রাজ আর পেছনে তাকাতে চান না
ব্যক্তিগত জীবনের নানা ঝামেলায় অনেক দিন আড়ালে ছিলেন শরীফুল রাজ। চলতি বছর সব বিতর্ক পেছনে ফেলে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন ঢাকাই ছবির এই নায়ক। তিনটি সিনেমা দিয়ে প্রেক্ষাগৃহে ফিরছেন তিনি।
‘আমার একটা অভ্যাস আছে। যখন যে কাজ শুরু করি, সেটার মধ্যেই ডুবে থাকার চেষ্টা করি। সেটা অনেকটাই ওই দুঃসময়ে কাজে লাগিয়েছি। ওই সময় ওমর ছবির কাজ শেষ করি। এরপর কবির কাজ হাতে নিই। তার আগে একটি ওয়েবের কাজও করেছি।’
পরীমনির সঙ্গে দাম্পত্য কলহ, অতঃপর বিচ্ছেদের ঘোষণা—সময়টা কেমন ছিল? প্রশ্ন করতেই বলে গেলেন শরীফুল রাজ। তিনি যে দুঃসময়কে কাজে লাগানোর কথা বলছিলেন, তার প্রমাণ পাওয়া যাবে আগামী ঈদুল ফিতরে। ঈদে তিন–তিনটি সিনেমা মুক্তি পাবে তাঁর!
ঈদুল ফিতর আসতে মাস দেড়েক দেরি, এর মধ্যেই মুক্তির তালিকায় আছে অর্ধডজন সিনেমা; যার মধ্যে রাজেরই তিনটি। সিনেমাগুলো হলো গিয়াসউদ্দীন সেলিমের ‘কাজলরেখা’, মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজের ‘ওমর ও মিশুক মনির ‘দেয়ালের দেশ’। তিনটি সিনেমা দিয়ে ‘প্রত্যাবর্তন’-এ খুশি নন রাজ। কেন? সেটাও জানালেন অকপটে।
রাজ বলেন, ‘ভেবেছিলাম শুধু ওমর ঈদে মুক্তি পাবে। ‘কাজলরেখা’ ও ‘দেয়ালের দেশ’ আগেই মুক্তির কথা ছিল। কিন্তু এক ঈদেই আমার এতগুলো ছবি মুক্তি পাবে, এটা ভালো লাগছে না। এই ছবিগুলো আমার অনেক কষ্টের, অনেক পছন্দের কাজ। বিরতি দিয়ে মুক্তি পেলে সময় নিয়ে, প্রতিটি ছবি বিচার–বিশ্লেষণ করে দর্শকেরা ছবিগুলো দেখতে পারতেন। কিন্তু একসঙ্গে মুক্তির কারণে দর্শকেরা তিনটি ছবি না–ও দেখতে পারেন। দর্শক বিভ্রান্ত হতে পারেন। ভাগ করে দুই ঈদেও ছবিগুলো মুক্তি দেওয়া যেত।’
তবে তিনটি কাজ নিয়েই আশাবাদী রাজ। তাঁর ভাষ্যে, তিন ছবির গল্প ও তাঁর অভিনীত চরিত্র তিন ধরনের। যে ধরনের চরিত্রগুলোতে তাঁকে আগে দেখেনি দর্শক। ছবি তিনটির প্রস্তুতিতে বছরের পর বছর সময় লেগেছে।
সিনেমাগুলোর জন্য তাঁর নিজের নিবেদন কতটা ছিল, সেটাও জানালেন রাজ। তিনি বলেন, ‘“কাজলরেখা” পাঁচ শ বছর আগের গল্প। সেই সময়কার সুচ কুমার চরিত্রটির প্রস্তুতি নিয়েছি দুই বছর ধরে। চরিত্র পর্দায় বিশ্বাসযোগ্যভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য দীর্ঘ সময় কাজ করতে হয়েছে। “দেয়ালের দেশ” ছবিতে হিমঘরের গার্ডের চরিত্রে অভিনয় করেছি। পুরো এক বছর চরিত্রটিতেই ডুবে ছিলাম। ওজন কমাতে হয়েছে, চুল–দাড়ি বড় করতে হয়েছে। চরিত্রের প্রয়োজনে দীর্ঘদিন টেবিলে খাইনি। ফ্লোরে বসে খেয়েছি।’
