ভিডিও কলে মায়ের মুখে এমন হাসি দেখে প্রাণটি জুড়িয়ে গেল: চঞ্চল চৌধুরী

মা ও বাবার সঙ্গে চঞ্চল চৌধুরী
ছবি: সংগৃহীত

গত বছরের ডিসেম্বরে অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরীর বাবা রাধাগোবিন্দ চৌধুরী মারা যান। এরপর বেশ কিছুদিন কাজও বন্ধ রেখেছিলেন তিনি। বাবার মৃত্যুর পর চঞ্চলের মা নমিতা রানী এখন সন্তান আর নাতি-নাতনিদের সঙ্গেই সময় কাটান।

‘পদাতিক’ চলচ্চিত্রের শুটিং করতে চঞ্চল চৌধুরী চলতি মাসের শুরুতে কলকাতায় যান। কয়েক দিন আগে চঞ্চলের মা নমিতা রানী তাঁর ঢাকার বাসায় এসেছেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় মায়ের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেন। এরপর মায়ের হাসিমুখের কয়েকটি স্ক্রিনশট শেয়ার করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন এই অভিনেতা।

মা খুব সুন্দর করে ভিডিও কলে কথা বলতে পারেন, মানে ফ্রেমিং খুব সুন্দর হয়। আর বাবা ছিল ঠিক বিপরীত, ফ্রেমিং খুব বাজে। ভিডিও কলে বাবার পুরো চেহারাটা কখনো দেখা হয়নি। কেমনভাবে যেন ফোনটা মুখের সামনে ধরত, হয় শুধু কপাল, না হয় শুধু থুতনি দেখা যেত। প্রায়ই তাঁর আঙুল লেগে ভিডিও অফ হয়ে যেত।

ফেসবুক পোস্টের একাংশে চঞ্চল লিখেছেন, ‘অনেক দিন পর, মায়ের মুখে এমন হাসি দেখে প্রাণটি জুড়িয়ে গেল। বাবা চলে যাওয়ার পর আমরা সবাই যখন শোকে ভেঙে পড়ি, উল্টো মা-ই আমাদের বুকে টেনে নিয়ে সান্ত্বনা দেন। আমি সৃজিত মুখার্জির “পদাতিক” ছবির শুটিংয়ের কারণে মায়ের কাছে বেশি দিন থাকতেও পারিনি, কলকাতা চলে আসতে হয়েছে।’

বাবার সঙ্গে চঞ্চল চৌধুরী
ছবি: সংগৃহীত

প্রথম আলোকে চঞ্চল চৌধুরী বলেন, ‘মায়ের অনুমতি নিয়েই কলকাতায় শুটিংয়ে এসেছি। কিন্তু মন তো পড়ে আছে মায়ের কাছে। শুটিংয়ের কারণে আমি এখন দেশের বাইরে। তাই প্রতিদিনই মায়ের খবর নিই ভিডিও কলে। আজ (শুক্রবার) শাহনাজ খুশি, বৃন্দাবন দাদা ও তাঁদের দুই সন্তান আমার বাসায় মাকে দেখে এসেছেন। ওই সময় ভিডিও কলে মায়ের সঙ্গে কথা হলো। মাকে অনেক দিন পর হাসিমুখে দেখতে পেলাম। আমার মন-প্রাণ জুড়িয়ে গেছে। মায়েদের মুখের হাসি সকল সন্তানের অন্তরেই শান্তির পরশ বুলিয়ে দেয়। কথা বলার সময় স্ক্রিনশট নিয়ে ফেসবুকে দিয়েছি, মা হয়তো ব্যাপারটি জানেই না।’

মৃণাল সেনের চরিত্রের চঞ্চল চৌধুরী
ছবি: সংগৃহীত

স্ট্যাটাসের আরেক অংশে চঞ্চল লিখেছেন, ‘মাঝে মাঝে ভিডিও কলে কথা বলি সবার সঙ্গে, মায়ের সঙ্গে। শক্তি আর সান্ত্বনা খুঁজে বেড়াই। কাজ করে চলি। এমনভাবে কাজের ভেতর ডুবে থাকি যে মাঝেমধ্যে ঘোর কাটেনি, মনে হয় দেশে ফিরলেই তো বাবাকে দেখতে পাব। চোখের কোনায় জল জমে, আবার বাস্তবে ফিরে আসি।’

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

চঞ্চল জানান, সন্তানের প্রতি বাবা-মায়ের যে কী দরদ, সেটি তাঁর ছেলে শুদ্ধ জন্মের আগে বোঝেননি। তিনি বললেন, ‘একসময় মা-বাবার কাছে আমরা ভাইবোন ছোট ছিলাম। এখন বাবা-মা আমাদের কাছে ছোট সন্তানের মতো হয়ে গেছে। কারণ, ৭০ বছরের বিবাহিত জীবন ছিল তাঁদের, এক ছাদের নিচে বসবাস করা জুটি ভেঙে গেছে। তারা দুজন একে অপরের ছাড়া কখনোই থাকত না। বাবা মারা যাওয়ার পর মা আরও বাচ্চা হয়ে গেছে। আমাদের কাছে যেন তিনি এখন ছোট্ট সন্তান। আমি আগে বিদেশে গেলে তেমন একটা মন খারাপ হতো না। আমার সন্তান শুদ্ধ জন্মের পর তা বুঝেছি। এই যে এখন দেশের বাইরে আছি, আমার শিশুর মতো মায়ের কথা খুব মনে পড়ছে। তাই প্রতিদিনই ভিডিও কলে কথা বলি।’

মৃণাল সেনের বায়োপিক ‘পদাতিক’–এর শুটিংয়ে চঞ্চল

স্ট্যাটাসের অন্য একটি অংশে বাবা–মাকে নিয়ে স্মৃতিস্মরণ করে এই অভিনেতা লিখেছেন, ‘মা খুব সুন্দর করে ভিডিও কলে কথা বলতে পারেন, মানে ফ্রেমিং খুব সুন্দর হয়। আর বাবা ছিল ঠিক বিপরীত, ফ্রেমিং খুব বাজে। ভিডিও কলে বাবার পুরো চেহারাটা কখনো দেখা হয়নি। কেমনভাবে যেন ফোনটা মুখের সামনে ধরত, হয় শুধু কপাল, না হয় শুধু থুতনি দেখা যেত। প্রায়ই তাঁর আঙুল লেগে ভিডিও অফ হয়ে যেত। অনেক রাগ করতাম বাবার ওপর, কেন ভিডিও কল করা ভালোমতো শিখছে না? শেষের দিকে এসে বাবার শ্রবণশক্তিও কমে গিয়েছিল। মুখস্থ কিছু কথা বলেই ফোনটা মাকে ধরিয়ে দিত। বাবার এই টেকনিকটা আমরা ধরে ফেলেছিলাম। এ নিয়ে আমরা ভাই-বোনেরা সবাই হাসাহাসিও করতাম।’

এই অভিনেতা বলেন, ‘এখন আমাদের আট ভাইবোনের কাছে সেই বাবা শুধুই স্মৃতি। মনটা খুব কাঁদে। শেষের দিকে এসে বাবার যে স্মরণশক্তি কমে গিয়েছিল, বুঝতে পেরে বাবার জন্য অনেক দামি হেডফোন, কানের মেশিন কিনে দিয়েছিলাম। কিন্তু ব্যবহার করতে চাইতেন না। হারিয়েও ফেলেছিলেন।’

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন