বাবার জীবনের গল্প নিয়ে ডকএজ-এ বাংলাদেশের শারমিন

সিনেমাটি নিয়ে পিচিং করছেন শারমিন দোজা ও নাহিদ মাসুদ
ছবি: শারমিন দোজার সৌজন্যে

নিউজিল্যান্ডের ডকএজ ইন্ডাস্ট্রির ‘ডকএজ পিচ- ২০২৫’ এ নির্বাচিত হয়েছে বাংলাদেশের ‘আ জার্নি নেভার টোল্ড।’ সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন শারমিন দোজা। তিনি একজন বুম অপারেটর ও লাইভ সাউন্ড রেকর্ডিস্ট। বাংলাদেশে নারীর জন্য প্রতিকূল একটি পেশায় কাজ করে প্রশংসিত হয়েছেন তিনি। বতর্মানে তিনি সম্পাদনার কাজ নিয়ে বেশি ব্যস্ত। পরিচালক হিসেবে এবার দেশের সিনেমাকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরতে চান শারমিন।

‘আ জার্নি নেভার টোল্ড’ সিনেমায় একজন প্রবীণ ব্যক্তির অবসরজীবনের গল্প তুলে ধরা হবে, যিনি পরিবারের মধ্যে থেকেও একসময় একা হয়ে পড়েন। বয়সের কারণে প্রিয়জনদের সঙ্গে তৈরি হয় এক অদৃশ্য দূরত্ব। নির্মাতা শারমিন দোজা তাঁর বাবাকে মাথায় রেখে অবসরে যাওয়া প্রবীণদের জীবনের গল্প বলবেন।

এই নির্মাতা বলেন, ‘কানে শোনার ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে পরিবার ও সমাজ থেকে তিনি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। এই মানবিক ঘটনাটিই আমাকে সিনেমা বানাতে উৎসাহিত করেছে।’

শারমিন দোজা ও নাহিদ মাসুদ
ছবি: শারমিন দোজার সৌজন্যে

শারমিন জানান, নিউজিল্যান্ডের ডকএজ স্বাধীন ঘরানার নির্মাতাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি প্ল্যাটফর্ম। বিশ্বের নানা প্রান্তের স্বাধীন ঘরানার নির্মাতারা এখানে তাঁদের প্রামাণ্যচিত্রের আইডিয়া তুলে ধরার সুযোগ পান। ভালো গল্পের প্রজেক্ট যথাযথভাবে তুলে ধরতে পারলেই জুটে যায় প্রিপ্রোডাকশন (সিনেমা নির্মাণপূর্ববর্তী কাজ), শুটিং ও পোস্ট প্রোডাকশন (সিনেমা নির্মাণপরবর্তী) খরচসহ নানা রকম সহযোগিতা।

শারমিন বলেন, ‘আমাকে দারুণ একটি অভিজ্ঞতার সুযোগ করে দিয়েছে এই ডকএজ। ইন্ডি নির্মাতাদের পাশে থাকে, এমন বড় বড় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ও ফান্ডিং এজেন্সির কথা অনেক শুনেছি। এবার তাদের সামনে বাংলাদেশের নির্মাতা হিসেবে পিচিংয়ের সুযোগ পেয়েছি। আমাদের প্রজেক্ট নিয়ে নানা রকম প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। অভিজ্ঞতার প্রাপ্তিটা অনেক বেশি।’

প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন শারমিন দোজা। পাশে নাহিদ মাসুদ। ছবি: শারমিন দোজার সৌজন্যে

তিনি জানান, জাপানের এনএইচকে, নিউজিল্যান্ড ফিল্ম কমিশন, স্ক্রিন অস্ট্রেলিয়া, আমব্রেলা এন্টারটেইনমেন্ট, অস্ট্রেলিয়ান ডকুমেন্টারি কনফারেন্স, ডক লিপজেগ, চায়নিজ ডক ফোরামের মতো বড় বড় প্ল্যাটফর্মের প্রযোজক–পরিবেশকসহ সিনেমা অঙ্গনের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

সিনেমাটি প্রযোজনা করছেন সাউন্ড ডিজাইনার মাসরুর মাসুদ। নাহিদ মাসুদ নামে বেশি পরিচিত মানুষটি ব্যক্তিজীবনে শারমিনের স্বামী। এই প্রযোজক আবার প্রয়াত পরিচালক তারেক মাসুদের ভাই।

শারমিন দোজা ও নাহিদ মাসুদ
ছবি: শারমিন দোজার সৌজন্যে

নাহিদ মাসুদ বলেন, ‘আমাদের সিনেমাটি নিয়ে উপস্থিত আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র প্রযোজক, প্রদর্শক, টেলিভিশন ব্রডকাস্টার ও ফেস্টিভ্যাল পরিচালকদের আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মতো। কারণ, বাংলাদেশের সিনেমার প্রোজেক্ট তাঁরা খুব একটা পান না। আমাদের প্রতিবন্ধকতা, চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে কথা বলা সুযোগ হয়েছে। এর মধ্যে দিয়ে আমরা আন্তর্জাতিক ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছি, এটাই বড় প্রাপ্তি। এটা আমাদের পরবর্তী কাজকে সহজ করে দেবে।’

‘ডকএজ পিচ ফাইনাল’-এ অংশ নিতে গত ২৫ জুন নিউজিল্যান্ডে যান শারমিন দোজা–নাহিদ মাসুদ। ডকএজ-এ বিভিন্ন দেশের ২৩টি প্রোজেক্ট এবার নির্বাচিত হয়েছে। ৩০ জুন শুরু হওয়া এই পিচিং শেষ হয় ১ জুলাই। পরবর্তীতে দুই দিন ধরে চলা ডকএজ ইন্ডাস্ট্রি ফোরামেও অংশ নেন তাঁরা।

জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে পিচ অ্যাওয়ার্ড ঘোষণা করা হবে। এর আগে ঢাকা ডকল্যাব থেকেও পুরস্কার পায় আ জার্নি নেভার টোল্ড।

বড় বড় প্ল্যাটফর্মের প্রযোজক–পরিবেশকসহ সিনেমা অঙ্গনের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন
ছবি: শারমিন দোজার সৌজন্যে
আরও পড়ুন
আরও পড়ুন