তাঁকে তো চেনা বড় কঠিন

সাদি মহম্মদ
ছবি: খালেদ সরকার
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১তম জন্মবার্ষিকী আজ। এ উপলক্ষে আজ রোববার সন্ধ্যায় সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে গান শোনাবেন রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী সাদি মহম্মদ। তিনি কথা বললেন নিজের রবীন্দ্রচর্চা ও কবিগুরুর জন্মদিন উদ্‌যাপনের স্মৃতি নিয়ে।

প্রশ্ন :

কবিগুরুর জন্মদিন উপলক্ষে কোথায় কোথায় গাইবেন?

সকালে চ্যানেল আইতে আর রাত সাড়ে ১০টায় বিটিভিতে ধারণকৃত অনুষ্ঠানে আমার গান শোনা যাবে। সন্ধ্যায় শাহজাদপুর রবীন্দ্রনাথের কাছারিবাড়িতে গানের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে সরাসরি গাইব।

প্রশ্ন :

যখন শান্তিনিকেতনে ছিলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন উদ্‌যাপনের স্মৃতি মনে পড়ে?

তাঁর জন্মদিনে তেমন উৎসব হতো না সেখানে। কারণ, ওটা ছিল রাঢ় অঞ্চল, রুক্ষ মাটির, পানি থাকত না। পানির স্তর নিচে নেমে যেত। রবীন্দ্রনাথ তখন আশ্রমের সবাইকে ছুটি দিয়ে দিতেন। ভীষণ গরম পড়ত। আমরা যখন শান্তিনিকেতনে পড়াশোনা করতাম, দেখতাম পয়লা বৈশাখ উদ্‌যাপনের পর আমাদেরও ছুটি হয়ে যেত। কিন্তু আমি থেকে যেতাম। আমি বাড়িতে আসতাম কেবল পূজার ছুটিতে। আমরা যারা আশ্রমে থেকে যেতাম, ২৫ বৈশাখে কাচের মন্দিরে বসে একের পর এক রবীন্দ্রনাথের গান গেয়ে যেতাম।

সাদি মহম্মদ

প্রশ্ন :

কাচের মন্দিরটা...

তিনি তো ব্রাহ্মধর্মের ছিলেন, যে ধর্মের মূলনীতি, ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয়। ওই মন্দিরের গায়ে লেখা আছে—একমেবাদ্বিতীয়ম। মন্দিরটা রঙিন কাচে তৈরি, প্রচীন আর্কিটেকচার। সেখানে যারা যেত, কারও গায়ে এসে পড়ত লাল আলো, কারও গায়ে সবুজ। ভোরে আমরা সেখানে যেতাম। যখন সূর্য উঠত, সবার গায়ে আলোর ছটা এসে পড়ত, যেন রবীন্দ্রনাথের আলো এসে পড়ছে আমাদের গায়ে।

প্রশ্ন :

তাহলে ২৫ বৈশাখ কবিগুরুর জন্মদিন উদ্‌যাপন করা হতো না!

কবিগুরু ইনডিরেক্টলি বলেছিলেন, পয়লা বৈশাখটাই ভালো করে উদ্‌যাপন করো। বাংলা নতুন বছরটাকেই সুন্দর করে বরণ করে নাও। মনে করো ওটাই আমার জন্মদিন। জন্মদিন উদ্‌যাপনের ব্যাপারে ওনার অ্যালার্জি ছিল। তাঁর জন্মদিনের উৎসব মূলত হতো পয়লা বৈশাখে।

প্রশ্ন :

করোনাকালে ছাত্রছাত্রীদের অনলাইনে রবীন্দ্রসংগীত শেখাতেন। তারা কি মুখোমুখি ফিরেছে?

ওরা এখন ঘরে আসে। আমরা চা–বিস্কুট–কফি খাই আর মুক্ত বাতাসে গান গাই। কেউ মাস্ক পরি না আমরা। প্রার্থনা করি, আর যেন মাস্ক পরতে না হয়, যেন মুক্ত বাতাসে গান গাইতে পারি। ওরা অনলাইন ক্লাস পছন্দ করত, কিন্তু আমার জানটা বেরিয়ে গেছে। খুব কষ্ট হয়েছে। এখন বাসায় আসে, কথা বলি, শিখিয়ে দিই। আমার ছাত্রছাত্রীরা খুবই ডেডিকেটেড। তাদের ভক্তি আছে, শেখার ইচ্ছে আছে।

সাদি মহম্মদ

প্রশ্ন :

দীর্ঘদিন রবীন্দ্রসংগীত চর্চার পর আপনার আজকের উপলব্ধি কী?

তাঁকে তো চেনা বড় কঠিন। তবে তাঁর জীবনকে নিজের সঙ্গে মিলিয়ে দেখি মাঝেমধ্যে। কখনো মিলেও যায়। আমার আজ কেবল এটাই মনে হয়, ছেলেমেয়েরা যে গান শিখতে আসে, কখনো ফাঁকি দিই না। আমার গুরুরা আমাকে যেভাবে গান শিখিয়েছেন, খুব মন দিয়ে, সেভাবেই যাতে আমার ছাত্রছাত্রীরা গান শিখতে পারে, সেই চেষ্টা করি। এইটুকু সততা নিয়ে আমি রবীন্দ্রনাথের গান করি, শেখাই এবং কিছু কথা বলি, যেমন তোমায় বললাম।

প্রশ্ন :

বিশ্বভারতীর মতো বৈশ্বিক একটি রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের কবে হবে?

সবে তো শুরু হলো। এখনো জলের নিচে। জল সরাতে হবে, তারপর সেখানে বিল্ডিং উঠবে। নামমাত্র একটা বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে। হয়তো আমরা দেখে যেতে পারব না। আমার তো এখনই শখ হয়, পানির ভেতরে গিয়েই পড়াই।