‘তাণ্ডব’ দেখে কেন বারবার চমকে উঠলাম

গতকাল প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে শাকিব খান অভিনীত ‘তাণ্ডব’। কোলাজ

রায়হান রাফীর সিনেমা সম্পর্কে বেশ আগে থেকেই ধারণা ছিল। ‘পরাণ’ সিনেমার পর সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর সব কাজই প্রশংসিত হচ্ছে। বর্তমানে ঢালিউডের আলোচিত নির্মাতাদের একজন তিনি। অন্যদিকে ‘প্রিয়তমা’ সিনেমার পর সব কটি সফল সিনেমা দিয়ে ক্যারিয়ারের পুনর্জন্ম হয়েছে শাকিব খানের। কদিন আগে নিজেই তিনি জানিয়েছেন এ কথা। এই জুটির দ্বিতীয় সিনেমা ‘তাণ্ডব’ মুক্তির আগেই আলোচনায় এসেছে। ‘তুফান’ সিনেমার পর চেনা জুটি রাফী-শাকিব কি পারলেন দর্শক মন জয় করতে?

এটুকু বলা যায়, দিন দিন চেনা রাফীও বদলে যাচ্ছেন। চেনা ছকে তিনি আর গল্প বলবেন না, ‘তাণ্ডব’ দেখে বোঝা গেল। বরাবরের মতো ননলিনিয়ার এই উপস্থাপনা ভালো লেগেছে। এমন নতুনত্বই দরকার। তা না হলে তো আর বাংলাদেশের সিনেমা নিয়ে হঠাৎ কথা হতো না। যে উচ্চবিত্ত দর্শক ঢালিউডের মূলধারার সিনেমা নিয়ে এত দিন নাক সিটকিয়েছে, তারা এখন শোনে, শাকিব-রাফীর সিনেমার টিকিট নেই। তাদের হলমুখী করার অবদান রাফীকেও দিতে হবে। ফেরা যাক সিনেমার সাব–প্লটে।

সংবাদ সম্মেলনে জয়া আহসান, শাকিব খান ও সাবিলা নূর। চরকির সৌজন্যে

স্বাধীন ২২ বার ভাইভা দিয়েছেন, কিন্তু চাকরি হচ্ছে না। বিয়ের বাজারে প্রেমিকার পরিবার এমন ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেবে না, স্বাভাবিক। পাত্রীর পীড়াপীড়িতে পাত্র অবশেষে শেষ সুযোগ পায়, দুই মাসের মধ্যে চাকরি পেয়ে বিয়ে করবে। চাকরি খুঁজতে গ্রাম থেকে চলে আসতে হয় ঢাকায়। কিন্তু সেই চেনা হাহাকার, কোথাও কোনো চাকরি নেই। ঘটনাক্রমে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে দেশের গুম হওয়া ব্যক্তিদের সঙ্গে জায়গা হয় স্বাধীনের। এতটুকু পড়ে কী মনে হচ্ছে? গল্পের শুরুটা আমাদের খুবই চেনা। তাহলে ‘তাণ্ডব’ কেন দেখবেন?

‘তাণ্ডব’ সিনেমার অন্যতম প্রযোজক শাহরিয়ার শাকিল, শাকিব খান ও আফরান নিশো। শাহরিয়ার শাকিলের ফেসবুক থেকে

বেকারত্বের গল্পকে মূল গল্প ভাববেন না। এটা সামান্য একটা অংশ। গল্পের এই গাঁথুনি সিনেমাটিকে ড্রামা জনরা থেকে থ্রিলার হয়ে ওঠার নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে। চেনা গল্প এগিয়ে যেতে থাকলে আর সাধাসিধে মনে হয় না। গল্পটি মনে করিয়ে দেয় দেশে ঘটে যাওয়া স্বৈরাচারী সরকারের কর্মকাণ্ডের কথা। সিনেমায় একে একে উঠে আসে বেকারত্ব, মানবাধিকার, গণমাধ্যমকর্মীদের স্বাধীনতা, অবাধ দুর্নীতি ও গোপন টর্চার সেলের মতো বিষয়গুলো। কিন্তু স্বাধীন চরিত্রের শাকিব খান এসবের ধার ধারেন না। নীতি আর আদর্শের কথা দিয়ে সাধারণ মানুষের মন জয় করলেও শেষ পর্যন্ত তিনি আদর্শকে ধারণ করেন না। জয়া আহসানের একটি সংলাপ এমন, ‘আইনের সুশাসন প্রতিষ্ঠার কথা বলছেন; কিন্তু আপনি নিজেই আইন মানছেন না।’ এই সংলাপের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে অর্থ। যা দর্শক সারিতে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়, শাকিব খান কি আবার খলচরিত্রে অভিনয় করেছেন? যেমনটা দেখা গিয়েছিল ‘তুফান’ সিনেমায়? ‘তাণ্ডব’ সিনেমায় শাকিব এক রহস্যের জাল বিছিয়েছেন।

