তাঁদের চোখে সালমান শাহর সেরা ছবি

কেয়ামত থেকে কেয়ামত এবং স্বপ্নের ঠিকানাকেই এগিয়ে রাখলেন বেশির ভাগ মানুষ

বেঁচে থাকলে আজ ৫০ বছর পূর্ণ করতেন সালমান শাহ। চার বছরের চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারে ২৭টি চলচ্চিত্র, সব কটিই সুপারহিট। মানুষের ক্যারিয়ারে উত্থান-পতন থাকাটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু সালমান শাহর ক্যারিয়ারে পতন বলে কিছুই ছিল না।

সালমান শাহর জীবনের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে তাঁর অভিনীত ছবিগুলোর পরিচালক, সমসাময়িক ও অনুজ অভিনয়শিল্পী এবং প্রেক্ষাগৃহমালিকদের কাছে দুটো প্রশ্ন রেখেছিলাম আমরা। সালমান শাহর কোন ছবিগুলো এখনো তাঁদের প্রিয়। আর এখনো কেন সালমান এত জনপ্রিয়। অংশগ্রহণকারী ৩১ জনের ২০ জনই বলেছেন সোহানুর রহমান সোহানের কেয়ামত থেকে কেয়ামত ছবিটির নাম। এরপরই আছে এম এ খালেকের স্বপ্নের ঠিকানার নাম। এই ছবির নাম করেছেন ১৮ জন।

সালমানের প্রথম ছবি কেয়ামত থেকে কেয়ামত। সালমান ও মৌসুমী অভিনীত ছবিটি মুক্তির সাল ১৯৯৩। দীর্ঘ খরার পর নতুন এক নায়ককে খুঁজে পায় ঢালিউড। প্রথম ছবিতেই কথা বলার ঢং, স্টাইল ও চলনবলন দিয়ে নিজেকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যান সালমান—এমনটাই মত দিয়েছেন সবাই।

সালমান অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্রটিকেই কেন এখনো এগিয়ে রাখছেন সবাই, জানতে চাইলে ছবিটির পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান বলেন, ‘প্রথম সিনেমাতেই সালমান–মৌসুমী জুটিকে দর্শকের ভীষণ ভালো লেগে যায়। আর সিনেমার নির্মাণ, গল্প, বলার ধরন এবং উপস্থাপনের কথা এখনো সবার কাছে শুনি।’

ছবিটির নায়িকা মৌসুমী জানালেন, ‘এটা যে প্রেমের আদর্শ গল্প হয়ে যাবে, এই জুটি যে প্রেমের আদর্শ জুটি হয়ে উঠবে ভাবিনি। ২৮ বছর সমানতালে জনপ্রিয় থাকবে একটা ছবি, আমাকে কেয়ামতকন্যা ডাকবে! এখনো সালমান মানে আমি, আমি মানে সালমান যে ভাববে, অথবা কেয়ামত থেকে কেয়ামত ছবির প্রতিটি গান প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম স্পর্শ করবে—এসব ভাবার মতো শক্তি আল্লাহ দেননি।’

প্রথম সিনেমায় মৌসুমীর সঙ্গে জুটি হয়ে পর্দায় আবির্ভাব হলেও দ্বিতীয় সিনেমা তুমি আমার-এ সালমানের নায়িকা শাবনূর। সালমানের ২৭টি ছবির ১৩টিতেই অভিনয় করেছে এই জুটি। এ জুটির বেশির ভাগ সিনেমাই ব্যবসাসফল। শাবনূর বলেন, ‘সালমানকে প্রথম দেখি এফডিসিতে। মৌসুমী আপুর সঙ্গে শুটিং করছিল। আসা-যাওয়ার মধ্যেও দেখা হতো। তুমি আমার ছবিতে আনুষ্ঠানিক পরিচয়। কাজের কারণে বন্ধুত্ব হয়। প্রথম চলচ্চিত্র মুক্তির পর সুপারহিট হয়।’

সালমান শাহকে নিয়ে একটি ছবিই করেছেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার—স্নেহ। তবে তাঁর পরিবারের সঙ্গে ছিল সুসম্পর্ক। তিনি বলেন, ‘ন্যাচারালি হি ইজ ভেরি স্মার্ট। এ প্রজন্মের জন্য দারুণ অনুপ্রেরণা। স্মার্টনেসের পাশাপাশি আধুনিকতার জ্ঞান ছিল প্রখর। ভালো পারফর্ম করত, মানুষের সঙ্গেও ভালো ব্যবহার করত। গান গাইবার অভ্যাসও ছিল। সালমান বেঁচে থাকলে, আমাদের চলচ্চিত্রের ধারাও একটু বদলাত। তার প্রত্যেকটা কর্ম মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছে, এই কারণে সে অমর।’
সালমান শাহর অসমাপ্ত ছবি বুকের ভেতর আগুন দিয়েই ফেরদৌসের চলচ্চিত্রজীবন শুরু। সালমান শাহ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ফেরদৌস বললেন, ‘তিনি সময়ের চেয়ে এগিয়ে থাকা একজন মানুষ। এখনো আধুনিক, এখনো সমসাময়িক। তাঁর চলচ্চিত্রগুলো দেখলে আমি তা অনুভব করি।’

