‘মৌসুমীকে জিজ্ঞেস কর’—গায়ক আসিফকে কড়া বার্তা ওমর সানির
একজন নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয় নায়ক, অন্যজন দেশের আলোচিত সংগীতশিল্পী—দীর্ঘদিন ধরে আলাদা অঙ্গনে কাজ করলেও ওমর সানি ও আসিফ আকবরের সম্পর্ক ছিল সৌহার্দ্যপূর্ণ। সেই পরিচিত ছকে হঠাৎই যেন ফাটল ধরেছে। ক্রিকেট–ফুটবল প্রসঙ্গে দেওয়া একটি মন্তব্য ঘিরে শুরু হওয়া বিতর্ক ক্রমেই মোড় নেয় ব্যক্তিগত পাল্টাপাল্টি আক্রমণে। টেলিভিশনের স্টুডিও থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—সবখানেই ছড়িয়ে পড়ে এই দুই তারকার প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব।
ইদানীং সিনেমায় নিয়মিত না থাকলেও নব্বই দশকের জনপ্রিয় নায়ক ওমর সানি এখন ব্যবসায় মনোযোগী। ঢাকার অদূরে একটি রেস্টুরেন্ট চালু করে সেখানেই বেশির ভাগ সময় কাটাচ্ছেন তিনি। অন্যদিকে ২০০১ সালে ‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’ অ্যালবাম দিয়ে সংগীতাঙ্গনে ঝড় তোলা আসিফ আকবর এখনো গানের জগতে সক্রিয়। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক নির্বাচিত হয়েছেন। নতুন দায়িত্ব পাওয়ার পর ক্রিকেট অঙ্গন ও গণমাধ্যমে তাঁর উপস্থিতিও বাড়ে।
এই নতুন ভূমিকায় থেকেই এক আলোচনায় আসিফ আকবর ফুটবলকে কেন্দ্র করে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘ফুটবলারদের কারণে গোটা দেশে ক্রিকেট খেলা যাচ্ছে না। তারা উইকেট ভেঙে ফেলে এবং প্রতিটি জেলার স্টেডিয়াম দখল করে রেখেছে। এমনকি যেখানে ফুটবলের আয়োজন নেই, সেখানেও স্টেডিয়াম ব্যবহার করছে।’
এই মন্তব্য ঘিরে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানায় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। এক চিঠিতে বাফুফে এই বক্তব্যকে ‘দৃষ্টিকটু ও অশোভন’ আখ্যা দিয়ে জানায়, ফুটবল ও ফুটবলারদের নিয়ে এমন মন্তব্য ক্রীড়ার মৌলিক মূল্যবোধের পরিপন্থী। ফুটবলকে শুধু খেলা নয়, কোটি মানুষের আবেগ, ঐক্য ও গৌরবের প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করে বাফুফে এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানায়।
বাফুফের এই অবস্থানের পর বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানান ওমর সানি। তিনি সংক্ষেপে বলেন, ‘এসব চেয়ারের দোষ, ক্ষমতার।’ তাঁর বক্তব্যে ইঙ্গিত ছিল—নতুন দায়িত্ব ও ক্ষমতার অবস্থান থেকেই হয়তো আসিফ এমন মন্তব্য করেছেন। তখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার ঝড় উঠলেও কিছুদিন পর বিষয়টি খানিকটা স্তিমিত হয়ে আসে।
তবে বিতর্ক নতুন করে চাঙা হয় ‘বিহাইন্ড দ্য ফেম উইথ আরআরকে’ নামের এক পডকাস্ট অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠানটির সঞ্চালক রুম্মান রশীদ খান পুরোনো প্রসঙ্গ তুললে আসিফ এবার সরাসরি ওমর সানিকে কেন্দ্র করেই কথা বলেন। সেখানে তিনি ওমর সানির পেশা ও ব্যক্তিজীবন নিয়ে নানা কটাক্ষ করেন। তাঁর ভাষায়, ‘তিনি একটু সহজ–সরল মানুষ। চাপ–টাপ বিক্রি করেন। হয়তো ভাবছে, এ রকম কিছু বললে বাফুফে তার কাছ থেকে চাপ–টাপ কিনবে। উনি তো সংসার ঠিকমতো করতে পারছেন না। উনি একজন নারী শাসিত পুরুষ…। ফেসবুকই তাঁর বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন।’ একপর্যায়ে সমালোচনার সুর আরও তীব্র হয়ে ওঠে, যদিও শেষাংশে তিনি বলেন, ‘আমি ওমর সানি ভাইকে ভালোবাসি।’
