আমি ভারতে যেতে পারিনি, আমার গান গেছে: জয়

ক্যারিয়ারের প্রথম ও একমাত্র গান ‘কবিতার গান’ দিয়ে আলোচনায় এসেছেন তরুণ সংগীতশিল্পী, গীতিকার ও সুরকার হাসান জয়। ‘যদি বারে বারে একই সুরে প্রেম তোমাকে কাঁদায়’—এমন কথার গানটি ইউটিউব, ফেসবুক, টিকটকে ছড়িয়ে পড়েছে। ঢাকা ছাড়িয়ে গানটি ভারতের শ্রোতাদের মধ্যেও সাড়া ফেলেছে। আলোচিত গানটি নিয়ে গত সোমবার তাঁর সঙ্গে বলেছেন মকফুল হোসেন  

প্রথম আলো:

কবে, কোন প্রেক্ষাপটে ‘কবিতার গান’ লিখলেন?  

আমি পেশাদারভাবে গান শিখিনি। কোনটিকে লিরিক, কোনটিকে টিউন বলে—এগুলো না জেনে মূলত গানের অনুরাগী হিসেবে গানটি লিখেছি। গানে কঠিন কিছু বলা নেই, সহজ ভাষায় লিখেছি। নারী-পুরুষের প্রেমের বাইরে আমার বাবা-মায়ের প্রেম, বন্ধুর পরিমণ্ডলে প্রেম যেভাবে দেখেছি—তাই লিখেছি। প্রথমে ‘যদি মিথ্যে মনে হয় সব পুরোনো কথা/যদি চায়ের কাপেতে জমে নীরবতা/ তবে বুঝে নিয়ো চাঁদের আলো কত নিরুপায়’—এই লাইনগুলো লিখেছি। গানটা খুবই ব্যক্তিগত, তবে এমন না—নিজের বিরহে জর্জরিত হয়ে লিখেছি। আমার বন্ধু তাঁর বিড়াল মারা যাওয়ার শোকে কতটুকু কষ্ট পাচ্ছে, আমার ভাই প্রেমিকা হারানোর শোকে কতটা কষ্ট পাচ্ছে—সেটাও ভাবনায় ছিল।
২০১৭-১৮ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় গানটা গাইতাম। বন্ধুরা গানটা শুনে বলল, গানটা দারুণ। এর মাঝে গানটা অনেক শিল্পীকে দিয়েছিলাম, ওরা সুর তাল লয়ে গাইল, তবে কোথায় যেন একটু শূন্যতা ছিল। সবশেষে আমি নিজে গাওয়ার পর মনে হয়েছে, গানটা আমিই সবচেয়ে ভালো গাই। এই আত্মবিশ্বাস পাওয়ার পর ২০১৯ সালের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘হিম উৎসব’-এ প্রথমবার গানটা গাই। এর আগে কোনো শোতে গানটা গাওয়া হয়নি, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় গাইতাম।

প্রথম আলো:

গানটি রেকর্ড করলেন কবে?

২০২০ সালে গুপীবাঘা প্রোডাকশনস লিমিটেড থেকে আমিসহ পাঁচ স্বাধীন শিল্পীর গান নিয়ে ‘আগুন পাখির গান’ নামে একটি অ্যালবাম প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ‘কবিতার গান’ রেকর্ড করে ২০২১ সালের নভেম্বরে স্পটিফাই, আইটিউনসে প্রকাশিত হয়। ২০২২ সালে এপ্রিলে গুপীবাঘা প্রোডাকশনস লিমিটেডের ইউটিউব চ্যানেলে গানের লিরিক্যাল ভিডিও প্রকাশিত হয়। এত দিন বন্ধু, আশপাশের মানুষেরা গানটি শুনেছেন।

হাসান জয়
ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে
প্রথম আলো:

দুই বছর পর হঠাৎ শ্রোতাদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ল।

আমি মেনে নিয়েছি, শ্রোতারা গান শুনবেন। বাজারে অনেক কিছু শোনার আছে; সবকিছু আমি নিজেও শুনি না। মানুষই গানটিকে এত দূর নিয়ে গেছে, এটি বুস্ট করা হয়নি। গানটা প্রকাশ করে আমি ঘরে বসে ছিলাম, মানুষই গানটিকে ভালোবেসে এই জায়গায় নিয়ে এসেছে। স্পটিফাইয়ের হিসাবে দেখছিলাম, গত দুই মাসে গানটা সবচেয়ে বেশি কানাডা, মালয়েশিয়া থেকে শোনা হয়েছে। ওই সব এলাকায় আমার পরিচিত মানুষ কম থাকে। ভারতেও গানটি ছড়িয়েছে। সারেগামাপার চ্যাম্পিয়ন অঙ্কিতা আমার ক্রেডিট না দিয়েই লাইভ শোতে গানটি গাইছে। আমার এটা নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই, আমার গানটা বর্ডারের ওপারে গেছে। আমি ভারতে যেতে পারিনি, আমার গান গেছে। এগুলোকে অর্জন হিসেবেই দেখছি।

প্রথম আলো:

গান জনপ্রিয়তা হওয়ার পর প্রত্যাশার চাপ তৈরি হয়, এটাকে আপনি কীভাবে দেখেন?

অবশ্যই এটা একধরনের চাপ। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে চাপ অনুভব করি না। এক গানের বাইরে আর কোনো গান নেই—আমি ওই রকম শিল্পী হতে চাই না। আবার বাজারে হরদম গানও করে যেতে পারব না। তবে আমি বাকি জীবন গান করে যাব।
কার গান শুনে বেড়ে উঠেছেন, আপনার সংগীতচর্চায় কার প্রভাব রয়েছে?
ছোটবেলা থেকেই রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলসংগীত, শাস্ত্রীয় সংগীত শুনছি। জেমস, আইয়ুব বাচ্চু থেকে হালের প্রজন্মের ব্যান্ড শুনছি। নুসরাত ফাতেহ আলী খান, বব মার্লে, জ্যাজ-ব্লুজ শুনি; কবীর সুমন, অঞ্জন দত্ত শুনি। শেষ পর্যন্ত কার থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছি, সেটা বলা কঠিন। যাঁদের গান আমার ভালো লাগে, তাঁরাই আমার মধ্যে থাকেন।

হাসান জয়
ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে
প্রথম আলো:

পরের গান কবে আসবে?

নিজের কোনো ইউটিউব চ্যানেল নেই, সামনে চ্যানেল খুলব। যেহেতু এত মানুষ শুনছেন, আর লুকিয়ে থাকা উচিত হবে না। ২০২৪ সালের মধ্যে দু-তিনটি মৌলিক গান প্রকাশ করব। এমনও হতে পারে, পরের গানটি মানুষ খুবই অপছন্দ করল, তা–ও হাসিমুখে মেনে নেব। আমি সংগীতই করে যেতে চাই।

প্রথম আলো:

আপনার জন্ম, বেড়ে ওঠা কোথায়?


আমার জন্ম ও বেড়ে উঠা জামালপুরে। জামালপুর জিলা স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি। পরে মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে ভর্তি হই। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে এই বছর থেকে একটি বিজ্ঞাপনী এজেন্সিতে চাকরি করছি।

আরও পড়ুন