বন্ধুত্ব নিয়ে বিরূপ অভিজ্ঞতা ছিল সালমান শাহর, বললেন নীলা চৌধুরী
ঢালিউডের জনপ্রিয় নায়কদের মধ্যে এখনো তাঁকে সহজে আলাদা করা যায়। তিনি সালমান শাহ। প্রয়াত এই নায়কের জনপ্রিয়তা এখনো কমেনি। আজ বন্ধু দিবসে জানার চেষ্টা করেছি, ঢালিউড এই তারকার কাছের বন্ধু ছিলেন কারা? সেটাই জানতে চেয়েছিলাম সালমানের মায়ের কাছে। যুক্তরাজ্য থেকে তিনি শোনালেন বিনোদন দুনিয়ায় সালমানের বন্ধুত্ব নিয়ে বিরূপ অভিজ্ঞতার কথা।
শৈশব থেকে পারিবারিক শিক্ষায় বেড়ে ওঠা সালমান শাহর তেমন কোনো বন্ধুই নাকি ছিল না। নীলা চৌধুরী জানালেন, ছেলেকে শৈশব থেকেই বাইরে তেমন কারও সঙ্গে মিশতে দিতেন না। শৈশব থেকেই বেশির ভাগ সময় পড়াশোনা আর খেলাধুলাতেই ব্যস্ত রাখতেন।
সালমানের মা বলেন, ‘ইমন (সালমান শাহ) যে স্কুলে পড়ত, সেখানে কারও কারও সঙ্গে ভালো সম্পর্ক হয়েছিল। কিন্তু কাছের বন্ধু বলতে যেটা বোঝায়, তেমনটা খুব একটা ছিল না। থাকলে তো সে বলত। তবে সহপাঠী ছিল অনেকেই। তাঁদের সঙ্গে ক্লাসেই যেটুকু মেশার সময় হতো। এর বাইরে ক্লাস শেষ হলেও সে সঙ্গে সঙ্গে গাড়িতে বাসায় চলে আসত। কখনোই কারও সঙ্গে বাড়তি কোনো আড্ডা দিত না। এটা আমাদের পরিবারের একটা আদর্শ ছিল।’
নীলা চৌধুরী আরও জানান, সালমান শাহর জন্য পরিবারটাই ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ একটা জায়গা। সেখানে তাঁর সবচেয়ে কাছের ছিলেন মা ও বাবা। ‘আমরা তাকে সব সময় চোখে চোখে রাখতাম। আমাদের বাইরে তার করার মতো তেমন কিছুই ছিল না। যে কারণে আমাকে সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করত। বন্ধুর মতো সবই বলে দিত। পরে একসময় বুঝতে পারি, সালমানের কাছের বন্ধু তেমন কেউ নেই। সালমানই নয়, আমাদের পরিবারে আমি, সালমানের বাবা কারোরই বাইরে খুবই ক্লোজ বন্ধু ছিল না’, বলেন নীলা চৌধুরী।
শৈশবে সালমান শাহর বেশির ভাগ সময় কাটত পড়াশোনা করে। এর মধ্যে অল্প সময়ের জন্য খেলার বিরতি পেতেন। বাসার পাশেই খেলতেন। সেটাও নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। জানা গেল, বাসা থেকেই খেলার মাঠ দেখা যেত। ওপর থেকে ডাকলেই সালমান বাসায় চলে আসতেন। নীলা চৌধুরী বলেন, ‘বাসার পাশেই খেলতে গিয়ে অন্তু, মোস্তাকসহ কয়েকজনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক একসময় হয়েছিল। খেলার ফাঁকেই তাদের সঙ্গে কিছুটা আড্ডা দিত। এভাবেই কয়েকজনের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হয়েছিল, সেটাই বলার মতো।’
একসময় কিশোর সালমান অভিনয়ে নাম লেখান। নাটক থেকে সিনেমার নায়ক হন। তারপর মিডিয়ার অনেকেই সালমান শাহকে বন্ধু হিসেবে পরিচয় দিতে থাকেন। মিডিয়ার বন্ধুদের নিয়ে বিরূপ অভিজ্ঞতার কথা মায়ের কাছে বলতেন সালমান শাহ।
সেসব অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে নীলা চৌধুরী বলেন, ‘ইমনের নাম ভাঙিয়ে মিডিয়ার অনেকেই বন্ধু বলে পরিচয় দিত। এগুলো নিয়ে ছেলে বলত, “আম্মা, এরা অনেকে আমাকে বন্ধু পরিচয় দেয়। কিন্তু এরা আসলে আন্তরিক না। বন্ধুসুলভ মনোভাবের না।” তখন আমিই বলতাম এদের এড়িয়ে চলতে। কিন্তু একসময় শুটিং না থাকলে তাদের অনেকেই ফোন দিয়ে সালমানকে বাইরে ডাকত। অনেক সময় বাধ্য হয়ে তাকে হয়তো বাইরে যেতে হতো।’
শুটিংয়ের বাইরে সালমান শাহ বেশির ভাগ সময় বাসায়ই কাটাতেন। ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিতেন বেশির ভাগ সময়। এর মধ্যে বিশেষ কোনো দিনে যদি কোনো বন্ধু ফোন দিতেন তখন বাধ্য হয়ে অল্প সময়ের জন্য বাইরে যেতেন। ‘অনেকেই জানত সালমানের কাছে টাকা আছে। কোনো পার্টি হলে সেই সব খরচ দেবে। সেটাই হতো। ইমন (সালমান) টাকাপয়সা দিয়েই চলে আসত। এভাবে কি কোনো বন্ধুত্ব তৈরি হয়? স্বার্থ থাকলে কখনোই কোনো বন্ধু হয় না। বন্ধু হয় নিঃস্বার্থভাবে। অভিনয় শুরুর পরেও ইমন আসল সেই বন্ধুর দেখা আর পায়নি’, বলেন নীলা চৌধুরী।
নিজের অভিজ্ঞতা থেকে নীলা চৌধুরী বলেন, ‘আমার ছেলের সঙ্গে এক নায়িকা শৈশবে কয়েক দিন পড়েছিল। তাকে আমরা কেউ চিনতাম না, জানতাম না। সেই নায়িকাও ইমনকে সেরা বন্ধু বলে পরিচয় দিত। এসব নিয়ে আমরা কখনোই কোনো কথা বলতাম না। কেউ বন্ধু মনে করলে করুক। কিন্তু মিডিয়ার মানুষদের বিশ্বাস করা কঠিন ছিল। যে কারণে মিডিয়ার বন্ধু বানানো নিয়ে ছেলেকে প্রায়ই সাবধান করতাম। এখানে সুযোগ বুঝে বন্ধু বলে ক্ষতি করতে কারও হৃদয় কাঁপে না। অনেকেই আমার ছেলের ক্ষতি করেছে।’