একটি টেলিভিশনের আবহাওয়ার খবর দিয়েই সিনেমা শুরু হয়। কোনো বিপৎসংকেত নেই। তবে মানুষ সৃষ্ট বিপদ যে ঘনিয়ে আসছে, সেটা খবর শেষ হওয়ার পরই বোঝা যায়। একেবারে যেন ১০ নম্বর বিপৎসংকেত। র‍্যাপ গানের তালে ঢাকার অলিগলি, রাজপথ পেরিয়ে একদল লোক কোনো একটি অভিযানে যাচ্ছে। তাদের মুখে মাঙ্কি মাস্ক। তাদের দেখা যায়, একটি বাসে। বোঝা যায়, বিশাল কোনো সন্ত্রাসী বাহিনী। টেলিভিশনে হামলা চালিয়ে সারা দেশের মানুষের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে।

রায়হান রাফী–শাকিব
ছবি: ফেসবুক

মাঙ্কি বাহিনীর অভিযান যখন সিনেমাকে আরও বেশি গতি দেওয়ার কথা, সেখানে সিনেমাটি এবার ধীরগতি। বেশ কিছু সময়ের জন্য দর্শক এদিক–সেদিক তাকানোর সময় পাচ্ছিলেন। বিরতির আগে দর্শক ধরে রাখা কখনো কখনো কঠিন ছিল। শুরুতেই যেটা বলা হয়েছে, গল্পটি আমাদের চেনা। একজন বেকারের চাকরি না পাওয়ার কথা, সহজ–সরল এক তরুণের প্রেমের গল্পতে দর্শকদের মন ভরছিল না; বরং এই দুর্ধর্ষ স্বাধীন বাহিনীর ভূমিকাও নড়বড়ে। সোয়াট টিম হামলা করলেও মাঙ্কি বাহিনী প্রতাপ দেখাতে পারছিল না। দর্শকের মনোযোগ নেই। ঠিক তখন সিনেমার গল্পে শাকিব খান বললেন, ‘এখন গল্পের ক্লাইমেক্স দরকার।’ পরমুহূর্তেই একের পর এক টুইস্ট দর্শকদের সামনে আসে। গল্পে দর্শক ধরে রাখায় শাকিব খানের অবদান কতটা?

পুরো সিনেমায় আলাদা করে চোখ ছিল শাকিব খানের ওপর। তিন বছর ধরে একের পর এক নিজেকে ভাঙছেন এই নায়ক। বদলে যাচ্ছে তাঁর চরিত্র। তাঁকে উপস্থাপনার ধরন। সেসবের ছাপ পর্দায় দেখা যায়। চরিত্রের বৈচিত্র্যগুলো যেমন, কখনো প্রেমিক, কখনো অভিমানী, কখনো সহজ–সরল এক যুবক, আবার ভয়ংকর প্রলয় তৈরি করে—এমন একাধিক চরিত্রে মানিয়ে যাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। শাকিবের ডায়ালগ বলার ধরন, সংলাপের মধ্য দিয়ে ক্ষোভ–আবেগ প্রকাশ, অভিব্যক্তির চাহনি শাকিব খানকে আলাদা করে। কোনো দৃশ্যে এখন আর বাড়তি অভিনয় মনে হয় না এই ঢালিউড তারকার। ‘থ্রি ইডিয়ট’ সিনেমায় যেভাবে আমির খান মানিয়ে যান শিক্ষার্থীর চরিত্রে, তেমনি শাকিব খানকেও শিক্ষার্থীর চরিত্রে মেনে নিতে কষ্ট হয় না। এ ছাড়া গোপন কারাগারে পুলিশের সঙ্গে শাকিব মধ্যে দীর্ঘ সময়ের একটি মারপিট দৃশ্য আছে। সেটাকে অতিরঞ্জিত মনে হয় না। কোরীয় বিখ্যাত সিনেমা ‘দ্য ওল্ডবয়’–এ একই কায়দায় দীর্ঘ সময় ধরে মারপিট করতে দেখা যায়। যা পরে সারা দুনিয়ার বহু নির্মাতাকে উৎসাহিত করছে। চরিত্রের জন্য শাকিবের পরিশ্রম ফুটে ওঠে পর্দায়। প্রশ্ন থেকে যায়, ২ ঘণ্টার ৯ মিনিটের গল্পকে একাই কি টানতে পেরেছেন শাকিব? সেখানে হয়তো শাকিব পুরো মার্ক পাবেন না।

