সম্মাননা নিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন সোহেল রানা

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সোহেল রানা। ছবি : সংগৃহীত

অভিমান নিয়েই আজীবন সম্মাননা গ্রহণ করলেন চলচ্চিত্র অভিনেতা সোহেল রানা। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার–২০১৯ প্রদান অনুষ্ঠানে সম্মাননাপ্রাপ্তির অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বারবার তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। স্মরণ করেন নিজের সাফল্যের পেছনের মানুষদের ঋণের কথা। আহ্বান জানান, চলচ্চিত্রশিল্পী ও কলাকুশলীদের যেন অনাহারে মরতে না হয়।

সোহেল রানার আশা ছিল, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে আজীবন সম্মাননা নেবেন। করোনার কারণে তাঁর এ ইচ্ছা অপূর্ণ রয়ে গেল। করোনা সতর্কতায় সশরীর না এসে ভার্চ্যুয়ালি পুরস্কারের এ অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধান অতিথি শেখ হাসিনা। আবেগঘন বক্তব্যে সোহেল রানা জানান, চলচ্চিত্রে ৪৬ বছরের ক্যারিয়ারে প্রথমবার তিনি পুরস্কার নিয়েছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে। ইচ্ছা ছিল এই পুরস্কারও তাঁর হাত থেকে নেওয়ার। তিনি বলেন, ‘৪৬ বছর চলচ্চিত্রে কাজ করেছি। এই সময়ে যা কিছু পাওয়া ছিল, সেটার আজ ইতি হলো। হয়তো আর কোনো পুরস্কার আমি পাব না।’

এ বছর আজীবন সম্মাননার জন্য মনোনীত হওয়া মাসুদ রানাকে যেমন আনন্দিত করেছে, তেমনি কাঁদিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমার একটা দুঃখবোধ তৈরি হয়েছে। আজ আমার আনন্দ হওয়ার কথা, কিন্তু খারাপ লাগছে। বোধ হয় আমার শেষ পাওনাটা আজ পেলাম, সে জন্য। হয়তো আমার আর দেওয়ার কিছু নেই, সেটা ভেবে।’

চলচ্চিত্র অভিনেতা সোহেল রানা ও তার স্ত্রী জিনাত পারভেজ। ছবি : সংগৃহীত

দীর্ঘ ক্যারিয়ারে পরিবারকে সময় দিতে পারেননি মাসুদ রানা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ব্যস্ত থেকেছেন অভিনয় নিয়ে। স্ত্রী জিনাত পারভেজ ও সন্তানকে ঠিকমতো সময় দিতে পারেননি। কান্নাজড়ানো কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘স্ত্রীর প্রতি যে হক ছিল, সেটা আমি পালন করতে পারিনি। আজ যে সম্মান আমি পেয়েছি, এর পেছনে আমার স্ত্রীর অবদান অনেক। তার সহযোগিতা ছাড়া আজকের অবস্থানে আমি আসতে পারতাম না।’ একমাত্র ছেলে মাশরুর পারভেজ প্রসঙ্গে তিনি জানান, শুটিং ইউনিটে কেউ জিজ্ঞেস করলে বলতে পারতেন না, ছেলে কত বড় হয়েছে। বাসায় ফিরে দেখতেন ছেলে ঘুমাচ্ছে, বাসা থেকে বের হওয়ার সময়ও দেখতেন, ছেলে ঘুমাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘বেশির ভাগ সময় ঘুমন্ত ছেলেকেই আদর করেছি। যতটুকু সময় দিয়েছি, তাতেই আমার পরিবার খুশি হয়েছে।’

অভিনেতা সোহেল রানা। ছবি : সংগৃহীত

১৯৬১ সালে কলেজে পড়তেন সোহেল রানা। তখন থেকেই তিনি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। মুক্তিযুদ্ধের সময় ঝাঁপিয়ে পড়েন পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে। প্রযোজক হিসেবে সোহেল রানা ওরফে মাসুদ পারভেজ নির্মাণ করেন মুক্তিযুদ্ধের প্রথম ছবি ‘ওরা ১১ জন’। সোহেল রানা জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছবিটি দেখে তাঁকে বলেছিলেন, ‘ভালোই তো বানাইছস, এ লাইনেই থেকে যা।’ তারপর থেকে তিনি সিনেমার সঙ্গে রয়ে গেলেন। আজকের এই সম্মাননা তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে উৎসর্গ করেন।

সোহেল রানা
প্রথম আলো

বক্তব্যে সোহেল রানা শিল্পী-কলাকুশলীদের জন্য রেশন ব্যবস্থার দাবি জানান, যাতে কোনো অভিনয়শিল্পীকে অনাহারে মরতে না হয়। তা ছাড়া যাঁরা আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন, তাঁদের জন্য ভিআইপির মর্যাদা; প্রতিবছর যাঁরা পুরস্কার পাচ্ছেন, তাঁদের জন্য সিআইপির মর্যাদা দাবি করেন তিনি। শিল্পী হিসেবে তাঁরা যখন বিপদে পড়েছেন, তখন সব রকম সুযোগ-সুবিধা পান। কিন্তু সাধারণ শিল্পী, কলাকুশলীরা কখনোই ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের কারও সঙ্গে দেখা করতে পারেন না। সেই সুযোগও তিনি চেয়েছেন। প্রযোজক, পরিচালক, লাইটম্যান, মেকআপম্যানসহ সব কলাকুশলীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন সোহেল রানা। ধন্যবাদ জানিয়েছেন তথ্য মন্ত্রণালয়, জুড়িবোর্ডের সদস্য, সেন্সর বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের।

মহামারির কারণে সীমিত পরিসরে আয়োজন করা হয়েছে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অনুষ্ঠান। আজ রোববার সকাল ১০টায় ঢাকার আগারগাঁওয়ের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ছিল এ আয়োজন। মোট ২৬টি শাখায় শিল্পী, কলাকুশলী, প্রতিষ্ঠান ও চলচ্চিত্রকে পুরস্কার দেওয়া হয়। যৌথভাবে আজীবন সম্মাননা পান অভিনয়শিল্পী সোহেল রানা ও সুচন্দা। সুচন্দার পুরস্কারটি গ্রহণ করেন তাঁর মেয়ে লিসা মালিক। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদ, তথ্য প্রতিমন্ত্রী মো. মুরাদ হাসান প্রমুখ।

ছেলে মাশরুর পারভেজ ও বাবা সোহেল রানা
ছবি : সংগৃহীত