এই মন্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই আবারও বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই একজন শিল্পীর ব্যক্তিগত জীবন টেনে আনার বিষয়টিকে ‘অপেশাদার’ ও ‘অশোভন’ মন্তব্য হিসেবে দেখছেন।
আসিফ আকবরের এই বক্তব্যের জবাবে আজ সোমবার সকালে একটি ভিডিও বার্তা দেন ওমর সানি। ভিডিওর শুরুতেই তিনি জানান, রাতেই ওমরাহ পালনে সৌদি আরব যাচ্ছেন। তবে যাওয়ার আগে এই মন্তব্যের জবাব দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন তিনি।
ওমর সানি বলেন, ‘আসিফ মাছরাঙা টেলিভিশনে আমার সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করেছে। আমি কিন্তু ওর সম্পর্কে বলেছিলাম, চেয়ারের গরম। ব্যক্তি আসিফ তাঁর পরিবার–পরিজনকে নিয়ে কোনো কথা বলিনি। ওকেও খারাপ কিছু বলিনি। ব্যক্তিজীবনে সে কি করে না করে আমি সবই জানি। কিন্তু আমি কোনো কথা বলিনি। ওর নোংরা জীবনের কোনো কথাই আমি বলিনি; কিন্তু আসিফ তুই মাছরাঙা টেলিভিশনে বললি, আমি নারী শাসিত! আসিফ তুই মৌসুমীকে জিজ্ঞেস কর, আমার অবস্থান কোথায়। ব্যক্তিজীবন নিয়ে তোর কথা বলার কোনো দরকার আছে ..? আমাকে নিয়ে সমালোচনা কর। তুই চাপ বিক্রি নিয়ে কথা বলিস, ব্যক্তিজীবন নিয়ে কথা বলিস! সংসার নিয়ে কথা বলিস! আরে ওই তোর কি অবস্থা? ওই আসিফ, তোর কি অবস্থা?’
একপর্যায়ে তিনি হাত দেখিয়ে বলেন, ‘হাতটা দেখছোস ... আজকে আমি ঢাকা শহরে আছি। তোর যদি সাহস থাকে, আমার সাথে আইসা কথা বল। আমি তোরে তুমি, আপনি করে কথা বলেছি, ভদ্রভাবে কথা বলছি। পুরো বাঙালি জাতিকে চ্যালেঞ্জ করছি, তোর ব্যক্তিজীবন নিয়ে কথা বলেছি? আমি ফুটবল নিয়ে কথা বলছি। চেয়ার নিয়ে কথা বলছি, ক্ষমতা নিয়ে কথা বলেছি। দ্যাটস ইট।’ এক পর্যায়ে আসিফ আকবরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে এনে ওমর সানি বলেন, ‘তোর মতো একটা ফাজিল যে আর্জেন্টিনা–ব্রাজিল নিয়ে অনেক বাজে বাজে কথা বলিস! তোর কোনো ব্যক্তিত্ব আছে? তুই আমার আর মৌসুমীর সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারবি?’ সবশেষে আসিফের প্রতি পরামর্শ দিয়ে ওমর সানি বললেন, ‘এখনো ভালো হ। আল্লাহ সম্মান দিয়েছে, বয়স হইছে। ভাবী (আসিফ আকবের স্ত্রী) অনেক ভালো একজন মানুষ। বাচ্চারা অনেক ভালো, বিয়েশাদি দিছিস, দাদা হইছিস। ভালো হ, ভদ্র হ। ব্যক্তিজীবন নিয়ে কথা বলবি না আসিফ। এগুলো ভালো না। একদমই ভালো না।’
এভাবেই ক্রিকেট–ফুটবল ঘিরে শুরু হওয়া বিতর্ক ক্রমে রূপ নেয় দুই তারকার প্রকাশ্য ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বে, যা নিয়ে আপাতত থামছে না আলোচনা।