৪ মাসে ৫ চরিত্র, চমকে দিলেন জয়া

পাঁচ চরিত্রে দেখা গেছে জয়া আহসানকে। কোলাজ

কোভিডের সময়কার গল্প। প্রধান চরিত্র দুজন নারী, যাঁদের আর্থসামাজিক অবস্থা আলাদা। কোভিডের মধ্যে একটা ঘরে বন্দী হয়ে পড়েন। এই দুই নারীর অন্য রকম সম্পর্কের গল্প নিয়েই পিপলু আর খানের ‘জয়া আর শারমিন’। সিনেমাতেও তিনি জয়া আহসান। একা থাকেন। তবে সেই সিনেমার জয়া বাস্তবের জয়ার কাছ থেকে কতটুকু নেওয়া হয়েছে, সেই রহস্য ভাঙেননি কেউ। গত মে মাসে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির পর সিনেমাটিতে জয়া আহসানের অভিনয় প্রশংসিত হয়। তখন কে জানত, এটা চমকের শুরু মাত্র। থ্রিলার, ড্রামা আর সাহিত্য অবলম্বনে নির্মিত সিনেমায় নতুনভাবে ধরা দেবেন অভিনেত্রী।

‘জয়া আর শারমিন’ চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্যে মোহসিনা আক্তার ও জয়া আহসান
ছবি : পরিচালকের সৌজন্যে

জুনের প্রথম সপ্তাহে জোড়া চমক নিয়ে হাজির হন অভিনেত্রী। ঈদে মুক্তি পায় রায়হান রাফীর ‘তাণ্ডব’, তানিম নূরের ‘উৎসব’। প্রথমটি দিয়ে দীর্ঘদিন পর পুরোমাত্রার বাণিজ্যিক সিনেমায় ফেরেন জয়া, শাকিবের সঙ্গে তাঁকে পর্দায় দেখা যায় প্রায় ১০ বছর পর। সাংবাদিক সায়রার চরিত্রে জয়া ছিলেন দুর্দান্ত।

‘তাণ্ডব’–এর দৃশ্য। চরকির সৌজন্যে

অসহায়, সাহসী থেকে শুরু করে সব ধরনের দৃশ্যেই তিনি বলেকয়ে ছক্কা হাঁকিয়েছেন। নায়িকা না হয়েও তিনি এ সিনেমায় যোগ করেছেন নতুন মাত্রা। অন্যদিকে ভূত হয়ে হাজির হয়েছেন উৎসব-এ, স্বল্প উপস্থিতিতেও যেভাবে নিজের জাত চিনিয়েছেন, সেটা ছিল দেখার মতো। নিজেকে নিয়ে নিজেই যেভাবে মজা করেছেন, সেটাও ছিল দেখার মতো। প্রথম সারির অভিনয়শিল্পী হয়েও যে এ ধরনের চরিত্র করতে রাজি হয়েছেন, সে জন্যও আলাদা ধন্যবাদ পাওনা।

পরপর তিন ছবিতে এমন চমকে দেওয়া চরিত্রের পরও জয়ার আস্তিনের তলায় আরও চমক ছিল। দুই বাংলায় নানা ধরনের চরিত্র করলেও মায়ের চরিত্রে জয়াকে দেখা যায়নি। গেল জুলাইয়ে মুক্তি পাওয়া অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরীর ‘ডিয়ার মা’ সিনেমায় সেটাও করলেন। কলকাতার সমালোচকেরা এটিকে চলতি বছরের অন্যতম সেরা বাংলা সিনেমার স্বীকৃতি দিয়েছেন।

‘ডিয়ার মা’ সিনেমায় জয়া আহসান। অভিনেত্রীর ফেসবুক থেকে

সিনেমায় জয়ার পারফরম্যান্স নিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকা লিখেছে, ‘আকাশছোঁয়ার স্বপ্ন দেখা এক কেরিয়ারিস্ট মেয়ে থেকে দাম্পত্যের চেনা ছকের বাইরে হাঁটতে চাওয়া স্ত্রী কিংবা দত্তক সন্তানকে সহজভাবে ভালোবাসতে না পারা থেকে মেয়েকে আঁকড়ে বাঁচতে চাওয়া এক একলা মা—জয়া যেন নিজেকেই ছাপিয়ে গিয়েছেন এক ভূমিকা থেকে অন্য ভূমিকায়।’

‘পুতুলনাচের ইতিকথা’ সিনেমার দৃশ্য। আইএমডিবি

এরপর ১ আগস্ট মুক্তি পায় ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’; মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস থেকে সুমন মুখোপাধ্যায়ের বহুল প্রতীক্ষিত সিনেমা। জয়া এতে কুসুম। ‘কুসুম একটা খোলা বইয়ের মতো। কুসুমের মন, শরীর ও আত্মা সব এক রকম। এখানেই শশীর সঙ্গে তার পার্থক্য। কুসুম কিন্তু শশীর চরিত্রকে চ্যালেঞ্জ করার ক্ষমতা রাখে। সে এতটাই খোলা মনের, সতেজ একটি চরিত্র। অনেক আগে শুটিং করলেও কুসুম এমন একটি চরিত্র, যা তার ভেতরে এখনো রয়ে গেছে।’ সিনেমা মুক্তির আগে বলেছিলেন জয়া। মুক্তির পর তাঁর অভিনীত সিনেমা ও চরিত্র দুটোই প্রশংসা পাচ্ছে।