শাকিব খান বললেন, ‘চলচ্চিত্রে সালমান শাহর আবির্ভাবের পর অনেক তরুণ অভিনয়ে আগ্রহী হন। সালমান শাহর অভিনয় দেখে, তাঁর চলচ্চিত্র দেখে আমিও অনুপ্রাণিত হতাম। একটা প্রজন্মের কাছে আদর্শ এই মানুষটির ছোঁয়ায় বাংলা চলচ্চিত্রে বিপ্লব ঘটেছিল। তিনি আমাদের চলচ্চিত্রের ধ্রুবতারা।’

বুবলীর চোখে সালমান শাহ একই সঙ্গে ভীষণ স্মার্ট, স্টাইলিশ, ফ্যাশনেবল এবং ব্যক্তিত্বসম্পন্ন একজন হিরো। তিনি বলেন, ‘আজ থেকে ২৫ বছর আগেই তিনি এখনকার সব ফ্যাশন আর স্টাইল করে দেখিয়েছেন। তিনি বেঁচে থাকলে এখনকার চলচ্চিত্রে নানান স্টাইল নিয়ে আর অভিনয় নিয়ে কী কী যে করতেন, ভাবাই যায় না।’

চলচ্চিত্র গবেষক অনুপম হায়াৎও কেয়ামত থেকে কেয়ামত এবং স্বপ্নের ঠিকানাকেই এগিয়ে রাখলেন। সালমানের জনপ্রিয়তা প্রসঙ্গে তিনি বললেন, ‘রহমান, আনোয়ার হোসেন, রাজ্জাকের পর যখন মন্দা সময় দেখা দিল, তখনই কিশোর-কিশোরীদের হার্টথ্রব হয়ে এল সালমান শাহ। আশির দশকের পর চলচ্চিত্রে যে শূন্যতা ছিল, ওইটা সে পূরণ করেছে। নকল সিনেমার দাপট, মারদাঙ্গা চলচ্চিত্র—এসবের বৃত্ত ভেঙে রোমান্টিক তারকা হয়ে এল সালমান। তার অভিনয়, কথা বলার স্টাইল অন্যদের চেয়ে একেবারে আলাদা। তার মধ্যে ক্যারিশমাটিক একটা ব্যাপারও ছিল, যা তরুণেরা দারুণভাবে গ্রহণ করেছিল। আমি এমনও মাকে দেখেছি, যাঁরা মনে করতেন সালমান তো আমারই সন্তান। প্রেমিকারা ভাবত, এ–ই তো আমাদের আকাঙ্ক্ষিত পুরুষ। তরুণেরা মনে করত, এ তো আমাদেরই প্রতিরূপ। তার কোনো সিনেমা ফ্লপও ছিল না। রিমেক হলেও কেয়ামত থেকে কেয়ামত দর্শকের জন্য নতুন কিছু নিয়ে এল। প্রেম-ভালোবাসা, পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে প্রেমের জয়, এসবই মানুষের মনে দাগ কেটেছে। পৃথিবী তো প্রেমময়। সেই প্রেমের পৃথিবীতে চলচ্চিত্রটি তরুণ–তরুণীদের মনে রেখাপাত করেছিল।’

যারা জরিপে অংশ নিয়েছেন

পরিচালক

গাজী মাজহারুল আনোয়ার: কেয়ামত থেকে কেয়ামত, তুমি আমার

দেলোয়ার জাহান ঝন্টু: অন্তরে অন্তরে, সুজন সখি, দেনমোহর, স্বপ্নের ঠিকানা, কন্যাদান

ছটকু আহমেদ: তুমি আমার, স্বপ্নের ঠিকানা, আনন্দ অশ্রু, সত্যের মৃত্যু নেই, অন্তরে অন্তরে

তমিজ উদ্দিন রিজভী: কেয়ামত থেকে কেয়ামত, তুমি আমার, সুজন সখি, আশা ভালোবাসা, সত্যের মৃত্যু নেই

শাহ আলম কিরণ: কেয়ামত থেকে কেয়ামত, মায়ের অধিকার, আশা ভালোবাসা, আঞ্জুমান, স্বপ্নের ঠিকানা

মতিন রহমান: আনন্দ অশ্রু, সত্যের মৃত্যু নেই, স্বপ্নের ঠিকানা, অন্তরে অন্তরে, স্বপ্নের পৃথিবী

মালেক আফসারী: কেয়ামত থেকে কেয়ামত, অন্তরে অন্তরে, মায়ের অধিকার, সুজন সখি, বিক্ষোভ

