‘তারা না থাকলে দীপা হয়ে উঠতে পারতাম না’

সংবাদ সম্মেলনে ‘বাড়ির নাম শাহানা’ টিমনাজমুল হক

বাংলাদেশ থেকে অস্কারে যাচ্ছে লিসা গাজীর ছবি ‘বাড়ির নাম শাহানা’। অস্কারের বেস্ট ইন্টারন্যাশনাল ফিচার ফিল্ম বিভাগে বাংলাদেশ থেকে ছবিটি জমা দেওয়া হবে। গতকাল শনিবার সকালে ঢাকার একটি পাঁচ তারকা হোটেলে বাংলাদেশ ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ (বিএফএফএস) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। বেস্ট ইন্টারন্যাশনাল ফিচার ফিল্ম বিভাগে প্রতিযোগিতা করার জন্য বাংলাদেশ থেকে জমা পড়ে পাঁচটি সিনেমা। এর মধ্য থেকে লিসা গাজীর ছবিটিকে চূড়ান্ত করে ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজের তত্ত্বাবধানে গঠিত অস্কার বাংলাদেশ কমিটি।
কৈশোর পেরোনোর আগেই শাহানাবাড়ির মেয়ে দীপার বিয়ে হয়ে যায়। স্বামীর নির্যাতনের জাল ছিঁড়ে নিজের মতো করে বাঁচতে চান তিনি। নব্বইয়ের দশকের পটভূমিতে দীপার বেঁচে থাকার লড়াইয়ের গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে ‘বাড়ির নাম শাহানা’। আগে তথ্যচিত্র নির্মাণ করলেও এটিই লিসার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। নিজের গল্প থেকে আনান সিদ্দিকার সঙ্গে যৌথভাবে চিত্রনাট্য লিখেছেন লিসা গাজী।

বাংলাদেশ থেকে সিনেমাটি অস্কারে পাঠানোর জন্য নির্বাচিত হওয়ায় আনন্দিত ছবির নির্মাতা ও কলাকুশলীরা। নির্মাতা লিসা গাজী প্রথম আলোকে বলেন, ‘নানা বাধা সত্ত্বেও যাঁরা নিজেদের পথ নিজেরাই গড়ে তোলেন, সেই নারীদের সাহস আর আবেগময় গল্পগুলো আমাকে সব সময় অনুপ্রাণিত করে। আমি সেই গল্পগুলোই বলতে চেয়েছি। এ গল্প অস্কারে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে, তা চিন্তা করে গায়ের রোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। এটা কি সত্যি? বড় পর্দায় মুক্তি পাওয়ার পরও অনেক দর্শকের প্রশংসা পেয়েছি, অনেকেই এই গল্পে নিজের প্রতিচ্ছবি পেয়েছেন, নির্মাতা হিসেবে এটাই সার্থকতা।’

‘বাড়ির নাম শাহানা’র পোস্টার। ছবি : অভিনেত্রীর সৌজন্যে

ছবিতে দীপা চরিত্রে অভিনয় করেছেন আনান সিদ্দিকা। এটিই তাঁর প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। তিনি প্রতিক্রিয়ায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘দীপার গল্প বলতে গিয়ে এমন অনেক নারীর অভিজ্ঞতা যুক্ত করেছি, যাঁরা কোনো দিন হাল ছাড়েননি, টিকে থাকার জন্য লড়ে গেছেন। আজকের এ মুহূর্ত আমি তাঁদের উৎসর্গ করছি। আমার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র অস্কারে জমা পড়বে, এ অনুভূতি প্রকাশের ভাষা আমার নেই। এত এত ভালো চলচ্চিত্রের মধ্য থেকে আমাদের বাছাই করা হয়েছে, এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় পুরস্কার। আমি অন্যদের শুভেচ্ছা জানাতেই আজ এসেছিলাম, কিন্তু আমাদের নাম ঘোষণা করা হবে, কল্পনাও করিনি। আমার পুরো টিমের প্রতি কৃতজ্ঞতা। কারণ, তারা না থাকলে দীপা হয়ে উঠতে পারতাম না।’

ছবিটি যৌথভাবে প্রযোজনা করেছে কমলা কালেকটিভ ও গুপী বাঘা প্রোডাকশনস লিমিটেড। ছবির অন্যতম প্রযোজক আরিফুর রহমান বলেন, ‘আমার যে টিম, কাজের বাইরেও তাদের সঙ্গে আমার একটা পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে। শুরু থেকেই আমি তাদের ওপর বিশ্বাস রেখেছি। আজ যখন এ ঘোষণাটি দেওয়া হলো, তখন মনে হয়েছে, বিশ্বাসের মর্যাদা রাখা হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন উৎসবে যেমন প্রশংসা পেয়েছি, সিনেমা হলে মুক্তি পাওয়ার পরও তেমনই প্রশংসা পাচ্ছি।’

আরও পড়ুন

একাডেমির নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশ ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজের তত্ত্বাবধানে মোহাম্মদ জহিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ‘অস্কার বাংলাদেশ কমিটি’ গঠিত হয়। বাংলাদেশ থেকে এন্ট্রি নির্বাচন ও পাঠানোর দায়িত্ব পায় এই কমিটি। এর অন্য সদস্যরা হলেন সাংবাদিক ও চলচ্চিত্র সমালোচক সাজ্জাদ শরিফ, চিত্রগ্রাহক রাশেদ জামান, চলচ্চিত্র প্রযোজক শাহরিন আক্তার সুমি, চলচ্চিত্র পরিচালক শাহীন দিল–রিয়াজ ও চলচ্চিত্র শিক্ষক এস এম ইমরান হোসেন। অস্কার কমিটি ২৪ ও ২৫ সেপ্টেম্বর জমা পড়া ছবিগুলো যাচাই–বাছাই ও পর্যালোচনা করে। নাম ঘোষণার পর সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন বাংলাদেশের অস্কার কমিটির সভাপতি জহিরুল ইসলাম।

‘বাড়ির নাম শাহানা’ সিনেমার দৃশ্য। ছবি : প্রযোজনা সংস্থার সৌজন্যে

তিনি বলেন, ‘আমরা সবচেয়ে ভালো সিনেমাটি মনোনীত করার চেষ্টা করেছি। গত কয়েক দিন আমাদের মধ্যে চলচ্চিত্রগুলোর অনেক বিষয় নিয়ে তর্কবিতর্ক হয়েছে। সবশেষে আমরা “বাড়ির নাম শাহানা”কে বাছাই করেছি।’
২০২৩ সালে জিও মামি মুম্বাই চলচ্চিত্র উৎসবে ‘জেন্ডার সেনসিটিভিটি অ্যাওয়ার্ড’ পায় ‘বাড়ির নাম শাহানা’। দেশের প্রেক্ষাগৃহে ১৯ সেপ্টেম্বর ছবিটি মুক্তি পেয়েছে।