‘অসম্ভব ভালো প্রতিক্রিয়া পাচ্ছি’
‘পাঁচটি চরিত্রই চ্যালেঞ্জিং, আবার কোনোটিই না,’ পাঁচ চরিত্রের মধ্যে কোনটি বেশি চ্যালেঞ্জিং জানতে চাইলে গত সোমবার বিকেলে এভাবেই বলছিলেন জয়া আহসান। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কাজই তো আসলে একেকবার একেক চরিত্রের মধ্য দিয়ে যাওয়া। তবে পাঁচটা পাঁচ রকমের জীবনযাপন, জীবনদর্শন; সেটা খুব উপভোগ করেছি। তবে কুসুম নিয়ে আলাদা করে বলতে হয়। এটা এতটা বহুল পঠিত (উপন্যাস) চরিত্র, যে যতবার পড়েছে, ততবারই কুসুমকে অবয়ব দিয়েছে। ফলে মানুষের মনের ভেতরে আগে থেকেই কুসুম নিয়ে একটা ধারণা ছিল, অন্য চরিত্রগুলোর ক্ষেত্রে সেটা ছিল না। তাই কুসুমকে যেন বিশ্বাসযোগ্য, টাটকা এবং সজীব মনে হয়, সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হয়েছে। এখন পর্যন্ত চরিত্রটি নিয়ে অসম্ভব ভালো প্রতিক্রিয়া পাচ্ছি।’

‘উৎসব’–এ জয়া আহসান। প্রযোজনা সংস্থার সৌজন্যে

কোনটি বেশি প্রিয়?
পাঁচ সিনেমার পাঁচ চরিত্রের মধ্যে কোনটি বেশি প্রিয়? জয়া বললেন, ‘সন্তানের মধ্যে কোনটি বেশি প্রিয়, এটার তো কোনো উত্তর হয় না (হাসি)। “জয়া আর শারমিন”-এ আমি প্রথমবার নিজের চরিত্রে অভিনয় করেছি, অনেক দিন পর তাণ্ডব-এ বাণিজ্যিক সিনেমায় কাজ করেছি, “উৎসব”-এর ভূতটাও আমার জন্য একেবারেই নতুন যাত্রা; খুব আনন্দ নিয়ে করেছি। “ডিয়ার মা”র বৃন্দাও ব্যক্তি আমি যেমন, তার চেয়ে অনেক দূরের চরিত্র। আর “পুতুলনাচের ইতিকথা”র কুসুম ভীষণ প্রাণের কাছাকাছি একটা চরিত্র শুধু আমার না, যাঁরা যাঁরা বাংলা সাহিত্য নিয়ে চর্চা করেন, সবারই। সবগুলো চরিত্র করতে গিয়েই অসাধারণ একটা জার্নির মধ্য দিয়ে গেছি, খুব আনন্দ নিয়ে করেছি। এ জন্য কোনটি বেশি প্রিয়, কোনটি কম প্রিয়, এই উত্তরটা দিতে পারছি না।’

জয়া আহসান
খালেদ সরকার

বছরের শুরুতে নুহাশ হুমায়ূনের ‘২ষ’-এর একটি পর্বে ছিলেন জয়া। এরপর ঈদুল ফিতরে ছিলেন আশফাক নিপুনের সিরিজ ‘জিম্মি’তে। মে মাস থেকে টানা পাঁচ ছবি। ব্যাপারটা কাকতালীয়। জয়া বললেন, ‘আমরা কাজ করে বসে থাকি। অনেকে বলেন কেন কাজ আসছে না, আবার যখন আসে টানা আসে; এটা তো আসলে আমার হাতে নেই। তবে জিম্মির রুনা লায়লা থেকে শুরু করে পুতুলনাচের ইতিকথার কুসুম—প্রতিটি চরিত্রই কিন্তু বৈচিত্র্যপূর্ণ।’

দর্শকদের ‘উপহার’
আলাপে আলাপে ‘উৎসব’-এর ভূত নিয়ে আলাদা করে কথা বললেন জয়া। জানালেন নিজেকে নিজেই পচানোর এই আইডিয়াটা অনেকটা তাঁরই ছিল। ‘দর্শকেরা তো আমাকে নিয়ে ট্রল করেছিল “পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী ২” সিনেমায়, মনে আছে নিশ্চয়। আমাদের বাংলাদেশের দর্শকেরা তো খুব ভালো ট্রল করতে পারে, ভালো কিছু থাকলে সেটা তুলে আনার চেয়ে যেটা তার অপেক্ষাকৃত দুর্বল জায়গা, সেটাতেই আঘাত করে বেশি। আমি এবার দর্শকদের উপহার দিলাম। তাদের করা ট্রলকেই আমি উপহার দিলাম, আশা করি এবার তারা থামবে। আইডিয়াটা একরকম আমারই ছিল।’

আরও পড়ুন

ক্লান্তির দিন–রাত
মে মাস থেকে টানা পাঁচ সিনেমা। ঢাকা থেকে কলকাতা, প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করছেন জয়া। জানালেন, সিনেমায় অভিনয় যতটা আনন্দদায়ক, তার চেয়ে কম আনন্দের এই প্রচারণা। জয়া বলেন, প্রচারে আসলে সৃজনশীলতার কোনো ব্যাপার থাকে না বলে এটা নিরানন্দময় হয়। তারপরও তো শিল্পীকে প্রচারে যুক্ত থাকতে হবে।
কথার শেষে জানালেন, বেশ কয়েকটি সিনেমা নিয়ে কথা হয়েছে। তবে চূড়ান্ত হয়নি বলে এখনই জানাতে পারছেন না।