এ ছাড়া রাজ জানালেন, ওমর চরিত্রটির মধ্যে ভাঙাগড়ার খেলা আছে। শুটিংয়ের আগে টানা দুই মাস চিত্রনাট্য নিয়ে মহড়া করতে হয়েছে। রাজের কথা উঠলেই এখন দর্শকের মনে অবধারিতভাবে চলে আসে তাঁর বহুল চর্চিত দুই সিনেমার নাম—‘পরাণ’ ও ‘হাওয়া’। এই দুই কাজ দেখার পর তাঁকে নিয়ে দর্শকের যে আলাদা আগ্রহ তৈরি হয়েছে, সেটা ভালোই জানা আছে এই অভিনেতার। রাজের ভাষ্যে, ‘অনেক কাজই আসে। চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে পারব, সেই ধরনের চিত্রনাট্যই পছন্দ করি। সাদামাটা কাজের চেয়ে এ ধরনের কাজ করতে ভালো লাগে। কারণ, এ ধরনের কাজ করে শিখতে পারি, জানতে পারি, নিজেকে বিকশিত করার সুযোগ পাই।’
ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প
গত বছরের সেপ্টেম্বরে মাসে বিচ্ছেদ হয় রাজ ও পরীমনি দম্পতির। ওই সময় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন রাজ। তবে কয়েক মাসের মধ্যেই নতুন কাজে যুক্ত হন; চেষ্টা করেন কাজে ডুবে থেকে নিজেকে চাঙা রাখতে।
রাজ বলেন, ‘ওই সময়টা আমার জন্য ভালো ছিল না। এক ছাদের নিচে বসবাস করা মানুষ দুটো আলাদা হয়ে গেলে, কেমন লাগে সেটা যাদের হয় তারাই বুঝবেন। তা ছাড়া ওই সময় আমার সন্তানকেও মিস করছিলাম খুব। প্রতিদিন যে সন্তানকে দেখছি, খেলছি, আদর করছি—সেই সন্তানের সঙ্গে হঠাৎ করেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়াটা খুবই কষ্টদায়ক ছিল। তবে বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে এগিয়েছি আমি।’ তবে কাজে ব্যস্ত হওয়ার পর এখন অনেকটা সামলে নিয়েছেন বলেও জানান। তিনি বলেন, ‘এখন বেশ ভালো আছি। খাচ্ছি, ঘুরছি, কাজ করছি, সময় কেটে যাচ্ছে। নতুন নতুন চিত্রনাট্য হাতে আসছে। সেসব পড়ছি। এখন আমি আর পেছনে তাকাতে চাই না।’
এখন থেকেই প্রচারে
আগেভাগেই পরিচালক, নায়িকাসহ ‘কাজলরেখা’র প্রচারে নেমে পড়েছেন রাজ। জানালেন শিগগিরই বাকি দুটি ছবির প্রচারণা শুরু হবে। গত বছরে অক্টোবর মাসে ভারতে অনুষ্ঠিত আইসিসি বিশ্বকাপের গ্যালারি থেকে ছবির প্রচারণা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) মাঠেও এই ছবির টিম উপস্থিত হয়েছিল। এখন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রচারণা চলছে। তবে ছবির মুক্তির সময় তিন ছবির প্রচার নিয়েও সমস্যায় পড়তে পারেন বলে মনে করছেন রাজ। তিনি বলেন, ‘কোন ছবি রেখে কোন ছবির প্রচারে যাব? তিনটি ছবিই আমার জীবনের অন্যতম সেরা কাজ। শেষ পর্যন্ত সময় ভাগ করে নিয়ে ছবিগুলোর প্রচার করতে হবে।’