নিজেদের বিবাদ নিয়ে যা বললেন তমা ও তাঁর স্বামী

স্বামী হিশাম চিশতির সঙ্গে তমা মির্জা
ফেসবুক থেকে

পাল্টাপাল্টি মামলার পর স্বামী হিশাম চিশতীর সঙ্গে ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নায়িকা তমা মির্জা। আজ শনিবার তমা তাঁর আইনজীবীকে এ–সংক্রান্ত কাগজপত্র তৈরি করতে বলেছেন। অন্যদিকে হিশাম চিশতী জানিয়েছেন, তিনি আগেই বিচ্ছেদ চেয়েছিলেন, তার জের ধরেই হামলার শিকার হতে হয়েছে তাঁকে। হিশাম চান, তাঁর এ ঘটনা থেকে লোকে শিক্ষা নিক।

গতকাল শুক্রবারের খবর অনুযায়ী, যৌতুক দাবি, নির্যাতন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে স্বামী হিশাম চিশতীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে মামলা করেছেন তমা মির্জা। অন্যদিকে মারধর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে স্ত্রী তমার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন হিশাম চিশতী। দুটি মামলাই হয়েছে রাজধানীর বাড্ডা থানায়। তমা আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনেক ঘটনা ঘটেছে। এত কিছুর পর আর একসঙ্গে এক ছাদের নিচে থাকার কোনো মানে হয় না। তাই আমি আমার আইনজীবীকে সবকিছু জানিয়েছি। তিনি ডিভোর্সের কাগজপত্র রেডি করবেন।’

আরও পড়ুন
দুবাইতে মধুচন্দ্রিমায় হিশাম চিশতির সঙ্গে তমা মির্জা
ছবি : ফেসবুক থেকে

হিশাম প্রথম আলোকে জানান, ২০১৮ সালে তমার সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। ২০১৯ সালের মে মাসে তাঁরা বিয়ে করেন। কিন্তু বিয়ের পর তিনি জানতে পারেন, তমার আগেও দুবার বিয়ে হয়েছিল, যা তাঁরা গোপন করেছেন। এ ছাড়া তমার পরিবারকে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতাও করে আসছিলেন হিশাম।

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডীয় ব্যবসায়ী হিশাম সেখানকার রাজনীতিতে যুক্ত। করোনাকালে অসুস্থ মাকে দেখতে কানাডা থেকে দেশে এসেছিলেন তিনি। এরই মধ্যে স্ত্রী তমাকে নিয়ে দুবাইতে হানিমুনেও যান। হানিমুন থেকে ফেরার পর নানা বিষয় নিয়ে তাঁদের মধ্যে তীব্র বিবাদ শুরু হয়। হিশাম জানান, তমার আগের দুই বিয়ের খবর জেনে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন তিনি। তবু সংসার টিকিয়ে রাখতে সবকিছু মেনে নিয়েছিলেন।

বিবাদের নেপথ্যের কারণ জানতে চাইলে হিশাম চিশতী বলেন, ‘তমার মা অর্থনৈতিকভাবে আমার ওপর নির্ভরশীল থাকতে চাননি। তাঁদের একটি স্বর্ণের দোকানের শেয়ার ছিল। আমার কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা ধার নিয়ে তাঁরা সেখানে বিনিয়োগ করতে চেয়েছিলেন। সেখান থেকে আয় করে তাঁরা সংসার চালাবেন বলে জানিয়েছিলেন।’ শুরুতে আপত্তি করলেও তমার চাপে তাঁর পরিবারকে ওই টাকা দিতে তিনি বাধ্য হন। হিশাম বলেন, সেই টাকা দেওয়ার পরও তাঁদের চাহিদা কমেনি। প্রতি মাসে সংসার খরচ বাবদ তাঁরা মোটা অঙ্কের টাকা নিতে থাকেন। এর বাইরে তমার ভাইয়ের খরচ, বাবা–মায়ের চিকিৎসা, বাসার পোষা কুকুরের খাবার খরচসহ নানা খাতে, নানা অজুহাতে তাঁরা টাকা চাইতেই থাকেন।

