যে কদিন বাঁচি, যেন আরও গান লিখতে পারি
নব্বই দশক থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত এক টানা চলচ্চিত্রে গান লিখেছেন মনিরুজ্জামান মনির। চলচ্চিত্রে তাঁর লেখা সর্বশেষ জনপ্রিয় গান ‘এক বিন্দু ভালোবাসা দাও, আমি এক সিন্ধু হৃদয় দিব’। চলচ্চিত্রে তাঁর লেখা জনপ্রিয় গানের তালিকায় উল্লেখযোগ্য ‘বুকে আছে মন, মনে আছে আশা’, ‘কি যাদু করিলা পিরিতি শিখাইলা’, ‘তুমি যেখানে আমি সেখানে’, ‘আমি একদিন তোমায় না দেখিলে, কি দিয়া মন কাড়িলা’, ‘তোমাকে চাই আমি আরো কাছে’, ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’, ‘ও আমার বন্ধু গো চির সাথী পথচলার’, ‘আমি চিরকাল প্রেমেরও কাঙাল’। এ ছাড়াও অডিওতে তাঁর লেখা জনপ্রিয় গানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ‘যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়’, ‘নাই টেলিফোন নাইরে পিয়ন’, ‘সূর্যোদয়ে তুমি সুর্যাস্তেও তুমি’। অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গানের এই গীতিকবির আজ জন্মদিন। কথা হলো তাঁর সঙ্গে
প্রশ্ন :
শুভ জন্মদিন।
ধন্যবাদ। বুড়ো হয়ে গেলাম। এ বছর ৭০-এ পড়লাম।
প্রশ্ন :
জন্মদিন এলে কেমন লাগে?
কিছুটা খারাপ লাগে আরকি। জীবনে তো অনেক কাজ করার ইচ্ছা। আল্লাহ যদি ভালো রাখেন, সুস্থ রাখেন তাহলে করব। তবে এ–ও ঠিক, জীবনে অনেক গান লেখার সৌভাগ্য হয়েছে, যা অনেকেরই হয় না। আমি ভাগ্যবান, কারণ আমার ভান্ডারে শতাধিক জনপ্রিয় গান আছে। মানুষ আমাকে ভালোবাসে। মানুষ একজীবনে তপস্যা করেও এত ভালোবাসা পায় না, যা আমি গান লিখে পেয়েছি। এগুলোই আমার সম্পদ। আরও যে কদিন বাঁচি, যেন আরও গান লিখতে পারি।
প্রশ্ন :
একটা সময় নিয়মিত লিখতেন। এখন লেখেন না কেন?
এখন সমস্যা হচ্ছে, চলচ্চিত্রের সংখ্যাই কমে গেছে। আমি তো মেইনলি চলচ্চিত্রের গানই লিখতাম। জীবনে যা লিখেছি, ৯০ ভাগ জনপ্রিয় হয়েছে চলচ্চিত্রে। এখন চলচ্চিত্রে কারা যে গান লেখে, তা আমি জানি না। আমাকে দিয়ে কেন লেখায় না, এই প্রশ্নের জবাব পাই না। আবার যারা গান লেখে, তাদের গান হিট হয় কি না এসবও শুনি না। এ রকম একটা জটিলতার মধ্যে আছি।
প্রশ্ন :
এখন তো গান হিট হচ্ছে, অনেকে লিখছেও। এখনকার চলচ্চিত্রের গান শোনা হয় না আপনার?
অবশ্যই, খোঁজখবর রাখি। তবে আগের মতো হিট হচ্ছে না। হিট গান লেখার কিন্তু অনেক সুযোগ আছে। তবে বেশিসংখ্যক চলচ্চিত্র যদি হতো, তাহলে প্রচুর জনপ্রিয় গান বের হতো। আমরাও লিখতে পারতাম। এখন যে কারা চলচ্চিত্রের গান লিখছে, সেটা আমার প্রশ্ন।
প্রশ্ন :
এ প্রশ্ন কত দিন ধরে...
২০০৭–এর পর থেকে। আমি ১৯৯০ থেকে শুরু করে ২০০৭ পর্যন্ত নিয়মিত লিখেছি। এরপর লেখা কমিয়ে দিই। সর্বশেষ সুপারহিট গান ‘এক বিন্দু ভালোবাসা দাও/আমি এক সিন্ধু হৃদয় দেব’। এরপরও কিছু গান লিখেছি, তবে সুপারহিট হয়নি।
প্রশ্ন :
সুপারহিট গান লেখার ক্যারিশমা কী?
ক্যারিশমা কী করে বলি (হাসি)। আমারটা আমি বলি যে আল্লাহ আমাকে মায়া করে হিট গান লেখার সুযোগ দিয়েছেন। তবে এটা আসলে বলাও যায় না।
প্রশ্ন :
চলচ্চিত্রের গান হিট হওয়ার ক্ষেত্রে কোন তারকা পর্দায় ঠোঁট মেলাচ্ছেন এটাও কি একটা বিষয়?
এটাও গুরুত্বপুর্ণ। তবে গানও তো ভালো হতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ বলেছি এই জন্য, আগেকার দিনে কোনো গানে শাবানা, আলমগীর, রাজ্জাক, কবরী বা ববিতারা ঠোঁট মেলালে আবেদনটা অন্যরকম হতো। দ্বিতীয় বা তৃতীয় সারির নায়ক–নায়িকা যদি ঠোঁট মেলাত তবে সেই গান জনপ্রিয় হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। তবে ভালো মানের গান হলে তা জনপ্রিয় না হলেও দর্শকহৃদয়ে জায়গা করে নিতে পারত। এটা ঠিক, জনপ্রিয় নায়ক–নায়িকারা মাঝারি মানের গানে ঠোঁট মেলালেও সেই গান দ্রুত জনপ্রিয়তা পায়। ভালো মানের গান হলে তো কথাই নেই।
প্রশ্ন :
আপনার কাছে জীবন মানে?
আমি আমার লেখা গানের মতো করে বলতে চাই, ‘জীবন মানে যন্ত্রণা, নয় ফুলের বিছানা।’