‘১৫+’ ছবিও পেয়ে যাচ্ছে ‘ইউ’ সার্টিফিকেট

সার্টিফিকেশন আইনের বিধিমালা না হওয়ায় ‘১৫+’ ছবিও পেয়ে যাচ্ছে ‘ইউ’ সার্টিফিকেটছবি: কোলাজ

‘ইউ’ ক্যাটাগরিতে সার্টিফিকেশন সনদ পেয়েছে ‘নীলচক্র’। তবে সার্টিফিকেশন বোর্ডের সদস্যদের ভাষ্য, ছবিটি ১৫+ রেটিং পাওয়ার উপযুক্ত। তবে এখনো সার্টিফিকেশন আইনের বিধিমালা চূড়ান্ত না হওয়ায় রেটিংও চালু হয়নি। ফলে সেন্সরশিপ আইনের বিধিমালায় সিনেমাটিকে ‘ইউ’ ক্যাটাগরি দিতে হয়েছে।

সার্টিফিকেশন বোর্ডের সদস্য নির্মাতা ও প্রযোজক রফিকুল আনোয়ার জানান, সার্টিফিকেশন আইনের বিধিমালা না হওয়ায় নীলচক্র ছাড়াও বেশ কয়েকটি সিনেমা সার্টিফিকেশন সনদ দিতে গিয়ে জটিলতার মুখে পড়ে বোর্ড।

২০২৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ড’ গঠন করে সরকার। তবে এক বছরেও সার্টিফিকেশন আইনের বিধিমালা চূড়ান্ত হয়নি।

২০২৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ড’ গঠন করে সরকার। ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইন, ২০২৩’-এর ৩-এর উপধারা (১) অনুসারে গঠিত হয়েছে এই বোর্ড।

সার্টিফিকেশন বোর্ডের মূল কাজ সিনেমার রেটিং দেওয়া। কোন সিনেমা কোন বয়স ও শ্রেণির দর্শকের জন্য উপযোগী, তা নির্ধারণ করে বোর্ড। তবে বিধিমালা চূড়ান্ত না হওয়ায় সিনেমায় রেটিং দিতে পারছে না সার্টিফিকেশন বোর্ড।

সার্টিফিকেশন বোর্ডের সদস্যদের ভাষ্য, ‘নীলচক্র’ সিনেমাটি ১৫+ রেটিং পাওয়ার উপযুক্ত। তবে বিধিমালা না হওয়ায় ‘ইউ’ সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে
নির্মাতার সৌজন্যে

সার্টিফিকেশন যুগে এসেও সেন্সর আইনে সিনেমা দেখছে বোর্ড। গত এক বছরে প্রায় ১০০ সিনেমা ছাড়পত্র পেয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ সিনেমা ‘ইউ’ ক্যাটাগরি পেয়েছে।

সার্টিফিকেশন বোর্ড বলছে, আপাতত ‘চলচ্চিত্র সেন্সরশিপ আইন, ১৯৬৩’-এর ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সরশিপ বিধিমালা, ১৯৭৭’ অনুসারে সিনেমা দেখছে বোর্ড। এই বিধিমালায় আনরেস্ট্রিক্টেড (সর্বজনীন) ও অ্যাডাল্ট (প্রাপ্তবয়স্ক ১৮+)—দুই ক্যাটাগরিতে সিনেমা ছাড়ার সুযোগ রয়েছে।

আরও পড়ুন
গত এক বছরে প্রায় ১০০ সিনেমা ছাড়পত্র পেয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ সিনেমা ‘ইউ’ ক্যাটাগরি পেয়েছে।

তবে সেন্সরশিপ আইনের বিধিমালায় বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে বলে জানালেন রফিকুল আনোয়ার। তিনি বলেন, ‘কিছু কিছু ছবির অ্যাসেসমেন্ট (মূল্যায়ন) করতে সমস্যা হয়। কোনো ছবি হয়তো ভাবতেছি “১৫+” দিলে ভালো হতো, সেই ছবির হয়তো “১৮+” দরকার নেই। কিন্তু রেটিং না থাকায় ছবিটিতে “১৫‍+” দেওয়ার সুযোগ নেই। দেখা গেল, ছবিটা “ইউ” কিংবা “১৮+” ক্যাটাগরিতে ছাড়তে হচ্ছে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সার্টিফিকেশন বোর্ডের আরেক সদস্য প্রথম আলোকে জানান, রেটিং চালু না হওয়ায় তাঁদের সামনে দুই ক্যাটাগরির বাইরে আর কোনো বিকল্প নেই। ফলে সিনেমার যথাযোগ্য মূল্যায়ন করা কঠিন। সিনেমা ছাড়তে অনেক সময় ধন্দে পড়তে হয়।