গানে ঠোঁট মিলিয়েছেন শাকিব খান ও সাবিলা নূর
ভিডিওচিত্র থেকে নেওয়া

বিরতির পর গল্পের টার্নিং পয়েন্ট দর্শকদের ধরে রাখলেও একসময় আবার চেনা ছকে মনে হয় সিনেমাটি হয়তো শেষ। দু–একজন সেই সময় বিরক্তি নিয়ে বের হওয়ার পথেও হাঁটার প্রস্তুতি নেন। কিন্তু তখনো সিনেমা চূড়ান্ত রহস্যের খোলস ভাঙেনি। গল্পের শেষ ৩০ মিনিট ‘তাণ্ডব’কে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যায়। এখানে পরিচালক ক্যারিশমা দেখিয়েছেন। দেশের সিনেমায় একসময় তারকাবহুল শিল্পীরা থাকলেও সেই জায়গায় দীর্ঘ সময় একটি গ্যাপ তৈরি হয়। সম্প্রতি বছরগুলোতে হলিউড–বলিউডের শীর্ষ তারকাদের সিনেমায় অতিথি চরিত্রে অভিনয়ের প্রচলন বাড়লেও শাকিব খানের সিনেমায় এমনটা দেখা যেত না।

‘তাণ্ডব’ সিনেমায় আফজাল হোসেন

এবার বাংলাদেশের সিনেমায় ‘তাণ্ডব’ দিয়ে বড় পরিসরে অতিথি চরিত্র পেল ঢালিউড দর্শক। সিনেমায় ক্লাইমেক্স বাড়াতে পর্দায় আসে ধনীর দুলাল চরিত্রের অভিনেতা সিয়াম আহমেদ। তাঁর অভিনয় দর্শকদের আটকে রাখে। অতিথি চরিত্র হলেও পর্দায় মাতিয়েছেন সিয়াম। চরিত্রের যথাযথ ব্যবহার করায় অল্প সময়ে বেশ কয়েকবার করতালি পান এই অভিনেতা। গল্প এগিয়ে নেওয়ায় তাঁর ভূমিকা রয়েছে। পর্দায় এই সিয়ামকে আগে দেখিনি। বিশেষভাবে বলতে হবে নিশোর কথা। ‘সুড়ঙ্গ’ সিনেমার চরিত্রকে ‘তাণ্ডব’ সিনেমায় সূত্রপাত করেছেন পরিচালক। যা দর্শকদের প্রত্যাশাকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। নিশো-সিয়ামের ভক্তরা প্রিয় তারকার চরিত্রের গুরুত্বের কারণে খুশিই হবেন বলা যায়।

আরও পড়ুন

আলোচনায় কেন সাবিলা? কিছুদিন আগেও নাটকের কোনো অভিনয়শিল্পী সিনেমার নায়িকা হতে চাইতেন না। সেখানে দারুণ এই সুযোগকে ফারিণ, মেহজাবীনদের পর কাজে লাগিয়েছেন সাবিলা নূর। শুরুতেই তিনি বাণিজ্যিক মূল ধারার সিনেমায় সুযোগ পেলেন। নাটকের চরিত্র থেকে কতটা বের হতে পারেন, সেটাই ছিল দেখার বিষয়। শাকিবের সঙ্গে অভিনয়ে তাঁর মধ্যে কোনো জড়তা ছিল না। এমনকি নাচ দেখেও মনে হয়নি নবাগত হিসেবে এতটা স্বতঃস্ফূর্তভাবে তিনি শাকিবের সঙ্গে মানিয়ে যাবেন। শুধু সিনেমা করে গেলে হয়তো সম্ভাবনার জায়গায় নিজেকে নিয়ে যেতে পারবেন।

পরিচালক রায়হান রাফী, অভিনেত্রী সাবিলা নূর, অভিনেতা শাকিব খান ও জেফার
ফেসবুক থেকে

পরিচালক রাফীর আলাদা বৈশিষ্ট্য, তিনি যেমন গল্পে একাধিক টুইস্ট রাখেন, তেমনি খুঁটিনাটি প্রতিটা চরিত্রের ওপর গুরুত্ব দেন। ব্যতিক্রম নয় ‘তাণ্ডব’ সিনেমার পার্শ্বচরিত্র। পুলিশের সাবেক আইজিপি চরিত্রে শহীদুজ্জামান সেলিম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর চরিত্রে আফজাল হোসেন, টেলিভিশন চ্যানেলের মালিকের চরিত্রে গাজী রাকায়াত ও প্রভাবশালী সাংবাদিক চরিত্রে জয়া আহসান। সোয়াট টিমের কর্মকর্তা এফ এস নাঈম মানানসই ছিলেন।