জাকির হোসেন রাজু: তুমি আমার, জীবন সংসার, কেয়ামত থেকে কেয়ামত, স্বপ্নের ঠিকানা, সত্যের মৃত্যুর নেই

সোহানুর রহমান সোহান: মায়ের অধিকার, আনন্দ অশ্রু, তোমাকে চাই, সত্যের মৃত্যু নেই, কেয়ামত থেকে কেয়ামত

নায়ক

বাপ্পারাজ: কেয়ামত থেকে কেয়ামত, তুমি আমার, দেনমোহর, স্বপ্নের ঠিকানা, আনন্দ অশ্রু

নাঈম: অন্তরে অন্তরে, স্নেহ, আঞ্জুমান, তোমাকে চাই, স্বপ্নের পৃথিবী

ওমর সানি: কেয়ামত থেকে কেয়ামত, দেনমোহর, স্বপ্নের ঠিকানা, অন্তরে অন্তরে, সুজন সখি

অমিত হাসান: সুজন সখি, স্বপ্নের ঠিকানা, কেয়ামত থেকে কেয়ামত, অন্তরে অন্তরে, বিক্ষোভ

আমিন খান: কেয়ামত থেকে কেয়ামত, স্বপ্নের পৃথিবী, অন্তরে অন্তরে, স্বপ্নের ঠিকানা, তোমাকে চাই

ফেরদৌস: তোমাকে চাই, কেয়ামত থেকে কেয়ামত, সত্যের মৃত্যু নেই, স্বপ্নের পৃথিবী, বুকের ভেতর আগুন

রিয়াজ: কেয়ামত থেকে কেয়ামত, জীবন সংসার, আনন্দ অশ্রু, সত্যের মৃত্যু নেই, তোমাকে চাই

শাকিব খান: কেয়ামত থেকে কেয়ামত, স্বপ্নের ঠিকানা, জীবন সংসার, মায়ের অধিকার, আনন্দ অশ্রু

নিরব: জীবন সংসার, মায়ের অধিকার, তোমাকে চাই, চাওয়া থেকে পাওয়া, সুজন সখি

সিয়াম: আনন্দ অশ্রু, কেয়ামত থেকে কেয়ামত, বিক্ষোভ, স্বপ্নের ঠিকানা, মায়ের অধিকার, সত্যের মৃত্যু নেই

রোশান: এই ঘর এই সংসার, কেয়ামত থেকে কেয়ামত, অন্তরে অন্তরে, স্বপ্নের ঠিকানা, সত্যের মৃত্যু নেই

নায়িকা

শাবনাজ: কেয়ামত থেকে কেয়ামত, মায়ের অধিকার, আশা ভালোবাসা, আঞ্জুমান, স্বপ্নের ঠিকানা

মৌসুমী: কেয়ামত থেকে কেয়ামত, অন্তরে অন্তরে, স্নেহ, দেনমোহর, আনন্দ অশ্রু

শাবনূর: তোমাকে চাই, তুমি আমার, স্বপ্নের ঠিকানা, সুজন সখি, মহামিলন

শিল্পী: সত্যের মৃত্যু নেই, স্বপ্নের ঠিকানা, বিক্ষোভ, তোমাকে চাই, আনন্দ অশ্রু

শিমলা: কেয়ামত থেকে কেয়ামত, অন্তরে অন্তরে, সত্যের মৃত্যু নেই, স্নেহ, বিক্ষোভ

নিপুণ: স্বপ্নের ঠিকানা, আনন্দ অশ্রু, অন্তরে অন্তরে, স্বপ্নের পৃথিবী, তুমি আমার

বুবলী: সুজন সখি, বিক্ষোভ, স্বপ্নের পৃথিবী, তোমাকে চাই, বিচার হবে

পূজা চেরি: আনন্দ অশ্রু, স্বপ্নের ঠিকানা, কেয়ামত থেকে কেয়ামত, জীবন সংসার, অন্তরে অন্তরে

ফলাফল

কেয়ামত থেকে কেয়ামত ২০

স্বপ্নের ঠিকানা ১৮

অন্তরে অন্তরে ১৪

সত্যের মৃত্যু নেই ১২

আনন্দ অশ্রু ১১

তোমাকে চাই ৯

সুজন সখি ৮

তুমি আমার ৭

মায়ের অধিকার ৭

বিক্ষোভ ৬

স্বপ্নের পৃথিবী ৫

দেনমোহর ৪

আশা ভালোবাসা ৩

জীবন সংসার ৩

আঞ্জুমান ৩

স্নেহ ৩

জীবন সংসার ২

কন্যাদান ১

বুকের ভেতর আগুন ১

চাওয়া থেকে পাওয়া ১

এই ঘর এই সংসার ১

মহামিলন ১

বিচার হবে ১