‘জীবন থেকে নেয়া’, ‘আগুনের পরশমণি’—১০ তারকার প্রিয় মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা কোনগুলো
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ১০ নির্মাতা, অভিনয়শিল্পী ও সংগীতশিল্পীর কাছে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রিয় ৩ সিনেমার তালিকা চেয়েছিল প্রথম আলো।
এতে অংশ নেন জয়া আহসান, শাকিব খান, গিয়াস উদ্দিন সেলিম, চঞ্চল চৌধুরী, শিহাব শাহীন, শারমীন সুলতানা সুমী, তানিম নূর, রায়হান রাফী, তাসনিয়া ফারিণ ও খায়রুল বাসার।
তালিকাটি বিশ্লেষণ করে মোট ১৩টি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমার নাম পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ পাঁচ তারকার প্রিয় সিনেমার তালিকায় জহির রায়হানের ‘জীবন থেকে নেয়া’ সিনেমাটি রয়েছে।
তালিকাটি বিশ্লেষণ করে মোট ১৩টি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমার নাম পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ পাঁচ তারকার প্রিয় সিনেমার তালিকায় জহির রায়হানের ‘জীবন থেকে নেয়া’ সিনেমাটি রয়েছে। তাঁরা হলেন জয়া আহসান, শাকিব খান, চঞ্চল চৌধুরী, রায়হান রাফী ও খায়রুল বাসার।
জহির রায়হানের কালজয়ী সিনেমাটি মুক্তিযুদ্ধের আগে নির্মিত, সিনেমাটিতে স্বাধীনতা আন্দোলনকে রূপকের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। সিনেমাটি নিয়ে জয়া আহসান বলেছেন, ‘আমার অসম্ভব প্রিয় আরেক ছবি “জীবন থেকে নেয়া”। একটি পরিবারের ভেতর দিয়ে দেশ চালানোকে কীভাবে দেখানো যায়, সেটা আমরা সিনেমাটির মাধ্যমে দেখতে পারি।’
‘জীবন থেকে নেয়া’ নির্দিষ্ট কোনো ঘরানার নয়, সব শ্রেণির সিনেমা হয়ে উঠেছে।শাকিব খান, অভিনেতা
‘জীবন থেকে নেয়া’ নিয়ে শাকিব খান বলেছেন, ‘আমার কাছে মনে হয়, “জীবন থেকে নেয়া” নির্দিষ্ট কোনো ঘরানার নয়, সব শ্রেণির সিনেমা হয়ে উঠেছে। একেবারে সাধারণ মানুষ যেমন ছবিটি দেখে এন্টারটেইনড হয়েছে, স্বাধীনতার বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরেছে, তেমনি বোদ্ধাশ্রেণির মানুষও খুব সহজেই সবকিছু রিলেট করতে পেরেছে। আমার কাছে এই ছবি মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে তৈরি একটা মাস্টারপিস। বিনোদনের মাধ্যমে এই ছবির গল্প মুক্তিযুদ্ধকে এমনভাবে নাড়া দিয়েছে, এটা সত্যি অন্য রকম।’
সিনেমাটি নিয়ে খায়রুল বাসার বলেছেন, ‘“জীবন থেকে নেয়া” সিনেমায় একটি পরিবারের গল্পের মধ্য দিয়ে তৎকালীন রাজনৈতিক অবস্থার জটিল বিষয় আমাদের সহজ করে বলেছেন শ্রদ্ধেয় জহির রায়হান। তা ছাড়া এ সিনেমার গানগুলো মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে জাগরণের গানে পরিণত হয় এবং আমাদের জাতীয় সংগীত আমরা শুনি এ সিনেমায়। মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে তা জাতীয় সংগীত হিসেবে স্বীকৃত হয়।’
‘জীবন থেকে নেয়া’ সিনেমায় সুচন্দা, রাজ্জাক, রোজী, আনোয়ার হোসেন, শওকত আকবর, রওশন জামিল, আমজাদ হোসেনসহ অনেকে অভিনয় করেছেন।
তারকাদের প্রিয় সিনেমার তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র ‘আগুনের পরশমণি’। সিনেমাটি জয়া আহসান, চঞ্চল চৌধুরী, তানিম নূর, রায়হান রাফীর প্রিয় সিনেমার তালিকায় রয়েছে।
জয়া আহসান বলেছেন, ‘“আগুনের পরশমণি” সিনেমায় দেখি, যুদ্ধের পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের দমবন্ধকর অবস্থা ও মানুষের আবেগের বিষয়টি সুন্দরভাবে উঠে এসেছে।’
‘আগুনের পরশমণি’ সিনেমায় দেখি, যুদ্ধের পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের দমবন্ধকর অবস্থা ও মানুষের আবেগের বিষয়টি সুন্দরভাবে উঠে এসেছে।’জয়া আহসান, অভিনেত্রী
‘আলোর পরশমণি’ সিনেমায় বিপাশা হায়াত, আসাদুজ্জামান নূর, আবুল হায়াতসহ অনেকে অভিনয় করেছেন।
তালিকায় যুগ্মভাবে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ‘আলোর মিছিল’, ‘আবার তোরা মানুষ হ’ ও ‘মাটির ময়না’। এর মধ্যে ‘আলোর মিছিল’ শাকিব খান, শিহাব শাহীন, শারমীন সুলতানা সুমীর প্রিয় সিনেমা।
শাকিব খান বলেছেন, ‘“আলোর মিছিল” আমার দেখা আরেকটি প্রিয় সিনেমা। ছবির গল্পে সদ্য স্বাধীন হওয়া বিপর্যস্ত দেশে মুক্তিকামীদের লড়াই, অভাব-অনটনের মধ্যে একশ্রেণির দুর্নীতিবাজের রাতারাতি ধনী হওয়া এবং সমাজের সুবিধাবাদী, লোভী মানুষের শুধু নিজের ক্ষমতা ও প্রভাব-প্রতিপত্তির জন্য দেশের সর্বনাশের বিষয়টি সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে।’
নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত ‘আলোর মিছিল’ সিনেমায় রাজ্জাক, ববিতা, সুজাতা, আনোয়ার হোসেন, রোজী, ফারুকসহ অনেকে অভিনয় করেছেন।
‘আবার তোরা মানুষ হ’ সিনেমাটি শাকিব খান, শিহাব শাহীন, শারমীন সুলতানা সুমীর প্রিয় সিনেমার তালিকায় রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের পরপরই নির্মিত সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন খান আতাউর রহমান।
গিয়াস উদ্দিন সেলিম, তানিম নূর, রায়হান রাফীর প্রিয় সিনেমার তালিকায় রয়েছে ‘মাটির ময়না’। তারেক মাসুদ নির্মিত সিনেমাটিতে রোকেয়া প্রাচী, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়সহ অনেকে অভিনয় করেছেন।
যুগ্মভাবে তালিকার চতুর্থ স্থানে রয়েছে চাষী নজরুল ইসলামের ‘ওরা ১১ জন’ ও ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’, নাসির উদ্দীন ইউসুফের ‘গেরিলা’, মোরশেদুল ইসলামের ‘আমার বন্ধু রাশেদ’।
যুগ্মভাবে পঞ্চম স্থানে রয়েছে সুভাষ দত্তের ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’, হুমায়ূন আহমেদের ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, তারেক মাসুদ ও ক্যাথরিন মাসুদের প্রামাণ্যচিত্র ‘মুক্তির গান’ এবং জাহিদুর রহিম অঞ্জনের ‘মেঘমল্লার’।
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক মনজুরুল আলম।)