২০২৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ড’ গঠন করে সরকার
ওয়েবসাইটের স্ক্রিনশট
আরও পড়ুন

চলচ্চিত্র প্রযোজক শাহরিয়ার শাকিল গত সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সার্টিফিকেশন বোর্ড গঠনের পর আমরা ভেবেছিলাম, রেটিং চালু হয়ে যাবে। তবে তা হয়নি। এর মধ্যে অনেক সিনেমা “ইউ” ক্যাটাগরিতে সনদ পাচ্ছে, কোনো কোনোটা আবার “অ্যাডাল্ট”; ছবিগুলোকে ঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে কি না, সেটা আমাদের ভাবতে হবে।’

‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বিধিমালা, ২০২৫’ করছে সরকার। প্রস্তাবিত বিধিমালায় পাঁচটি ক্যাটাগরি থাকছে।

প্রস্তাবিত বিধিমালায় কী আছে

‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বিধিমালা, ২০২৫’ করছে সরকার। প্রস্তাবিত বিধিমালায় পাঁচটি ক্যাটাগরি থাকছে—১. ইউ: সব বয়সী মানুষ দেখতে পারবেন। ২. ১২+: ১২ বছরের বেশি বয়সী দর্শক দেখতে পারবে। ৩. ১৫+: ১৫ বছরের বেশি বয়সী দর্শক দেখতে পারবে। ৪. ১৮+: ১৮ বছরের বেশি বয়সী দর্শক দেখতে পারবেন। ৫. এস: শুধু বিশেষ শ্রেণি-পেশার মানুষের দেখার উপযোগী।

ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডসহ বিশ্বের বহু দেশে সার্টিফিকেশন (রেটিং) প্রথা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ভারতের আদলে বাংলাদেশের রেটিং প্রস্তাব করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

বিধিমালার খসড়া যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্তকরণের লক্ষ্যে ৯ সদস্যের টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করে সরকার। এতে সরকারি কর্মকর্তাদের বাইরে সদস্য হিসেবে রয়েছেন নির্মাতা ও প্রযোজক রফিকুল আনোয়ার; নির্মাতা ও প্রযোজক তানিম নূর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের চেয়ারপারসন এস এম ইমরান হোসেন।

বিধিমালা প্রণয়নে গঠিত টেকনিক্যাল কমিটির এক সদস্য জানান, ১৯৭৭ সালের সেন্সরশিপ বিধিমালার দুই ক্যাটাগরিতে কোনো নির্দেশনা ছিল না। তবে এবারের বিধিমালায় প্রতিটি ক্যাটাগরির সঙ্গে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা থাকবে, যেটি নির্মাতা ও প্রযোজকদের জন্য সহায়ক হবে।

চলচ্চিত্র প্রযোজক শাহরিয়ার শাকিল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সারা পৃথিবীতে যে ধরনের রেটিং চালু আছে, সেটাই চালু করতে হবে। অন্যথায় বিভিন্ন ধরনের সিনেমা হবে না।’

বিধিমালা কবে

প্রস্তাবিত বিধিমালাটি বর্তমানে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (চলচ্চিত্র অধিশাখা) মাহফুজা আখতার সোমবার প্রথম আলোকে জানান, বিধিমালাটি নিয়ে মতামত জানতে লেজিসলেটিভ বিভাগে পাঠানো হয়েছিল, তারা মতামত দিয়েছে। বিধিমালাটি নিয়ে মন্ত্রণালয়ে দুটি বৈঠক হবে। বৈঠকের পর চূড়ান্ত হবে।

মাসখানেকের মধ্যে বিধিমালাটি চূড়ান্ত হতে পারে বলে আশা করছেন মাহফুজা আখতার।