আরও পড়ুন
হিশাম চিশতির সঙ্গে দুবাইতে তমা মির্জা
ছবি : ফেসবুক থেকে

হিশাম জানান, এসব ঘটনা চলতে থাকলে গত আগস্ট মাসে কানাডা থেকে বাংলাদেশে আসেন তিনি। হিশামের দাবি, বাংলাদেশে আসার পর বাসা ভাড়া নেওয়ার কথা বলে তাঁর কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা নেন তমা। স্ত্রী হিসেবে তিনি শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে থাকতে রাজি হচ্ছিলেন না। এসব নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে শুরু হয় তীব্র টানাপোড়েন। একপর্যায়ে তাঁদের টাকার চাহিদাও বাড়তে থাকে। এ সময় হিশাম ধরে নেন, তাঁর ধার দেওয়া ২০ লাখ টাকা ব্যবসায় খাটানো হয়নি, বরং বিলাসিতায় উড়ানো হয়েছে। তিনি তমার কাছে সেই টাকার হিসাব চান এবং তমার পরিবারকে জানান, আর নয়। তমাকে তিনি কানাডা নিয়ে যাবেন এবং সংসার খরচের জন্য মাসে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকার বাইরে কিছুই দেবেন না। এতেই তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে শ্বশুরবাড়ির সবাই মিলে তাঁকে মারধর করেন বলে জানান হিশাম চিশতী।

হিশামের এসব বক্তব্যকে মিথ্যা ও বানোয়াট বলে উড়িয়ে দেন তমা মির্জা। বরং বিয়ের পর থেকেই তাঁকে মানসিক অত্যাচার করতে থাকেন। তিনি বলেন, ‘আমার টাকার প্রতি তার লোভ। আমার আয়ের টাকা কেন আমি আমার পরিবারকে দিই, এটা নিয়ে নানা কথা শুনতে হতো আমাকে। শুধু কি তা–ই, আমাকে কাজ করতেও বাধা দেয় সে। আমার কাছ থেকে টাকা নিতে ক্রমাগত চাপ প্রয়োগ করে। তার কাছ থেকে আমার পরিবার টাকা ধার নেবে কেন! কানাডা থেকে দেশে এলে সে তো আমার টাকায় চলে। আমি টাকা না দিতে চাইলে টর্চার করে। তার টর্চারের কারণেই একটা সময় শ্বশুরবাড়ি থেকে আমি বাবার বাসায় চলে আসি। এরপর ৪ ডিসেম্বর রাত তিনটায় সে আমার বাবার বাসায় এসে সিনক্রিয়েট করে। বিষয়টি নিয়ে বাড্ডা থানায় অভিযোগও করি। আমার অভিযোগের পরদিন সে–ও মামলা করে।’

আরও পড়ুন
তমা মির্জা। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

৪ ডিসেম্বরের ঘটনার বর্ণনা করে হিশাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সেদিন তমা আমাকে ফোন করে কান্নাকাটি করে বলে, তার বাবার বাড়িতে গিয়ে সবকিছু মীমাংসা করতে। সেই রাতে তাদের বাসায় গিয়ে দেখি, তার মা–বাবা, ভাই এবং ড্রাইভার ড্রয়িংরুমে বসে আছে। তমার মা আমাকে বলেন, তমা তাঁদের সংসার চালায়। তাকে কানাডা নিতে হলে এখনই ২০ লাখ টাকা দিতে হবে এবং প্রতি মাসে ৪ লাখ টাকা করে পাঠাতে হবে। আমিও সরাসরি জানিয়ে দিই, এই টাকা দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। এ–ও বলি, তাঁরা যদি তমাকে আমার সঙ্গে যেতে না দেন, তাহলে আমি ডিভোর্স চাই। তখন আমার শ্বশুর ও শাশুড়ি আমাকে গালিগালাজ শুরু করেন। প্রতিবাদ করলে তার মা হঠাৎ একটি কাচের ভারী ফুলদানি দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করেন। এরপর তমা, তার ভাই এবং ড্রাইভার আমাকে ঘরের বাইরে নিয়ে আসে এবং লোহার চেয়ার দিয়ে আঘাত করে। আমার চিৎকারে আশপাশের বাড়ির লোকজন বের হয়ে এলে আমাকে বাইরে ফেলে রেখেই তারা ঘরে চলে যায়। আমার গাড়িচালক ও এলাকার লোকজন আমাকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করেন। চব্বিশ ঘণ্টা হাসপাতালে থাকার পর আমি অ্যাম্বুলেন্স নিয়েই থানায় গিয়েছিলাম অভিযোগ করতে, কিন্তু তারা আমার অভিযোগ নেয়নি। তারা মামলা নেয় পরদিন।’ হিশামের দাবি, তমা তাঁকে বিয়ে করেছিলেন টাকা আর কানাডার নাগরিকত্বের জন্য।

ইদানীং উপস্থাপনায় দেখা গেলেও অভিনয়শিল্পী হিসেবেই পরিচিত তমা মির্জা। ‘‌নদীজন’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে পার্শ্ব চরিত্রে সেরা অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি। তমাকে দেখা গেছে ‘বলো না তুমি আমার’, ‘ও আমার দেশের মাটি’, ‘অহংকার’সহ আরও কয়েকটি ছবিতে।