আলাদা করে বলতে হবে জয়া আহসানের কথা। সাংবাদিক চরিত্রের নৈতিকতা, সাহসিকতা, দায়িত্বশীলতার দিকটাই তিনি দক্ষতার সঙ্গে ফুটিয়ে তুলেছেন। গল্পে যথেষ্ট গুরুত্ব পেয়েছেন এই দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী। গল্পে দারুণ টুইস্ট আসে জয়া আহসানকে ঘিরে। সেই মুহূর্তগুলো আমাদের মানবাধিকারের প্রশ্নকে সামনে আনে। চরিত্রে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন এই অভিনেত্রী। মনে গেঁথে থাকবে তাঁর সাবলীল অভিনয়। ভালো লেগেছে বিপদ দেখে জয়ার মাকে ফোন দিয়ে বলা, ‘মা, একটা ফুঁ দিয়ে দাও।’ দর্শক টানায় আলাদা ভূমিকা রাখবে এই চরিত্রটি।

এর বাইরে রোজী সিদ্দিকী, ডা. এজাজ, সুমন আনোয়ার, মুকিত জাকারিয়া, শিবা শানু থেকে শুরু করে সবার সফল চরিত্রায়ণ। সিনেমাকে যেমন চরিত্রগুলো শক্ত করে বেঁধেছে, সেই সঙ্গে সিনেমার আবহ সংগীত ভালো লেগেছে। গান, সম্পাদনা ছিল চোখে পড়ার মতো।

ক্যামিও চরিত্রে সিয়াম আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

সিনেমায় বেশ কিছু খুঁত থাকলেও সেই প্রশ্নের উত্তর পরিচালক শেষে দিয়েছেন। তারপরও কিছু বিষয় এড়িয়ে যাওয়া যেত। জিম্মি অবস্থার মধ্যে টক শোতে আমন্ত্রিত অতিথিরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কথা বলেছেন। এমনকি তাঁদের অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়াটাও স্বাভাবিক মনে হয়েছে। যেখানে একজন মন্ত্রী মারা গেছেন সেখানে তাঁদের মধ্যে কোনো চিন্তার রেখা ছিল না। কিছু জায়গায় ভয়ের আরও বেশি আবহ তৈরি করা যেত। সাবেক আইজিপি ও টেলিভিশন চ্যানেলের মালিকের মধ্যে চেয়ার নিয়ে দ্বন্দ্ব সেই মুহূর্তের সঙ্গে যায় কি না, প্রশ্ন থাকে। বাণিজ্যিক সিনেমায় গান থাকবে, কিন্তু শাকিব–সাবিলার প্রথম গানটি একদমই হঠাৎ করেই চলে আসে। একই কথা বলা যায় ‘লিচুর বাগানে’ গানটির কথা। হুট করেই চলে আসে। পর্দায় সাবিলার চরিত্রকে আরেকটু গুরুত্ব দিলে ভালো হতো।

তারপরও সব মিলিয়ে ঈদে উপভোগ্য সিনেমা ‘তাণ্ডব’। এ জন্য রায়হান রাফী সবার আগে ধন্যবাদ পাবেন। কারণ তিনি আবার প্রমাণ করলেন তাঁর ওপর আস্থা রাখা যায়। সিনেমায় স্বাধীনভাবে গল্প বলতে পেরেছেন পরিচালক। অন্যায়, অবিচার, দুর্বল শাসন ব্যবস্থার মতো বাস্তব বিষয়কে কাজে লাগিয়ে বঞ্চিত মানুষের ভাষা হয়ে প্রতিবাদ করেছেন রাফী। শেষে আভাস দিলেন, হয়তো ‘তাণ্ডব–২’ আসছে।

‘তাণ্ডব’ এর গল্প লিখেছেন রাফী নিজেই। রাফীর সঙ্গে চিত্রনাট্য লিখেছেন আদনান আদিব খান। চিত্রগ্রহণ তাহসিন রহমান। প্রযোজনা করেছে এসভিএফ আলফা আই এন্টারটেইনমেন্ট লিমিটেড। সহপ্রযোজনায় আছে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকি। সহযোগিতা করেছে দীপ্ত।

শাকিব খান ও সাবিলা নূর। ছবি: প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সৌজন্যে