, আপনার স্বামী তো রাজনীতি করেন, আপনার ভবিষ্যতে রাজনীতি করার ইচ্ছা আছে? এমন প্রশ্নে এই চিত্রনায়িকা সরাসরি উত্তর দেন, ‘আমি কেন রাজনীতি করব। সে-ই করবে।’ প্রথম দিকে মাহির রাজনীতি করার ইচ্ছা না থাকলেও হঠাৎ করেই গত বছর ২০২২ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসন শূন্য ঘোষণা করা হলে ওই আসনে মনোনয়ন চেয়ে প্রথম আলোচনায় আসেন। জানা যায়, তার পর থেকেই এলাকার মাঠে সরব ছিলেন।
গত বছর মনোনয়ন না পেলেও জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে তিনি আশাবাদী ছিলেন। অবশেষে মনোনয়ন পাননি। আজ মুঠোফোনে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। মনোনয়ন নিয়ে আশাবাদী ছিলেন। আপনার আসনে আপনাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। এখন কীভাবে ভোটের মাঠে থাকতে চান? এ প্রশ্নে মাহি বলেন, ‘দলীয়ভাবে যাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, তাঁর সঙ্গেই কাজ করব ইনশাআল্লাহ।’ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনো সে রকম কিছু ভাবছি না। দেখা যাক।’
গত জুলাই মাসে ঢাকা-১৭ আসন থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে মনোনয়ন নেওয়ার চেষ্টা করেন অভিনেতা সিদ্দিকুর রহমান। কিন্তু দল থেকে তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। এরপর কিছুদিন চুপ থাকলেও এবার জাতীয় নির্বাচনের আগে সক্রিয় হয়েছিলেন। একসঙ্গে দুই আসন থেকে মনোনয়ন ফরমও তুলেছিলেন। ঢাকা-১৭ (গুলশান, বনানী ও ক্যান্টনমেন্ট, ভাসানটেক) এলাকা ও টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর ও ধনবাড়ী) এলাকা। মনোনয়নের ব্যাপারে আশাবাদী থাকলেও মনোনয়ন না পাওয়া নিয়ে কষ্ট পেলেও দলের সঙ্গেই তিনি রয়েছেন। দলের জন্য কাজ করবেন।
সিদ্দিক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে আমি নৌকার জন্য কাজ করব। যদিও ডামি প্রার্থী হওয়ার সুযোগ রয়েছে, কিন্তু আমি হব না। আমি নৌকার বিপরীতে কাজ করতে চাই না। এখন আমার কথা হলো, হয়তো জনসমর্থন কম, এমন কেউ কোনো আসনে মনোনয়ন পেতে পারেন। তার মানে এই না যে নৌকার বিপরীতে কাজ করতে হবে। কনফিডেন্ট প্রার্থীরা চাইলে নির্বাচন করতে পারবেন। কিন্তু আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হব না।’
এদিকে বরিশাল-৩ আসন থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন চিত্রনায়ক রুবেল। মনোনয়ন সংগ্রহের সময় তিনি গণমাধ্যমে বলেন, ‘আমি ছাত্রজীবন থেকেই জয়বাংলা স্লোগান দিয়ে আসছি। অভিনয়–জগতের অন্যদের মতো আমি নতুন করে রাজনীতিতে আসিনি। আমার শেকড়ই আওয়ামী লীগের।’ তিনিও মনোনয়ন পাননি। দলীয় প্রার্থীর বাইরে নির্বাচনে অংশ নেবেন কি না, জানার জন্য ফোন করা হলে তাঁকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
ঢাকা-৮ আসন থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য কাজ করার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন গায়ক এসডি রুবেল। তিনি বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরেই সামাজিক কর্মের সঙ্গে জড়িত। মনোনয়ন পাইনি, কিন্তু আমি আমার জায়গা থেকে সবার সঙ্গে আছি। আর সেবামূলক কাজ আসলে যুদ্ধ করে হয় না। এই জন্য দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে চাই না। শান্তিপূর্ণভাবে মনোনয়ন পেয়ে সুযোগ পেলে একটা কথা ছিল। তবে আমার উদ্দেশ্য কখনোই এমপি হওয়া ছিল না, আমি মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ চেয়েছিলাম। যখনই সুযোগ পাব, তখনই বড় পরিসরে কাজ করব।’
গতকাল বিকেল চারটায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। সেই তালিকা থেকে জানা যায়, দলীয়ভাবে এবার তারকাদের মধ্যে মনোনয়ন পেয়েছেন অভিনয়শিল্পী আসাদুজ্জামান নূর ও লোকগানের জনপ্রিয় শিল্পী মমতাজ। তাঁরা যথাক্রমে নীলফামারী-২ এবং মানিকগঞ্জ-২ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন।
২০০১ সাল থেকেই আওয়ামী লীগের হয়ে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছেন আসাদুজ্জামান নূর। অন্যদিকে ২০০৯ সালে নবম জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মনোনীত হন মমতাজ বেগম। আর ২০১৪ সাল থেকে মানিকগঞ্জ-২ আসনে নির্বাচিত হয়ে সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মমতাজ। এবার তাঁদের সঙ্গে তারকা হিসেবে সংসদ নির্বাচনে প্রথমবার অংশ নিচ্ছেন ফেরদৌস। তিনি ঢাকা-১০ ও ১৮ থেকে মনোনয়ন চেয়ে ঢাকা-১০ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন।
ফেরদৌস গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আস্তে আস্তে ভোটের কার্যক্রম শুরু করব। চেষ্টা করব সবার কাছে যাওয়ার। সবার সহযোগিতা চাই। এবার নির্বাচন উপলক্ষে ৩ হাজার ৩৫৯ জন মনোনয়ন নিয়েছেন। সেই হিসাবে একটা আসনে ১১ থেকে ১২ জন করে আছেন। প্রত্যেকেই যোগ্য, আমার চেয়ে অনেক বেশি যোগ্য। আমার চেয়ে ত্যাগী নেতাও আছেন। সেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে নির্বাচন করেছেন, সারা জীবনের অন্যতম একটা শ্রেষ্ঠ পাওয়া।’