১২ সিনেমার কয়টি মনে রাখার মতো
সিনেমা শুরু হতে মাত্র এক মিনিট বাকি; কিন্তু হলের পরিবেশ দেখে বোঝা মুশকিল। ভেতরে তো কাউকেই দেখা যাচ্ছে না, তবে কি ভুল হলে...ভাবনা শেষ হওয়ার আগেই এক কর্মী হাজির। টিকিট দেখে নিশ্চিত করলেন, হল নম্বরে ভুল হয়নি। গত মাসে ঢাকার একটি মাল্টিপ্লেক্সে নতুন মুক্তি পাওয়া সিনেমা দেখতে গিয়ে এই অভিজ্ঞতা হয়। পুরো হলে দর্শক ছিলেন মাত্র চারজন, শুক্র বা ছুটির দিন ছাড়া গত মাসে মুক্তি পাওয়া বেশির ভাগ সিনেমারই ছিল এই অবস্থা। ‘বাড়ির নাম শাহানা’ আর ‘সাবা’ বাদে গত সেপ্টেম্বরে মুক্তি পাওয়া বাকি ঢাকাই সিনেমার অবস্থাই ছিল গড়পড়তা।
১২ সিনেমা কিন্তু...
জুনে পবিত্র ঈদুল আজহায় মুক্তি পাওয়া ছয় সিনেমা নিয়ে কমবেশি আলোচনা হয়েছে। সাধারণত ঈদের পরের মাসেও সেসব সিনেমার রেশ থাকে। অনেক বছর তো ঈদের পরের মাসে সিনেমাই মুক্তি পায় না। তবে এবার ব্যতিক্রম, জুলাইতে আসে দুটি সিনেমা, কামার আহমাদ সাইমনের ‘অন্যদিন...’ ও বিপ্লব হায়দারের আলী’। আগস্টে মুক্তি পায় আরও দুটি সিনেমা, জোবায়দুর রহমানের ‘উড়াল ও কবিরুল ইসলামের ‘জলরঙ’। আর সেপ্টেম্বরে এসে যেন ছবি মুক্তির হিড়িক লাগে, একে একে মুক্তি পায় আটটি সিনেমা! ‘ডট’, ‘আমার শেষ কথা’, ‘নন্দিনী’, ‘বাড়ির নাম শাহানা’, ‘ফেরেশতে’, ‘সাবা’, ‘স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা’ ও ‘উদীয়মান সূর্য’। সব মিলিয়ে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে ১২টি মুক্তি পেলেও মনে রাখার মতো ধাক্কা কম সিনেমাই দিতে পেরেছে।
প্রচার নেই
শুটিংয়ের সময় বাংলাদেশ–ইরানের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ‘ফেরেশতে’র ব্যাপক প্রচার হলেও মুক্তির আগে নীরব ছিল সিনেমার টিম। দুই–একটি ফেসবুক পোস্ট ছাড়া ছবির দুই প্রধান অভিনেত্রী জয়া আহসান ও রিকিতা নন্দিনীকেও প্রচারে দেখা যায়নি। একইভাবে ‘স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা’ নিয়ে চুপ ছিলেন সিনেমার নায়ক আদর আজাদ।
রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ নানা কারণে ঈদের সময় সিনেমার প্রচার ছিল কম। সেটা এই তিন মাসে তলানিতে এসে থেকেছে। দেরিতে হলেও কেবল ‘বাড়ির নাম শাহানা’ টিমের প্রচার চোখে পড়েছে। তারা জগন্নাথ, জাহাঙ্গীরনগরসহ বেশ কয়েকটি ক্যাম্পাসে গিয়েছে, হলে হলেও গেছে পুরো টিম। আবার অনেক সিনেমা যে মুক্তি পেয়েছে, সেটা সিনেমার পাত্র–পাত্রীরাই জানেন না! বেশির ভাগ নির্মাতাই ফেসবুকে সিনেমার হল লিস্ট পোস্ট করে দায় সেরেছেন।
পুরোনো ছবি মুক্তির হিড়িক
তিন মাসে মুক্তি পাওয়া ১২ সিনেমার বেশির ভাগই তিন-চার বছর আগে নির্মিত; নানা জটিলতায় এত দিন আটকে ছিল। কোনো সিনেমা তো এত পরে মুক্তি পেয়েছে যে সিনেমার নায়িকার সঙ্গে নির্মাতাদেরই আর যোগাযোগ নেই। এই যেমন মোস্তাফিজুর রহমানের ‘স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা’; গত মাসে মুক্তির সময় নির্মাতা জানিয়েছিলেন, ছবির নায়িকা নিশাত সালওয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি তাঁরা।
নেই বড় তারকার ছবি
তিন মাসে ১২ সিনেমার মধ্যে বড় তারকা বলতে জয়া আহসান আর মেহজাবীন চৌধুরী অভিনীত সিনেমা ছিল। দুজনেই পুরোপুরি বাণিজ্যিক সিনেমার তারকা নন; ফলে মাল্টিপ্লেক্সের বাইরে সিঙ্গেল হলের দর্শকদের তাঁদের সিনেমা নিয়ে আগ্রহ ছিল কম। কয়েক বছর ধরে সিনেমা মুক্তির আগে টিজার, ট্রেলার বা গান নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু এই ১২ সিনেমার মধ্যে কোনোটিরই গান নিয়ে সেভাবে সাড়া পড়েনি।
নারীকেন্দ্রিক গল্প
তিন মাসের সিনেমার মধ্যে সবচেয়ে ইতিবাচক ছিল নারীকেন্দ্রিক গল্প বাড়ার ঘটনা। সেপ্টেম্বরের তিন সিনেমা—‘বাড়ির নাম শাহানা’, ‘ফেরেশতে’ আর ‘সাবা’র প্রধান চরিত্র নারী; এর মধ্যে শাহানার নির্মাতাও নারী—লীসা গাজী। একই মাসে দুই সপ্তাহে তিনটি নারীকেন্দ্রিক সিনেমা মুক্তি, ঢালিউডের জন্য নতুন ঘটনা।
হল বন্ধের ঘোষণা
১২ সিনেমা মুক্তি পেলেও তিন মাসে সবচেয়ে উদ্বেগের ছিল একের পর এক হল বন্ধের ঘোষণা। সম্প্রতি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে দেশের তিন হল—যশোরের মণিহার, বগুড়ার মধুবন ও কেরানীগঞ্জের লায়ন সিনেমাস। ক্রমাগত লোকসানে হলগুলো বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মালিকপক্ষ। সামনের মাসগুলোতে আরও কয়েকটি হল বন্ধের ঘোষণা আসতে পারে। তাই বছরের শেষ তিন মাসের পর্যালোচনা লিখতে গিয়ে হয়তো সিনেমার চেয়ে হল কয়টি টিকে আছে, সেটাই হয়ে উঠতে পারে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।